২০ অগ্রহায়ণ  ১৪৩০  মঙ্গলবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

পাঁচ রাজ্যের রায়

মিজোরাম (৪০/৪০) এগিয়ে / জয়ী
এমএনএফ ১০
জেডপিএম ২৭
কংগ্রেস
বিজেপি
অন্যান্য
মধ্যপ্রদেশ (২৩০/২৩০) জয়ী
বিজেপি ১৬৪
কংগ্রেস ৬৫
অন্যান্য
রাজস্থান (১৯৯/২০০) জয়ী
বিজেপি ১১৫
কংগ্রেস ৬৯
অন্যান্য ১৫
ছত্তিশগড় (৯০/৯০) জয়ী
বিজেপি ৫৪
কংগ্রেস ৩৫
অন্যান্য
তেলেঙ্গানা (১১৯/১১৯) জয়ী
বিআরএস ৩৯
কংগ্রেস ৬৪
বিজেপি
এআইএমআইএম
অন্যান্য

প্রেম, অবিশ্বাস, প্রতিশোধ ও যৌনতার ককটেল ‘হেমন্ত’

Published by: Sangbad Pratidin Digital |    Posted: August 12, 2016 5:33 pm|    Updated: August 6, 2021 6:04 pm

Movie Review Of Hemanta

পরিচয় কর: শেক্সপিয়ারের দীর্ঘতম এবং গভীরতম ট্র্যাজেডি হল হ্যামলেট। তার অ্যাডাপটেশন অঞ্জন দত্তর ‘হেমন্ত’। মুক্তির আগেই যে ছবি নিয়ে আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। হেমন্ত অর্থাৎ নামভূমিকায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। গার্ট্রুড অর্থাৎ হ্যামলেটের মা এখানে গায়ত্রী, হয়েছেন গার্গী রায়চৌধুরি। কাকা ক্লডিয়াস, ছবিতে কল্যাণ, অভিনয়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। হোরেশিও অর্থাৎ হ্যামলেটের বন্ধু এখানে হীরক, যিশু সেনগুপ্ত। ওফেলিয়া এখানে অলিপ্রিয়া, অভিনয়ে পায়েল সরকার। যে দীর্ঘ দিন ধরে হেমন্তের অপেক্ষায় রয়েছে কলকাতা শহরে। হেমন্ত নিউ ইয়র্ক থেকে কলকাতায় ফিরছে। এসে দেখছে, বাবার মৃত্যুর পর মা কাকাকে বিয়ে করে নিয়েছে। হেমন্তর রাজত্ব বলতে এই ছবিতে বাবা-কাকার ফিল্ম প্রোডাকশনের ব্যবসা। আর এই রমরমা ফিল্মের ব্যবসায় মা-কাকা হাতে হাত মিলিয়েছে। হেমন্ত মানতে পারে না মা-কাকার এই দাম্পত্য। সে ভাবতে থাকে, বাবার মৃত্যুটা আত্মহত্যা? না কি তাঁকে খুন করা হয়েছিল? নাগাড়ে হেমন্তর মোবাইলে ভুতুড়ে মেসেজ আসে। ঠিক যেমন করে হ্যামলেটের বাবার ভূত তাড়া করেছিল তাকে। পরিচালক অঞ্জন দত্ত শেক্সপিয়ারের টেক্সট এভাবেই বুনে দিয়েছেন ছবির ফ্রেমে।

hemanta5_web
সন্দেহ-অবিশ্বাস হেমন্তকে স্বস্তি দেয় না। সে নেশা করে, ঘুমাতে পারে না। মা-বাবা-কাকা- এই তিন অস্বস্তি অথচ তিন বাস্তব তাকে কুরে কুরে খায়। প্রেমেও থিতু হতে পারে না হেমন্তর মন। অলিপ্রিয়া চির অতৃপ্ত রয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে বলতেই হবে পরমব্রত আর পায়েলের একটি বিছানার দৃশ্য এই ছবিতে বড্ড সৎ। ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরায় যা ভীষণ ভাবে জীবন্ত। পরমব্রতর অভিনয়ে হ্যামলেটের পাগলামি, দ্বিধা, সিদ্ধান্তহীনতা, তীব্র প্রেম, অবিশ্বাস, ইডিপাস কমপ্লেক্স- সব কিছু একেবারে ঠিক ঠিক ফুটে উঠেছে। কখনও কখনও আবছা লাগে- গায়ত্রী তার মা, না কি প্রেম? যখন হেমন্ত বলে, ”কাকাকে ছেড়ে দিয়ে তাহলে এ বাড়িতে এসে থাকো… আমি না কাকা?” ঠিক যেন বেছে নেওয়ার সময় হয়েছে মনে হয়! টু বি অর নট টু বি! চূড়ান্ত অ্যাংলিসাইজড অথচ আপাদমস্তক বাঙালি হেমন্তর ভূমিকায় পরমব্রত ফুল মার্কস! এটাই হয়তো এখনও পর্যন্ত পরমের সেরা অভিনয়। অভিনয় এই ছবির সম্পদ। কাকা কল্যাণের ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় চমৎকার। মা যখন সেকালের অভিনেত্রী, আবার কল্যাণের প্রেমিকা; অন্য দিকে হেমন্তর সঙ্গেও তার সাটল, প্যাশনেট সম্পর্ক- রং বদলের এই বিশুদ্ধ খেলায় গার্গী নিখুঁত। হেমন্তর জার্নালিস্ট বন্ধু হীরকের ভূমিকায় যিশু নজর কাড়লেন। এই ছবির সংলাপও শক্তিশালী। একটাই সমস্যা- আম-দর্শক এই অ্যাকসেন্ট আর ইংরেজির সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন! পারফরম্যান্স ভাল হলেও চেম্বার ড্রামার ধরন ছবির শ্বাসরোধ করে যেন কিছুটা! আউটডোর শট খুব কম। সংলাপে শহর কলকাতা থাকলেও ভিজ্যুয়ালে সে ভাবে নেই, যেটা ছবির দুর্বলতা।

hemanta3_web
পরিচালক অঞ্জনের থেকে শেক্সপিয়ারকে ভাল ইন্টারপ্রেট করবেন আর কে! সেইখানে তিনি নিখুঁত। কিন্তু, কোথাও যেন ছবির গতি রুদ্ধ হয়েছে। যে কারণে তুঙ্গ মুহূর্ত চলে এলেও দর্শক যেন সেই জার্ক টের পান না। পরিচালক দারুণ ভাবে সমসময়কে বুনে দিয়েছেন চিত্রনাট্যে। প্রেক্ষাপটটাই টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির। যেটা অঞ্জনের চেনা জগৎ, অন্য দিকে শেক্সপিয়ার তাঁর ফোর্টে। এইখানেই ছবিটা দারুণ মাত্রা পেয়ে যায়। কিন্তু চিত্রনাট্যের এক্স ফ্যাক্টরের অভাব ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছনোটা শ্লথ করে দেয়। তাই তুঙ্গ মুহূর্তটা বড় লিনিয়ের মনে হয়। স্ক্রিপ্ট আরও টানটান হতেই পারত। অলিপ্রিয়ার মৃত্যুর পর এবং আরও একটা খুনের পর হেমন্তর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সবটাই বড় বিশ্বাস্য লাগে। পরম-অঞ্জন জুটির কেমিস্ট্রির কারণে। আসলে, হেমন্ত এই সময়ে বাঁচে। তার ঘেঁটে যাওয়া পরিবার, বাবার মৃত্যুর নেপথ্য কারণ- সবটা জানতে সে মরিয়া। তাই সিনেমা বানানোর চেয়েও যেন তার কাছে জরুরি হয়ে ওঠে জীবনের শেষ দেখা। হ্যামলেটের মতোই হেমন্ত আসলে একটা মরালিস্ট লোকের ইমমরাল হয়ে যাওয়ার গল্প। তবে, যাঁরা বিশাল ভরদ্বাজের ‘হায়দার’-এর সঙ্গে ‘হেমন্ত’র তুলনা করবেন, তাঁরা ভুল করবেন। কারণ এই ছবি একান্ত ভাবেই অঞ্জনের বাঙালি ‘হেমন্ত’। নীল দত্তর মিউজিক ছবিতে যোগ্য সহায়তা করেছে। ছোট ছোট চরিত্রে অরিন্দোল বাগচি, পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়, সাগ্নিক, ভিভান বেশ ভাল। উল্লেখ্য অভিনয় করেছেন হীরকের বন্ধুর ভূমিকায়, ইউরি বোসের চরিত্রে শুভ্রসৌরভ। ড্রাগাডিক্ট, খেপাটে, প্রেমিক ইউরি মনে থেকে যায়।
শুধু মাত্র চিত্রনাট্যে কী যেন একটা নেই! সেটা থাকলেই হেমন্তর জোরালো হাওয়া টের পাওয়া যেত।

ছবি: হেমন্ত
পরিচালনা ও চিত্রনাট্য: অঞ্জন দত্ত
কাহিনি: উইলিয়াম শেক্সপিয়ার
সঙ্গীত: নীল দত্ত
সিনেম্যাটোগ্রাফি: ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, পায়েল সরকার, গার্গী রায়চৌধুরি প্রমুখ

৩/৫

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে