Advertisement
Advertisement

Breaking News

মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে কতটা মন কাড়তে পারল ‘উড়নচণ্ডী’?

কেমন হল বাংলার এই রোড মুভি? হলে যাওয়ার আগেই জেনে নিন।

Movie Review: Know how Uronchondi make you think about life
Published by: Saroj Darbar
  • Posted:August 3, 2018 2:53 pm
  • Updated:August 3, 2018 3:36 pm

চারুবাক: ওয়াল্টার সালে, আলেকজান্ডার পেইন বা টড ফিলিপস, এমনকী স্বদেশি ইমতিয়াজ আলি- এঁদের কথা এবং ছবির কথা সরিয়েই রাখছি। কারণ ওঁদের ছবিতে চে গুয়েভারা এবং বলিভিয়ার সংগ্রামী ইতিহাস জড়িত। সুতরাং, তুলনার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বাংলা সিনেমায় রোড মুভি বলতে এই মুহূর্তে ‘জি টি রোড’ নামে একটি ছবির কথা মনে পড়ছে। অভিনয়ে ছিলেন দেবশ্রী রায় ও শ্যামল ঘোষাল। আর সাম্প্রতিক ছবির মধ্যে স্মরণে আসছে ‘দুই পৃথিবী’র নাম। সেই ইতিহাস বিচার করলে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থাপনায় নতুন পরিচালক অভিষেক সাহার সদ্য মুক্তি পাওয়া প্রথম ছবি ‘উড়নচণ্ডী’ রোড মুভি ঘরানায় ব্যতিক্রমী ভাবনার দাবি করতেই পারে।

রোড মুভি মানে রাস্তার পরিক্রমা তো শুধু নয়, সেই সঙ্গে গল্পের চলনে-বলনে জড়িয়ে থাকবে জীবনের কথা, বাস্তবের ছবি এবং জীবনকে অন্যতর এক উপলব্ধিতে উত্তীর্ণ করে দেওয়ার বার্তাও। এমন উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলায় রোড মুভি কোথায়? এই প্রেক্ষিত স্মরণে রাখলে অভিষেক সাহার ছবিটিকে পিঠ চাপড়ে বাহবা দিতেই হবে। চারটি চরিত্রে ক’দিনের দীর্ঘ যাত্রাপথে দর্শক শুধু তাঁদের দুঃখ, ব্যথা, যন্ত্রণা, বঞ্চনা, অপমান কাহিনি হিসেবে দেখবে-শুনবে না, আন্তরিক সহমর্মিতা দিয়ে উপলব্ধি করবে তাঁদের অসহায়তাও।

Advertisement

[  পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে সৃজিতের ‘এক যে ছিল রাজা’, প্রকাশ্যে মোশন পোস্টার ]

Advertisement

কী গ্রামে, কী শহরে, এখনও নারী পুরুষতন্ত্রের শিকার। কখনও বাবার চেহারায়, কখনও স্বামীর ভূমিকায়, আবার কখনও সন্তানও চেহারা নেয় একইরকম। এই ছবির তিন নারী চরিত্র বিন্দি (সুদীপ্তা), মিনু (রাজনন্দিনী) এবং সাবিত্রী (চিত্রা সেন) সকলেই যেন কঠিন বাস্তব ছেড়ে পালাতে চাইছে। স্বামীর অত্যাচারে সন্তানসম ছোটু (অমর্ত্য) আর তার বাহন লরি নিয়ে বিন্দি উদ্দেশ্যহীনভাবে হয়তো কোনও অচিনপুরে আসার স্বপ্ন দেখতে ছুটছে। মিনু বিয়ের আসর থেকে পালায় প্রেমিকের কাছে যাবে বলে। কিন্তু সেই প্রেমিকের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এখন পথই ভরসা তার। মায়ের স্নেহে বিন্দি তাকে জায়গা দেয় লরিতে। আর বৃদ্ধা সাবিত্রী চলন্ত লরির সামনে এসে পড়েন কারণ দুই ছেলের কাছেই তিনি তখন ‘বোঝা’ বিশেষ। সুতরাং ওই লরিই হয় তখন তাঁর আশ্রয়। এদের দীর্ঘ যাত্রাপথ নিয়েই ‘উড়নচণ্ডী’। শুধু যাত্রাই নয়, পথে আসে নানা বাধাও। সেই সব বাধার পাঁচিল ডিঙিয়ে পরিচালক এদের সবাইকে শেষপর্যন্ত পৌঁছে দেন এক অনাবিল মুক্তির পরিমণ্ডলে। যদিও আমরা জানি, সেই মুক্তি এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কতদিন আর অনাবিল থাকবে? কিন্তু মুক্তির ইশারা ও ইঙ্গিতটাই তো বড় কথা।

নায়ক-প্রযোজক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। ছবির প্রযোজনায় এসে তিনি সৎ ও ভাল ছবির নেপথ্যে সাহায্যের হাত নিয়ে দাঁড়ালেন। এই মুহূর্তে তিনি নিজে যেমন স্থূল, বাণিজ্যিক ঘরানার বাইরে গিয়ে অভিনয়ের চিন্তা করছেন। প্রযোজনাতেও একই চিন্তার প্রতিফলন ভাল লাগল। বিশেষ করে অভিষেক সাহার মতো সম্ভাবনাময় পরিচালকের পাশে দাঁড়ানো, সাহস জোগানোর কাজটি তো তিনিই করলেন। পরিচালক অবশ্যই তাঁর সাধ্যমতো প্রযোজকের সম্মান রেখেছেন। চরিত্র তিনটির অতীত নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা চিত্রনাট্যে দেননি, বর্তমানটিই তার উপজীব্য। দৃশ্যের পরিকল্পনা, উপস্থাপনা এবং বাঁধুনিতে অভিজ্ঞতার সঙ্গে নান্দনিকতায় মোড়া শিল্প ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। তাঁকে অবশ্য চার হাত ভরে সাহায্য করেছেন দু’জন – আলোকচিত্রী শমীক হালদার এবং সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র। এতদিন বহুজনের ছবিতে দেখা পুরুলিয়ার রুক্ষ প্রকৃতির পরিবর্তে অভিষেক-শমীক জুটি ক্যামেরায় তুলে আনলেন আগুন পলাশে মাখা সবুজে ছড়াছড়ি এক রঙিন পুরুলিয়াকে। দেখা গেল পুকুরের নীল জলও। আর পরিচিত দেবজ্যোতি মিশ্র ছন্দায়িত ফুট ট্যাপিং জুড়ে গ্রামীণ সুরেও আনলেন এক অচেনা সুরকারকে। শ্রীজাতর লেখা হিন্দি, বাংলা মেশানো গানগুলোতেও চটকের সঙ্গে মাটির ছোঁয়ার স্বাদ মেলে।

[  ফের টেলিভিশনে মনামী, ফিরছেন নায়িকার ভূমিকায় ]

না, সেজন্য ‘উড়নচণ্ডী’ একেবারেই ত্রুটিমুক্ত, তা বলতে পারছি না। যে জায়গাটিতে লরি যাবে, একটি মাইল ফলকে দেখা গেল তার দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। কিন্তু ওটুকু দূরত্ব পেরোতে এত সময় লাগল কেন? রাজনন্দিনী অভিনয় ভালই করেছেন, ডাবিংয়েও তিনি বেশ দক্ষ। কিন্তু তার চেহারায় বালিগঞ্জীয় গ্ল্যামার থাকল কেন? সেটি ভাঙা উচিত ছিল। চিত্রা সেন অসাধারণ অভিনেত্রী। কিন্তু ক্যামেরার সামনে তাঁকে অত ‘লাউড’ হতে দিলেন কেন পরিচালক? তবে সবচাইতে বেশি নজর কেড়েছেন ছোটুর চরিত্রে অমর্ত্য রায়। বাচিক অভিনয়ে এবং অভিব্যক্তিতে অমর্ত্য সুন্দর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিন্দির চরিত্রে সুদীপ্তা চক্রবর্তী তাঁর নিজস্বতায় উজ্জ্বল। দাপট এবং ব্যক্তিত্বে সুদীপ্তা তুলনাহীন। আবাস ভেঙে পড়ার মুহূর্তে তিনি একটু নাটকীয় হয়েও বাস্তব। পরিচালকের আরও একটি কাজের অবশ্যই প্রশংসা করব। ছোটুর সঙ্গে মিনুর নীরবে এক অনুভূতি ও সম্পর্ক গড়ে ওঠার আভাসটি সুন্দর গড়েছেন তিনি। এমন কিছু মুহূর্ত এই ছবিতে থাকতেই পারতো। না থাক, যে টুকু দেখা গেল তাতেই অভিষেককে নিয়ে আগ্রহ রইল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ