বাঙালি অভিনেত্রী। ক্যানসার জয়ী। নতুন ওয়েব সিরিজ মুক্তির আগে লিজা রে’র সঙ্গে আড্ডায় অহনা ভট্টাচার্য।
কেমন আছেন?
লিজা: আমি ভাল আছি, ধন্যবাদ! ওয়েট, আর ইউ আ বং? আমি কিন্তু বাঙালি, জানেন নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ, জানি। লিজা, আপনি সদ্য মা হয়েছেন। অভিনন্দন! আপনার ‘মিরাকল বেবি’রা কেমন আছে?
লিজা: (হেসে) ধন্যবাদ! আমার দুই মেয়ে খুব ভাল আছে। মা হওয়ার পর আমার জীবন অনেকটা পালটে গেছে। ওদের নিয়েই এখন বেশিরভাগ সময় কাটে। ওদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকি অনেকক্ষণ ধরে! সুফি আর সোলেইল যখন ছোট ছোট হাত দিয়ে আমার মুখটা ধরার চেষ্টা করে, আমার চুল ধরে টানে, খুব মজা লাগে! এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?
বাঙালি মায়েদের মতো বাচ্চাদের ঘুমপাড়ানি গান শোনান?
লিজা: মাঝে মাঝে গাই তবে আমার মেয়েদের ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে ভাল কাজ করে সেটা হল আমার বাবার প্রিয় গায়কের একটা পুরনো বাংলা গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘আয় খুকু আয়’। গানটা আমারও বড্ড প্রিয়। এটা চালিয়ে দিলেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। ওরা ছোট্ট ছোট্ট হাতে চোখ ডলতে শুরু করে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে।
কাজের প্রসঙ্গে আসি। অ্যামাজন প্রাইমের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘ফোর মোর শটস প্লিজ’-এ আপনি সমকামী নারীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন। বাস্তবে সমকামী সম্পর্কের ব্যাপারে আপনার মনোভাব কেমন?
লিজা: আমি কোনও ব্যাপারেই জাজমেন্টাল নই। জীবনের বহু অভিজ্ঞতা আমাকে এরকম হতে শিখিয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া দু’জন মানুষের একে অপরের সঙ্গে যে সম্পর্ক, তা কি আপনি বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? অনেক সময় সমাজের চাপে আমরা মনের ভাব ব্যক্ত করার সাহস পাই না। কিন্তু সত্যিটা তো এই যে আপনি একটা মানুষের আত্মাকে, তার মনকে ভালবাসছেন। সে নারী বা পুরুষ যে শরীরেই আপনার সামনে আসুক না কেন। বলছি না আপনাকেও সমকামী হতে হবে, কিন্তু আপনার আশেপাশে কেউ যদি তা হন তবে সেটা মেনে নিতে শিখুন।
[ ‘সবচেয়ে কঠিন ছিল ওঁর মতো বক্তৃতা দেওয়া’, ঠাকরে সম্পর্কে মুখ খুললেন নওয়াজ ]
আপনাকে পর্দায় এত কম দেখা যায় কেন?
লিজা: আমি প্রথম থেকেই খুব বেছে বেছে কাজ করি। এখন আমার বয়স ৪৬। জীবনের একটা অন্য অধ্যায়ে রয়েছি। এখন আমাকে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয় না, ইচ্ছে করলে কাজ করি। আসলে আই হ্যাভ নেভার প্লেড দ্য গেম, যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলাম তখনও না। তখন অনেক মূলধারার ছবির অফার আসত কিন্তু আমি করিনি।
কেন করেননি?
লিজা: প্লিজ এটা জিজ্ঞেস করবেন না। হয়তো সিদ্ধান্তটা বোকার মতো হয়েছিল কিন্তু সেটা আমার সিদ্ধান্ত ছিল। আমার কাছে সাফল্যের ব্যাখ্যা একটু আলাদা। আজ আমি সুখী। এখন আমি আমার বই নিয়ে ব্যস্ত।
কী নিয়ে বই লিখছেন?
লিজা: এটা আমার আত্মজীবনী। পুরোটা নিজেই লিখেছি। এ বছরই বইটা বেরোবে।
হঠাৎ বই লেখার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
লিজা: আমি বরাবরই লিখতাম কিন্তু কোনও দিন ছাপানোর সাহস করিনি। এতদিনে সেই সাহস পেয়েছি।
একটা সময় নিজের ক্যানসার নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন। আমাদের দেশের বহু মানুষ ক্যানস্যারের সঙ্গে লড়ছেন। তাঁদের কী বলবেন?
লিজা: তখন আমার ঠিক মনে হয়েছিল তাই মুখ খুলেছিলাম। তখন কি কারও ক্যানসার হত না? কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে বলত না। আমার পর অনেকেই ক্যানসার নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। যেমন মনীষা (কৈরালা) বা যুবরাজ (সিং)। এখন ব্যাপারটা নর্মাল হয়ে গেছে। এর ফলে ক্যানসার রোগীদের মনোবল বাড়বে। সোনালি বেন্দ্রের মতো অভিনেত্রী ন্যাড়া মাথার ছবি পোস্ট করছেন দেখলে অনেকেই সাহস পাবেন, ভরসা পাবেন।
ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক বছর কাটিয়েছেন। #MeToo মুভমেন্ট নিয়ে আপনার কী মত?
লিজা: আমি তো শুরু থেকেই এটাকে সমর্থন করছি। অনেক বছর ধরে মেয়েদের গলার আওয়াজকে চেপে রাখা হয়েছে। এখন সেটা বুমেরাং হয়ে ফিরছে। এই ধরনের ঘটনা যে আগে হত না তা তো নয়। আমি খুব খুশি যে এগুলো নিয়ে আমরা অবশেষে মুখ খুলছি।
নয়ের দশকের সঙ্গে এখনকার বলিউডের কোনও তফাত চোখে পড়ে?
লিজা: পুরোটাই তো পালটে গিয়েছে! তখনকার দিনে এত মার্কেটিং হত না। নিজেকে কেউ ব্র্যান্ড ভাবত না। ইন্টারনেট ছিল না। তখন আমাদের ম্যানেজার ছিল না, পিআর ছিল না, স্টাইলিস্ট ছিল না। তার আলাদা একটা চার্ম ছিল জানেন! আমি ভাগ্যবান যে ওই সময়ের বলিউডে কাজ করতে পেরেছি। এখন ছবিতে বাণিজ্য বেশ প্রাধান্য পায়। আর সোশ্যাল মিডিয়া এসেছে যেটা আমাদের জীবনে একাধারে আশীর্বাদ এবং অভিশাপ।
সোশ্যাল মিডিয়াকে অভিশাপ কেন বলছেন?
লিজা: আমি তো পুরনো প্রজন্মের, মানে ভিন্টেজ। আই অ্যাম ফাইন ওয়াইন। আমি সারাক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না, মাথা ব্যথা করে। কিন্তু এখনকার প্রজন্মের কাছে এটাই স্বাভাবিক। এখনকার ছেলেমেয়েরা ফোটো দেখে একজন মানুষ কেমন তা বিচার করে। ওই মানুষটাকে আদৌ হয়তো ওরকম দেখতে না। এখন তো কত রকম ফিল্টার বেরিয়ে গিয়েছে, যার সাহায্যে ছবিতে আপনাকে আরও সুন্দর লাগবে। সেটা হেলদি না। আমি বলব তোমার যে সাইজ, যে শেপ, সেভাবেই নিজেকে ভালবাসতে শেখো। তুমি কী রকম হবে সেটা অন্য কেউ কেন ঠিক করে দেবে?
[ নেতাজির জন্মদিনে আজও বিনা পয়সায় তেলেভাজা বিলি করে শহরের এই দোকান ]