নানা স্বাদের হাফ ডজন ছবি নিয়ে হাজির হচ্ছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের এন আইডিয়াজ। নায়কের মুখেই বিস্তারিত শুনলেন নির্মল ধর।
সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-সা গাইতে পারি, যেথায় খুশি যাইতে পারি, আর যা চাই তা খাইতে পারি- এই তিনটি বরই ভূতের রাজার থেকে চেয়েছিল গুপী-বাঘা। সে ছিল সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর কাহিনি। এবার নতুন কাহিনি বলতে চলেছেন টালিগঞ্জের ‘দাদা’ প্রসেনজিৎ। তিনটে নয়, ছয়-ছ’টি বর দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। খাওয়া, গাওয়া, যাওয়া-র বদলে তাঁর বরে নবীন এবং পুরাতন ছবি করিয়েরা নতুন নতুন ছবি তৈরির বরাত পাবেন। সেই বরদানের অনুষ্ঠানে বরদাতার পাশাপাশি বরাত পাওয়া সৌভাগ্যবানরাও কেউ কেউ উপস্থিত ছিলেন। প্রসেনজিৎ এখানে ঠিক ভূতের রাজা নন। ইন্ডাস্ট্রির দাদা।
[টিভির পর্দায় ফিরছে কেবিসি, ভোর চারটে পর্যন্ত প্রোমো শুট অমিতাভের]
‘অটোগ্রাফ’ ছবিতে নায়ক অরিন্দমের মুখে একটা সংলাপ ছিল– ‘আমিই ইন্ডাস্ট্রি’। একটু আত্মগরিমার ছোঁয়া থাকলেও বাংলা ছবির একমাত্র সুপারস্টার এটা বলতেই পারেন। যদিও ব্যক্তিগত জীবনে প্রসেনজিৎ বা বুম্বা কখনও এমনটি ভাবেনও না। বরং বলেন, ‘আমি খাই, ঘুমাই, বাঁচি, নিশ্বাস নিই সিনেমার সঙ্গে।’ তার প্রমাণ গত ১০-১২ বছর ধরে দিয়ে আসছেন তিনি নিজের প্রোডাকশন হাউস আইডিয়াজ ক্রিয়েশনস ও প্রোডাকশন দিয়ে। এই ব্যানারেই তিনি যেমন ‘তিন ইয়ারি কথা’র মতো ব্যতিক্রমী ও অগ্রবর্তী ভাবনার ছবি বানিয়েছিলেন, তেমনই ‘গানের ওপারে’র মতো সিরিয়ালও তৈরি করেছেন। আর এবার হাফ ডজন ছবি তৈরির কথা ঘোষণা করলেন প্রসেনজিৎ। এবার তাঁর ব্যানারের নাম এন আইডিয়াজ। শুধু ওই ছ’টি নয়, জানিয়ে দিলেন আরও দু’টি ছবির কাজ শেষ। যার একটি হচ্ছে অভিষেক সাহার ‘উড়নচণ্ডী’।
বুম্বার কথায়, ‘তিন বয়সের তিন মহিলাকে নিয়ে এমন ‘রোডমুভি’ বাংলায় আগে হয়নি। ছবির পুরো শুটিং পুরুলিয়ার লোকেশনে।’ লাজুক অভিষেক বললেন, “স্বাধীনতা পেলেই জীবনটাকে এনজয় করা যায়, সেই স্বাধীনতা হওয়া চাই নিজের শর্তে। ‘উড়নচণ্ডী’র গল্প সেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য তিন নারীর জার্নি। এবং স্বাধীনতা পেলেই কি সত্যিই জীবন স্বাধীন হয়? ওঁদের দীর্ঘ জার্নি এই প্রশ্নটাই তুলে আনে।” ছবির প্রায় সব কাজই শেষ, মুক্তি ৩ আগস্ট।
এন আইডিয়াজ-এর সঙ্গে ক্রিয়েটিভ কনসালট্যান্ট হিসাবে যোগ দিয়েছেন বম্বের ‘গুলাব গ্যাং’ ছবির পরিচালক সৌমিক সেন। তিনিই সদ্য, শেষ করা ‘মহালয়া’ ছবির পরিচালক। ১৯৭৬ সালে আকাশবাণীতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটির এক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র-পঙ্কজ মল্লিক জুটির এই অনুষ্ঠান প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে চলে আসছিল। ওই বছরেই উত্তমকুমারকে নিয়ে আসা হয় অনুষ্ঠানে, সুরকারও বদলে যান। নতুন ‘মহালয়া’ সম্প্রসারণের পর চারদিক থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরিচালক সৌমিক দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে অনুষ্ঠান বদলের নেপথ্য ইতিহাসকে নিয়ে তৈরি করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে একই সময়ে দেশে নেমে এসেছিল সেই ভয়ঙ্কর জরুরি অবস্থা। সুতরাং এই ছবি ইতিহাস ও সমাজের এক দলিল হবে বলেই বিশ্বাস।
অভিনয় করেছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, শুভময়, সপ্তর্ষি রায়, কাঞ্চন মল্লিক এবং প্রসেনজিৎ নিজে। এই নতুন দু’টি প্রয়াস সম্পর্কে প্রসেনজিতের বক্তব্য, “নতুন নতুন ক্রিয়েটিভ ছেলেমেয়েদের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি আমি। নতুনদের অবস্থা ও যন্ত্রণাটা আমি বুঝি। তাঁদের জন্যই আমার এই ব্যানার। নতুন কনটেন্টও চাই। এখনকার সিনেমায় কনটেন্টই নায়ক, আমি নই, বা কোনও স্টার নয়।’’
[ক্যানসার নিয়েও মঞ্চ দাপাচ্ছেন সতীশ, অভিনেতার পাশে থাকার অাহ্বান নাট্যদুনিয়ার]
এবার এল এন আইডিয়াজের ঝুলি থেকে সৌমিক সেনের হাফ ডজন। প্রথম বর ‘কলকাতা কোম্পানি’। পরিচালক সৌমিক নিজে। সম্ভবত কলকাতার আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ে গল্প। মুখ্য ভূমিকায় প্রসেনজিৎ এবং যিশু। দুই নম্বর বর হল ‘দাস দা’। বুম্বা বলছেন এটি সুপার ন্যাচারাল রোমান্টিক কমেডি। প্রধান চরিত্রে যিশু সেনগুপ্ত। পরিচালক চন্দ্রিল ভট্টাচার্য। এই গল্পটির সিক্যুয়েলও হতে পারে। তিন নম্বর বর হচ্ছে- সুচিত্রা ভট্টাচার্যর পরিচিত একটি কাহিনি নিয়েই চিত্রনাট্য। গল্পের নাম এবং পরিচালকের নাম টেকনিক্যাল কারণে আপাতত অঘোষিত থাকল। তবে প্রধান ভূমিকায় যে প্রসেনজিৎ, তা ঘোষিত।
এরপর চার নম্বর বরে আমরা পাচ্ছি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় একটি ছবি। হয়তো সেখানে গুপী-বাঘার পরবর্তী প্রজন্ম অন্য চেহারায় হাজির হবে। থাকতে পারেন যিশুও। পাঁচ নম্বর বরটি হচ্ছে চন্দ্রাশিস রায়কে নিয়ে। কৌশিকের যোগ্য সহকারী চন্দ্রাশিস। তাঁকে লঞ্চ করার জন্যই বুম্বার এই প্রোজেক্ট। এবং ছয় নম্বর বর ও শেষ প্রোজেক্টটি হচ্ছে ‘আবার আসিতেছে।’ একটু রহস্য রয়েই গেল এটিকে ঘিরে। প্রসেনজিৎ বললেন, “না, কোনও রহস্য নেই। আমার ক্রিয়েটিভ টিম খুব শিগগিরই সব ডিসাইড করে ফেলবে। অনেকদিন তো হল বাংলা ফিল্ম ছাড়া আর কিছুই জানি না। তাই সিনেমা বানানোর চেষ্টা করি, পাতি বাণিজ্যিক নয়, আবার ভুরু তোলা আঁতেল ছবিও নয়, কনটেন্ট ড্রিভন ভাল ছবি বানানোই এন আইডিয়াজ-এর লক্ষ্য।” সেই লক্ষ্যেই ছয় বর দিয়ে এগোচ্ছেন প্রসেনজিৎ।
[কেমন হল পরি পিসি ও ঘোঁতনের ‘রেনবো জেলি’র স্বাদ?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.