সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: পুজোয় থিমের অভিনবত্বে বরাবরই নতুন চমক নিয়ে হাজির হয়েছে এসবি পার্ক সার্বজনীন। বাঁক কাঁধে সভ্যতার বোঝা বয়ে বেড়ানো দধিচিদের নিত্যদিনের ঘাম-শ্রমের ইতিহাস তাঁদের উদ্যোগেই ঠাঁই পেয়েছিল কর্পোরেট পুজো কালচারে। থিমপুজোর গানে কবীর সুমনের মতো কিংবদন্তিকে শামিল করানোর কৃতিত্বও তাঁদেরই ঝুলিতে। পুজোর কাজে একের পর এক চমকের পর এবার নয়া উদ্যোগ এই পুজোপাগলদের। এবার নাট্যমঞ্চের আলোছায়ায় অভিনয় ও জীবনকে মিশিয়ে দিতে তাঁদের আয়োজনে শহরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব।
বেশ কয়েক বছর ধরেই কলকাতার সেরা দুর্গাপুজোর মধ্যে অন্যতম নাম এসবি পার্ক সার্বজনীন। উদ্বোধনের পর থেকেই এই মণ্ডপে ভিড় যেন বাঁধা। গতবছরের মতো এবারও দর্শনার্থীদের মাতিয়ে দিতে আস্তিনে তুরুপের তাস নিয়ে তৈরি উদ্যোক্তারা। পুজো আসতে আর ১০০ দিনও বাকি নেই। কিন্তু তার ঠিক আগেই শহরবাসীকে আন্তর্জাতিক মানের নাটক ও অভিনয়ের স্বাদ দিতে চলেছেন তাঁরা।
[জানেন, কেন ২১ জুন পালন করা হয় বিশ্ব সংগীত দিবস?]
ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সার্বজনীনের উদ্যোগে শুরু হতে চলেছে ‘ইন্টারন্যাশলান ফেস্টিভাল অফ থিয়েটার’। আগামী ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই, তিনদিন ব্যাপী এই থিয়েটার ফেস্টিভাল চলবে বেহালা শরৎ সদনে। তিনদিনে মঞ্চস্থ হতে চলেছে তিনটি নাটক, যার মধ্যে দুটি হিন্দি ও একটি বাংলা নাটক। দিল্লি, মুম্বই ও ঢাকা থেকে আসবে তিনটি নাট্যদল। ৩০ জুন এই নাট্যোৎসবের উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের ডেপুটি কমিশনার-সহ ফেস্টিভালে অংশগ্রহণকারী তিনটি নাট্যদলের নির্দেশক। থাকবেন নাট্যব্যক্তিত্ব ও রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
[বিজেপি শাসিত রাজ্যে করমুক্ত ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’]
একটি নাটকের প্রযোজনায় মঞ্চের উপর যাঁদের দেখা যায়, তার থেকেও বেশি মানুষের পরিশ্রম থেকে যায় নেফথ্যে। তাঁদের ছাড়া কোনও নাটকের প্রযোজনাই সম্ভব নয়। এবার তাঁদের সম্মানিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে এই থিয়েটার ফেস্টিভালের উদ্যোক্তা এসবি পার্ক সার্বজনীন। এবছর সম্বর্ধনা দেওয়া হবে আলোকশিল্পী দুলাল সিংহকে। ১৯৬২ সাল থেকে নিয়মিত নাটকে আলোকসম্পাত করেছেন দুলালবাবু। একসময় তাপস সেনের সহকারী হিসাবে বিভিন্ন জনপ্রিয় নাটক আলোকিত হয়েছে তাঁরই ভাবনা ও কৌশলে। এবছর তাঁর হাতেই বিশেষ অর্থমূল্যের পুরস্কার তুলে দেবে ফেস্টিভালের উদ্যোক্তারা। এসবি পার্ক সার্বজনীন কমিটির কালচারাল সেক্রেটারি সঞ্জয় মজুমদার জানান, “ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন তৈরি করাই এই ফেস্টিভালের উদ্দেশ্য। এছাড়াও বেশিরভাগ বিদেশি নাটকই মঞ্চস্থ হয় আকাদেমিতে, ফলে প্রায়শই বেহালার দর্শকরা বঞ্চিত হন। তাই দক্ষিণ কলকাতার দর্শক যারা অন্যভাষার নাটক দেখতে পছন্দ করেন তাঁদের জন্যই এই উদ্যোগ।”
[‘শাহরুখ কে?’ পাক নাগরিকের ঔদ্ধত্যের কড়া জবাব দিলেন ভারতীয়রা]
এই থিয়েটার ফেস্টিভালে মঞ্চস্থ হতে চলেছে কুমার সাহানির নির্দেশনায় মুম্বইয়ের নাট্যদল “রঙ্গালয়”এর নাটক “ইসি দিন ইসি বকত”। বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে এই নাটকের চিত্রনাট্য। অন্যদিন রয়েছে দিল্লির নাট্যদল সারকেল থিয়েটার। নির্দেশক বাপি বোসের নাটক “আষাঢ় কা একদিন” মঞ্চস্থ হতে চলেছে এই ফেস্টিভালে। আর থাকছে বাংলাদেশ থেকে ঢাকার নাট্যদল “সুবচন” নাট্যসংস্থার থিয়েটার “মহাজনের নাও”। এই প্রথমবার কলকাতায় মঞ্চস্থ হতে চলেছে এই নাটক। নাটক যাঁরা ভালবাসেন তাঁদের কাছে এই উৎসব যে পুজোর আগেই পুজো উদ্যোক্তাদের পুজোর উপহার, তা বলাই যায় ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.