নির্মল ধর: রীতেশ বাত্রার ছবি ‘ফোটোগ্রাফ’ দেখব বলে সন্ধ্যায় সিনেম্যাক্স হলে গিয়েছিলাম। ভিড় ভালই ছিল। বিদেশিদের আগ্রহ বাড়িয়েছিল বিখ্যাত তিনটি সিনেমা পত্রিকা ‘ভ্যারাইটি’, ‘স্ক্রিন’ এবং ‘বলিউড রিপোর্টার’-এ প্রকাশিত সমালোচনাগুলো। সবাই প্রায় মুক্তকচ্ছ হয়ে ‘ফটোগ্রাফ’ ছবির প্রশংসা করেছে। হ্যাঁ। মানছি রীতেশের পরিচালনার কাজ সুন্দর, নিচু লয়ের আলো, রোম্যান্টিক পরিবেশ তৈরির মুন্সিয়ানা, সবার ওপর দুই শিল্পী নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি ও সনিয়া মালহোত্রার অসাধারণ অভিনয় চোখ ভরিয়ে দেয়। কিন্তু গোড়াতেই যে গলদ ঘটিয়ে বসেছেন রীতেশ!
গল্পের প্রেমটাই যে বড় দুর্বল, অবাস্তব, অলীক। বিদেশি সমালোচকরা কেউই সেটা বুঝতে পারেনি। ধরতেও পারেননি। ছবির নায়িকা এক রক্ষণশীল মারাঠি পরিবারের মেয়ে। আধুনিক নয়। না পোশাক-আশাকে, না ব্যবহারে। খুবই স্বাভাবিক, সাধারণ মেরুদণ্ডের মানুষ। সিএ প্রাথমিক পরীক্ষায় সে টপার। গেটওয়ের সামনে এক ছবি ফেরিওয়ালা, এক অতি সাধারণ ভবঘুরের প্রতি সে বেশ আকর্ষণ বোধ করে। মেয়েটি শান্ত স্বভাবের ঠিকই। কিন্তু প্রয়োজনে নীরব প্রতিবাদও তো করছে! সবচাইতে সমস্যার কথা- কনজারভেটিভ মারাঠি পরিবারের একমাত্র মেয়ে হওয়ার ফলে একজন অন্য সম্প্রদায়ের প্রায় রাস্তার ছেলের প্রতি ঝুঁকে পড়াটা কোনওভাবেই বাস্তববোধের পরিচয় নয়। রীতেশ বাত্রা এই সামাজিক পটভূমিটাই স্মরণে রাখেননি। বিদেশি সমালোচকরা আর সেটা ভাববেন কেন। সুতরাং এক কথায় এই ‘ফটোগ্রাফ’ দেখার মতো সুন্দর ছবিই হয়েছে। কিন্তু বোধবুদ্ধি, চিন্তাভাবনা, সামাজিক টানাপোড়েন হারিয়ে গিয়েছে। কি ভাগ্যিস ছবিটা প্রতিযোগিতা বিভাগ থেকে সরে গিয়েছিল। ভারতের আজকের রাজনীতি ও সমাজ-বাস্তবকে অস্বীকার করেই ‘ফটোগ্রাফ’ বানিয়েছেন রীতেশ বাত্রা। দু-তিন দিনের মধ্যেই কলকাতায় মুক্তি পাবে ‘ফটোগ্রাফ’। দর্শকরা মিলিয়ে নিতে পারেন আমার কথাটা।
[ গল্পেই মাত করল ‘বাচ্চা শ্বশুর’? ছবি দেখে কী বলছে দর্শকরা? ]
এদিকে ঝাং ইমোউয়ের ‘ওয়ান সেকেন্ড’ নামের ছবিটি চিনা কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নেওয়ার ফলে বার্লিনে উপস্থিত আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সমালোচকদের মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন ঝাং ইমোউ বা ছবির পরিবেশক প্রযোজক উপযুক্ত হোমওয়ার্ক না করেই ‘ওয়ান সেকেন্ড’-কে পাঠালেন কেন? আবার একদল মনে করছেন প্রভাবশালী ঝাং ইমোউ তাঁর ছবির জন্য লড়ে যাবেন। হয়তো আগামী কান উৎসবে এই ছবি জায়গা পেতে পারে। এসব তর্ক সরিয়ে মোদ্দা ব্যাপার হল প্রতিযোগিতায় এবার তাহলে ১৬টি ছবি। চিনের মাত্র একটি ওয়াং ঝিয়াওশুইয়াইয়ের ‘সো লং মাই সন’ দেখানো হবে কাল সকালে। এইমাত্র উৎসবের প্রেম বিভাগ জানাল আজ এখানকার সন্ধ্যায় (কলকাতায় তখন মধ্যরাত) ‘ফটোগ্রাফ’ ছবির পরিচালক রীতেশ বাত্রা, দুই শিল্পী নওয়াজউদ্দিন এবং সনিয়া সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। ছবির ইউরোপিয়ান প্রিমিয়ার এবং তিন তিনটে প্রদর্শনীর পর সাংবাদিক আসরের কী যুক্তি বুঝতে পারছি না।
[ প্রেমের পরত খুলতে খুলতে এগোল ‘তৃতীয় অধ্যায়’ ]