Advertisement
Advertisement
নিরন্তর

দৃশ্য বিন্যাসে নৈপুণ্যের ছাপ, করোনা আবহে মন ছুঁয়ে যাবে প্রসেনজিতের ছবি ‘নিরন্তর’

প্রথম ছবিতেই নজর কাড়লেন পরিচালক চন্দ্রাশিস।

Prosenjit Chatterjee starrer film Nirantar movie review
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:June 28, 2020 8:53 am
  • Updated:June 28, 2020 8:53 am

নির্মল ধর: পরিচালক চন্দ্রাশিস রায়ের (Chandrashis Roy) প্রথম ছবি ‘নিরন্তর’। বিশ্বাস করতে সত্যিই অসুবিধে হয় এমন সুচারু নৈপুণ্যে গাঁথা দৃশ্যের পর দৃশ্য, ঘটনার পর ঘটনা, চরিত্রগুলোর কি সাবলীল প্রবেশ ও প্রস্থান! কোথায় কতটুকু বলতে হবে, এবং তার চেয়েও বড় কথা কোথায় থামতে হবে, কোন দৃশ্যটা কোথায় কাট করার পর কোন দৃশ্যে ঢুকতে হবে সেটা ঠিক অংকের মতো সাজিয়ে চিত্রনাট্যাটি লিখেছেন চন্দ্রাশিস। সমীক হালদার তাঁর মোলায়েম ক্যামেরা তুলি বুলিয়ে শুধু চোখের আরাম দিতে নয়, মনের খিদে মেটানোর মত করেই পর্দার কানভাসটি ভরিয়ে দিয়েছেন।

হ্যাঁ, গল্পটি মাত্র দু-তিন লাইনেই বলে দেওয়া যায়। কিন্ত ‘নিরন্তর’ ঠিক গল্পকেন্দ্রিক সিনেমা নয়। অনেকটাই অনুভব ও হৃদয়কেন্দ্রিক। এটা সংবেদনশীল মন এবং অনুভব দিয়ে হৃদয়ঙ্গম করার ছবি। দু’জোড়া দম্পতির বিষাদময় কাহিনি নিয়ে এই ‘নিরন্তর’। এক জোড়ায় রয়েছেন প্রসেনজিৎ (Prosenijt Chatterjee) ও অঙ্কিতা, নিঃসন্তান দম্পতি। অন্য জোড়া হচ্ছেন নতুন দুই মুখ সত্যম ও পুনম গুরুং, বয়সে তরুণ। সন্তান না হওয়ার কারণে অঙ্কিতা ডিপ্রেশনের মানসিক রোগী, অসুস্থ। স্বামী প্রসেনজিৎ ‘পিতা’ হতে না পারার আক্ষেপে যেমন বিষণ্ণ, তেমনি অসুস্থ স্ত্রী’র শরীর স্বাস্থ্য নিযেও চিন্তিত এবং কিছুটা বিরক্তও। অফিস কর্মী একাবল্লী খান্নার সাহচর্য কিছুটা হয়তো প্রলেপ দেয় সেই বিরক্তির ক্ষতে।

Advertisement

Advertisement

সিনেমা শুরু উত্তর বাংলার পাহাড় ও আকাশে ছাওয়া প্রকৃতির কোলে প্রসেনজিৎ ও সত্যমের হোটেল তৈরির জন্য সাইট খোঁজা দিয়ে। তাঁদের পাঠিয়েছে কোম্পানিই। এইকদিন স্পট খোঁজার মধ্যেই দু’জনের চেনাজানা দুটো অসম বয়সী মানুষ বয়স ডিঙিয়ে কেমন বন্ধু হয়ে ওঠে। এবং তখনই এক অঘটন ঘটে যায়। বাড়ি ফেরার আগের রাত্রিতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সত্যম। কলকাতায় প্রসেনজিৎ ফেরেন সত্যমের ‘বডি’ নিয়ে।

[ আরও পড়ুন: অলৌকিক শক্তির মোড়কে এক বলিষ্ঠ নারীবাদের কাহিনি ‘বুলবুল’ ]

এবার ছবির দ্বিতীয় পর্ব। প্রকৃতির সুন্দর কোলে এক অমানবিক ঘটনার পর যান্ত্রিক শহরেও ঘটতে থাকে দু’টি মানুষের শোনা কাহিনির এক করুণ বিবরণ। প্রসেনজিৎ-অঙ্কিতার সম্পর্কে নীরব বিষণ্ণতার মাঝেও যে ভালোবাসার ফল্গুধারা তিরতির করে এখনও বহমান সেটি স্পস্ট করে দেন পরিচালক, এবং একই সঙ্গে সত্যমের বিধবা স্ত্রী ও সদ্যজাত শিশুটিও যেন প্রসেনজিতের সন্তানহীনতার মাঝে এক টুকরো মরুদ্যান হয়ে ওঠে।

satyam

চন্দ্রাশিস অত্যন্ত নিচু লয়ে নাটকটিকে নিয়ে খেলেছেন। সুরকার অভিজিৎ কুণ্ডু মহাশয় একটি ‘কাজরি’ গান ব্যবহার করে শেষ দৃশ্যটিকে দর্শকের মর্ম যেন ছুঁয়ে যান। কিছুদিন ধরেই নায়ক প্রসেনজিৎ নতুন পরিচালকদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলবেন, নিজে ভাল ও অথর-ব্যাকিং চরিত্র পাওয়ার জন্যই এমন করছেন। তা করলে ক্ষতি কোথায়? বাংলা সিনেমা তো একজন সম্ভাবনাময় পরিচালক পেল। চন্দ্রাশিস ছবিটিকে কী সুন্দর ছকে সাজিয়েছেন! মাঝে মাঝে প্রয়াত ঋতুপর্ণর কথা মনে পড়ছিল, বিশেষ করে দৃশ্য বিন্যাসের কারিকুরিতে। আর এই দৃশ্য বিন্যাসের জন্যই ছবিটি হয়ে ওঠে ‘সিনেমা’।

[ আরও পড়ুন: ‘আর্যা’র হাত ধরে দুর্ধর্ষ কামব্যাক সুস্মিতা সেনের ]

সমীক হালদারের কথা আগেই বলেছি, এবার আসা যাক অভিনয়ে। প্রসেনজিৎ হয়েছেন বিপ্লব, তাঁর আভিনয়ে সেরা মুহূর্তগুলো তৈরি হয় নীরব অভিব্যক্তিতে। গোলমরিচমার্কা দাড়ি নিয়ে তিনি অবসন্নতা, বিরক্তি, রাগ, হতাশা, ভেতরের যন্ত্রণা, কিছু প্রাপ্তির নীরব আনন্দ সব কিছুই সরব করে তোলেন দর্শকের কাছে। নাটকের চেনামুখ অঙ্কিতা মাঝি ক্যামেরার সামনে তো বটেই, পাশে প্রসেনজিতের মতো ‘স্টার’কে নিয়েও খুবই সাবলীল, যথেষ্ট সংযত এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তেমন দাপুটেও। আর একটি নতুন মুখ সত্যম হয়েছেন ভাস্কর। কী সরল-স্বাভাবিক অভিনয়! মনেই হয় না তিনি প্রথম ক্যামেরার সামনে। সহ-শিল্পী প্রসেনজিৎকে যেন থোড়াই কেয়ার করেছেন। অথচ সিনিয়র বস হিসেবে সম্ভ্রম দেখানোয় কোনও খামতি ছিল না। সত্যমের স্ত্রীর চরিত্রে পুনম গুরুং খুবই স্বচ্ছন্দ ও স্বাভাবিক। সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে নিয়ে এলে প্রসেনজিৎ যেন নিজেই আনাস্বাদিত পিতৃত্বের স্বাদ অনুভব করেন। দারুন মনছোঁয়া এক মুহূর্ত তৈরি হয়।

nirantar 2

এরকম মুহূর্ত বেশ কয়েকটি রয়েছে ছবিতে। যে ‘কাজরি’ গানটি স্ত্রী বিভিন্ন আনন্দ অনুস্থানে গেয়েছেন অতীতে, সেই গানটিই আবার বেজে ওঠে তাঁর গলায়। বিষাদ বা বিয়োগ নয়, ‘বরসন লাগে বাদরিয়া’ জানিয়ে দেয় বিপ্লবের দাম্পত্য জীবন যেন এক মধুর বাকের সামনে দাঁড়িয়ে। চন্দ্রাশিসের এমন মন ভরানো ছবি স্বাভাবিক কারণেই কিছুটা ধীরগতির সাধারণ দর্শকের কাছে। কিন্তু ছবির বিষয়টাই এমন স্লো পেস দাবি করে। করোনার বন্দি জীবনে ‘নিরন্তর’ এক ঝলক বর্ষার বৃষ্টির মতো, শুধু শরীর নয়, হৃদয়টাও খানিক ভিজিয়ে দেয়।

পুনশ্চঃ- আক্ষেপ একটাই, চন্দ্রাশিসের মতো তরুণের দল আজকের ক্ষয়িত সমাজের সমস্যা থেকে একশো আশি ডিগ্রি পিঠ ঘুরিয়ে কেমন হাসিখুশির ছবি তৈরিতে ব্যস্ত? যেসব ছবিতে ভাবনার কোনও খোরাক নেই। ঋত্বিক বলেছিলেন না “ভাব, ভাব, ভাবা প্র্যাকটিস করো!” সেই ভাবনার ছবি আর হয় না এখন! ভাবনার দরজাটাই যে বন্ধ!

২৮ জুন জি বাংলায় বেলা ৩টেয় মুক্তি পাবে ছবিটি। তারপর থেকে জি ফাইভে দেখা যাবে ‘নিরন্তর’।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ