Advertisement
Advertisement

Breaking News

Rabindranath Tagore

সবাইকে জানিয়ে পরজায়াকে নিয়ে উধাও রথীন্দ্রনাথ

এই চিঠি যখন রথী লিখছেন প্রতিমাকে, ততদিনে রবীন্দ্রনাথ মারা গিয়েছেন।

Special Write up on Rabindranath Tagore and his son Rathindranath| Sangbad Pratidin
Published by: Akash Misra
  • Posted:May 10, 2023 2:10 pm
  • Updated:May 10, 2023 2:10 pm

আর সম্ভব নয় রথীন্দ্রনাথের পক্ষে প্রতিমার শৈত‌্য ও উদাসীনতা সহ‌্য করা। যে উত্তাপ ও আসঙ্গ পেলেন না স্ত্রী প্রতিমার কাছে, তা রথীন্দ্রনাথ পেলেন পরজায়া মীরার কাছে। তারপর? আজ ধারাবাহিকের শেষ পর্বে সেই কাহিনি। লিখছেন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্বামী রথীর এই প্রশ্নে কী উত্তর এসেছিল প্রতিমার কাছ থেকে জানা নেই। তবে কিছুদিনের মধ্য়েই মীরা এসেছেন রথীর জীবনে। প্রতিমাকে লিখলেন রথী, অসীম সাহস, বেপরোয়া সততা ও অকপটতায়। ‘বিশ্বাস কর বা না কর ছুটি নেবার ইচ্ছা অনেক দিন ধরেই হয়েছে। মীরার সঙ্গে পরিচয় হবার অনেক আগে থেকেই। আমি কেবল দিন গুণছিলুম কবে মুক্তি পাব। সংসার, সমাজ, কাজ, সবের উপর ভয়ানক বিতৃষ্ণা জন্মেছিল।’

Advertisement

[আরও পড়ুন: ছবিজুড়ে শুধু ইসলামোফোবিয়া! বিতর্ক উসকেও মাঝারি মানেরই ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’]

এই চিঠি যখন রথী লিখছেন প্রতিমাকে, ততদিনে রবীন্দ্রনাথ মারা গিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের পুত্র এবং পুত্রবধূ হওয়ার চাপ থেকে রথী এবং প্রতিমা দু’জনেই মুক্ত। তবু কেন রথীন্দ্রর এই ভয়ানক বিতৃষ্ণা সংসার, সমাজ, কাজ এই সবের উপর? এই প্রশ্নের উত্তরের জন‌্য রথীর চিঠিতেই ফিরে যাচ্ছি।

Advertisement

‘আমি এতদিন ছিলুম একটা মেশিন, বোতাম টিপলেই কাজ পাওয়া যায় লোকে মনে করত, আরও ভাল করে টিপলে টাকা বেরিয়ে আসে। আমাকে হিউম‌্যান বলে কেউ কখনও দেখেনি, আমার সঙ্গে স্বাভাবিক human relationship সেইজন‌্য কারও সঙ্গে ছিল না। আমি আর কলের মানুষ থাকতে চাই না। পারছি না।’ তাহলে কী করলেন দুঃসাহসী, বেপরোয়া রবীন্দ্রপুত্র রথীন্দ্র?
নীলাঞ্জন বন্দ্য়োপাধ্যায় তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ, ‘তোমার রথীর কাছ থেকে’র মুখবন্ধে জানাচ্ছেন, ‘ভারত স্বাধীন হবার পর, ১৯৫১য় বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ‌্যালয় হিসাবে ঘোষিত হলে রথীন্দ্রনাথ হলেন তাঁর প্রথম উপাচার্য। নানা বিতর্কে জড়িয়ে, ক্লান্ত, অবসন্ন, বিরক্ত রথীন্দ্রনাথ পদত‌্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন বিশ্বভারতীর আচার্য জহরলাল নেহরুকে। এইসব বিতর্কের অন‌্যতম ছিল আশ্রম-অধ‌্যাপক নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ‌্যায়ের স্ত্রী মীরার সঙ্গে তাঁর ব‌্যতিক্রমী ঘনিষ্ঠতা। রথীন্দ্রনাথের পদত‌্যাগপত্র গৃহীত হলে তিনি সম্ভবত ২২ আগস্ট ১৯৫৩-য় উপাচার্যের দায়িত্ব বিশ্বভারতীর কর্মসচিবকে বুঝিয়ে দিলেন ও তার কিছুদিন পর বরাবরের জন‌্য শান্তিনিকেতন ত‌্যাগ করে আমৃত্য স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেলেন দেহরাদুনে।’

রথী লুকিয়ে কিছু করেননি। যা করেছেন অকপটে এবং অপ্রত‌্যাশিত সততার সঙ্গে স্ত্রীকে জানিয়ে করেছেন। প্রতিমাকে লিখলেন, ‘আমার পক্ষে একলা থাকা এখন আর সম্ভব নয়। মীরাকে নিয়ে যাচ্ছি। তোমার ভাল না লাগলেও আমি আশা করছি, তুমি আপত্তি করবে না।… এতদিন আমাকে নির্বিবাদে সব লাঞ্ছনা সহ‌্য করতে হয়েছে। কারণ বিশ্বভারতীর সঙ্গে আমার যোগ ছিল। এখন আমি সম্পূর্ণ স্বাধীন, তাই আমার নিজের স্বাধীনতায় কেও হস্তক্ষেপ করলে আমি সহ‌্য করব না। আমি লুকিয়ে চুরিয়ে যাচ্ছি না, এখানে সবাইকে জানিয়েই যাচ্ছি, মীরা আমার সঙ্গে যাচ্ছে।’

রথীর জীবনে কোনওদিনই মীরাকে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি প্রতিমার পক্ষে। রথীর চলে যাওয়ার পরেই লিখলেন, প্রতিমা, ‘কী মতিভ্রম হল নিজের কাজকর্ম সব ছেড়ে ওই একটা অতি অর্ডিনারী টাইপের মেয়ের সঙ্গে চলে গেলেন, মানুষের কত পরিবর্তন হয় তাই ভাবি।’

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর মীরার সঙ্গে সুখী হতে পেরেছিলেন কি না সেটা এই প্রবন্ধের বিষয় নয়। এই প্রবন্ধের বিষয় একদিকে রথীন্দ্র, অন‌্যদিকে প্রতিমা। মাঝখানে গগনস্পর্শী রবীন্দ্র। তাঁকে পেরিয়ে রথীন্দ্র-প্রতিমা পরস্পরের কাছে পৌঁছতে পারেননি। স্ত্রীর কাছে বারবার পৌঁছতে চেয়েছেন রথী। কিন্তু প্রতিমা সর্বক্ষণ ব‌্যস্ত রবীন্দ্রসেবায়। রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ চিঠিটি প্রতিমাকেই লেখেন। নিজের হাতে লেখা লিখতে পারেননি। মুখে বলেছিলেন রানী চন্দকে। রানীর হাতে লেখা সেই চিঠির তলায় রবীন্দ্রনাথ কাঁপাকাঁপা অক্ষরে সই করেছিলেন ‘বাবামশায়’। রবীন্দ্রনাথের শেষ স্বাক্ষর। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরও প্রতিমার পক্ষে সম্ভব হল না স্বামী রথীর কাছে সম্পূর্ণভাবে পৌঁছনো। সেই ইঙ্গিত রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে লেখা প্রতিমার কবিতায় :
যিনি ছিলেন দুজনের মাঝে
ইন্দ্রধনুর সেতু…
আজ সেই সেতু ভেঙে দিয়ে চলে গেলেন…
তথ‌্যসূত্র
১) তোমার রথীর কাছ থেকে প্রতিমাদেবীকে লেখা রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠিপত্র
সম্পাদনা : নীলাঞ্জন বন্দ্য়োপাধ্যায়।
২) আপনি তুমি রইলে দূরে
সঙ্গ নিঃসঙ্গতা ও রথীন্দ্রনাথ
নীলাঞ্জন বন্দ্য়োপাধ্যায়
(সমাপ্ত)

[আরও পড়ুন: অন্ধকারেও কথার ‘আলো’, বিদ্যুৎহীন অবস্থাতেও নিজের ভাষণ চালিয়ে গেলেন রাষ্ট্রপতি!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ