বহু বিতর্কের পর অবশেষে মুক্তি পেল কঙ্গনা অভিনীত ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’। ছবি দেখার অভিজ্ঞতা লিখলেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ
ছবি– জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া
পরিচালক– প্রকাশ কোভেলামুদী
অভিনয়– কঙ্গনা রানাউত, রাজকুমার রাও, জিমি শেরগিল, অমৃতা পুরি, অময়রা দস্তুর
‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’ আপনাকে ‘যাজক’ বানাতে বাধ্য। কে দোষী আর কে নয়? আপাতদৃষ্টিতে আমাদের সমাজে যে কাউকেই ‘দোষী’ বানিয়ে ফেলার একটা প্রবণতা রয়েছে। যা আমরা সাদা চোখে দেখি, সেটাই আমাদের ভাবনায় বিচরণ করে। তবে এর নেপথ্যেও তো অন্য কোনও অন্ধকার কাহিনি থাকতে পারে! সেখানেই প্রশ্ন ছোঁড়ে একতা প্রযোজিত ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’ ছবিটি। সারা সিনেমাজুড়ে যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে একটা রহস্য। রহস্য আর দুই সন্দেহভাজন- ববি ওরফে কঙ্গনা রানাউত আর কেশব অর্থাৎ রাজকুমার রাও। ববি তাড়া করে বেড়াচ্ছে কেশবকে। কারণ, কেশব তাঁর কাছে একটা রহস্য। কখনও রাতের অন্ধকারে তো কখনও ঘুমের মধ্যে কেশবের রহস্যোদঘাটনে তৎপর হয়ে পড়ে ববি। ঘটনাচক্রে আবার কেশবকে একসময় তাড়া করে বেড়ায় ববির কর্মকাণ্ড। আর এই দুইয়ের সেই রহস্য পর্দাভেদ করে দু’ঘণ্টা ধরে তাড়া করে বেড়াবে আপনাকেও। আর আপনি পুরো সিনেমাজুড়ে তাড়া করে বেড়াবেন ববি আর কেশবকে। ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’ আদতে দুই মানসিক রোগগ্রস্থ মানুষের কাহিনি।
গল্পের নায়ক কঙ্গনা
এক অস্থির শৈশব। বাবা-মা’র তিক্ত সম্পর্ক, রোজকার অশান্তি থেকে মা’র খুন, এসবের সাক্ষী থেকেছে একটা কাঁচা মন। শৈশবের এসব কালো স্মৃতি নিয়েই বড় হয়েছে ববি ওরফে কঙ্গনা। পদে পদে যার শৈশব তাকে তাড়া করে বেড়ায়। মানসিক অস্থিরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একটা সময়ে তাঁকে পাঠাতে হয় মেন্টাল অ্যাসাইলামে। সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে আসা ঘরোয়া অশান্তি, খুনের কাহিনি একে একে কাগজ কেটে সে জড়ো করে। সেই কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ বানানোই তার প্রিয় কাজ। শৈশবের সেই স্মৃতিগুলিকে জড়ো করে এমনভাবেই সে বাঁচে। তবে শৈল্পিকসত্ত্বা তার মধ্যে বর্তমান। পেশায় ফলি আর্টিস্ট ববি। সিনেমার নায়িকাদের গলায় শোনা যায় ববির কণ্ঠ। তবে ক্যামেরার নেপথ্যে কাজ করা তাঁর না-পসন্দ! সেও হতে চায় গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী। আর সেই শখে ভাড়াটে ফটোগ্রাফার দিয়ে প্রত্যেক সিনেমায় কাজ করা নায়িকাদের মতো পোশাক পরে ছবি তোলায় সে।
ঘটনাচক্রে ববির বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে আসে নবদম্পতি কেশব (রাজকুমার) এবং রিমা (অময়রা দস্তুর)। তাদের দাম্পত্য খুনসুটি নজর কাড়ে ববির। সেও সেই স্বাদ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। বিশেষত, কেশবকে নিয়ে ববির একটা আলাদা ফ্যান্টাসির জগৎ তৈরি হয়ে যায়। আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি। শুরু হয় আসল খেলা। ববির ভূমিকায় কঙ্গনার কাণ্ডকীর্তি নজর কাড়বে। এককথায় তিনিই এ গল্পের আসল স্টার। লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, কঙ্গনা ছাড়া বলিউডের অন্য কোনও অভিনেত্রীকে এই চরিত্রে ভাবা অসম্ভব।
কেশবের ভূমিকায় রাজকুমার
রাজকুমারের অভিনয় নিয়ে আলাদা করে আর বলার কিছু নেই। কমেডি হোক কিংবা খলনায়ক, সবেতেই সাবলীল তিনি। ছবি দেখতে বসে রাজকুমারের রাবণ রূপ দেখতে অবশ্য আপনাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে কেশবের রহস্যময় চরিত্র দেখতে দেখতে যে কোনও সময়ে আপনার মনও দোলাচলে পড়বে নিঃসন্দেহে। রাজকুমারের চরিত্রটা সারপ্রাইজই থাকাই ভাল। বাকিটা প্রেক্ষাগৃহের জন্য তোলা থাক।
সবমিলিয়ে
কণিকা ধিলোনের চিত্রনাট্যের বাঁধনও বেশ। কমেডির মোড়কে গল্পের পরতে পরতে টানটান রোমাঞ্চ। যা আপনাকে শেষ অবধি ছবিটা দেখতে বাধ্য করবে। প্রথমার্ধে কঙ্গনার মুচমুচে সংলাপ বেশ মনে ধরবে দর্শকদের। তবে পরিচালক প্রকাশ কোভেলামুদী প্রথমার্ধের গল্প এতটা না টানলেই পারতেন। সেক্ষেত্রে আরেকটু আটসাঁট হলে ভাল হত। ছবি মুক্তির আগে নায়িকার ব্যবহার নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে প্রযোজক একতা কাপুরকে। তবে, ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’ সেই যাবতীয় বিতর্ককে সরিয়ে দিয়ে বক্স অফিসে কতটা লক্ষ্মীলাভ করতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। প্রাপ্তি হল কঙ্গনা-রাজকুমারের পাগলামির কাণ্ডকীর্তি। এছাড়াও বিশেষভাবে উল্লেখ্য ছবির নেপথ্য সংগীত। তবে বাচ্চাদের নিয়ে এই ছবি না দেখাই ভাল। দ্বিতীয়ার্ধের বেশ কিছু দৃশ্য আবেগপ্রবণ মনকে ছিন্নভিন্ন করতে বাধ্য।