Advertisement
Advertisement

মুক্তি পেল সৃজিতের ‘উমা’, কেমন হল দেবীর এই অকালবোধন?

প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার আগে জেনে নিন।

See how Srijit Mukherji’s movie Uma performs
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 1, 2018 4:04 pm
  • Updated:July 11, 2018 4:39 pm

চারুবাক: আগের হাফডজন সিনেমার ধারা থেকে এই প্রথম সরে দাঁড়ালেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। স্বাভাবিক বুদ্ধি, সিনেম্যাটিক ভাবনা থেকে তিনি চলে এলেন আবেগঘন গল্প বলায়। যে আবেগে মারণরোগে আক্রান্ত কিশোরী উমার (সারা) কলকাতার দুর্গাপুজো দেখার স্বপ্ন রয়েছে, রয়েছে সিঙ্গল ফাদার হিমাদ্রির (যিশু সেনগুপ্ত) মানবিক বেদনা ও অনুশোচনার এক আর্তি। মা হারানো সারাকে মায়ের স্নেহ-ভালবাসায় ভরিয়ে রেখেছিলেন তিনিই। কিন্তু ডাক্তারের কাছ থেকে মাত্র তিন মাসের আয়ু অবশেষ জানার পর উমার স্বপ্নকে পূর্ণতা দিতে এপ্রিল মাসেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করতে চায় হিমাদ্রি। সত্যিই এ এক অকালবোধন।

হিমাদ্রির সঙ্গে হাত মেলান কলকাতার এক ‘সাকসেসফুলি ফেলিওর’ ফিল্ম পরিচালক ব্রহ্মানন্দ (অঞ্জন দত্ত)। তারও একবুক যন্ত্রণা রয়েছে। স্ত্রী ও পুত্রসন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার। এই দুই বাবার মানসিক যন্ত্রণার যোগফলে তৈরি হয় কলকাতার এক আবাসনে দুর্গাপুজোর সত্যিকার অকালবোধন। হ্যাঁ, সেখানেও বাধা আসে বৈকি! মহীতোষ (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) নামের কট্টর হিন্দু নানাভাবে এই পুজোর বিরোধিতা করে। যদিও শেষপর্যন্ত পুজো তৈরির প্রকৃত কারণটা জানার পর তিনি ভাসানের দিন বিহারী বন্ধুর (বাবুল সুপ্রিয়) সাহায্যে প্রচুর লোকজন নিয়ে এসে সাজানো বিসর্জনপর্বে লাগিয়ে দেন আসলের আভাস।

Advertisement

[মেয়ের সঙ্গে তোলা এ ছবি নাকি ‘অশ্লীল’! নেটদুনিয়ায় কটাক্ষের শিকার আমির]

Advertisement

প্রকৃতপক্ষে সৃজিতের এই ছবি নিটোল একটি মানবিক গল্প বলে। ছবির মধ্যেও তিনি বলেছেন, ‘দর্শক ছবি দেখতে এসে গল্পই খোঁজে’। সেই গল্পকে নাটক, অতিনাটক, কাকতালীয়, বিশ্বাস্য-অবিশ্বাস্য ঘটনায় মিলিয়ে সৃজিত দর্শককে বুঁদ রাখতে পেরেছেন এটা মানতেই হচ্ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে, হিমাদ্রির চাইতে ব্রহ্মানন্দ যেন বেশ গুরুত্ব পাচ্ছেন চিত্রনাট্যে। এই জন্য অবশ্য অঞ্জন দত্তের জোরাল এবং আবেদন সমৃদ্ধ অভিনয় অনেকটাই দায়ী। যিশুর উপর বিরাট ‘ছায়া” ফেলে দেন অঞ্জন। সাজানো পুজোকে বাস্তব করে তুলতে অঞ্জনের সহযোগী হয়ে অভিজিৎ গুহ, পার্থ সেন, অম্বরীশ ভট্টাচার্যরা চেষ্টার কসুর করেননি। সিনেমার শুটিংয়ের মতো করেই নকল পুজোর পরিকল্পনা ‘আসল’ হয়ে ওঠায় কোনও ত্রুটি নেই। থাকলেও সেগুলো ভুলে থাকতে হয় গল্পের টানে। দেশপ্রিয় পার্ক, বোসপুকুর, মহম্মদ আলি পার্ক বা একডালিয়া এভারগ্রিনের ঠাকুর দেখার জন্য রবীন্দ্রসদন মেট্রো থেকে ঢোকা বা বেরনোর কোনও কারণ থাকে না। সেটা দর্শক মেনে নেবেন উমার প্রতি স্নেহপরবশ হয়েই। দর্শকের জন্য সেই আর্দ্র অনুভূতির জায়গাটি গল্পের বিন্যাসে তৈরি করতে পেরেছেন সৃজিত।

সিনেমা-দর্শনে সৃজিতের এমন পরিবর্তন হয়তো অনেকের কাছে বিস্ময়ের কারণ হবে। এবং এতদিনে দর্শকের মন পাওয়ার ফর্মুলার কাছে তাঁর আত্মসমর্পণ কারও কারও ভাল না লাগতেও পারে। কিন্তু বাণিজ্যিক সিনেমায় আল্টিমেট দেবতা তো দর্শক। সিনেমা নয়, তাঁরা ‘বই’ এবং ‘গল্প’ দেখতে চান। সৃজিত দর্শক দেবতাকে সেই পুজোই চড়িয়েছেন।

অভিনয় তো আগেই বলেছি। চিত্রনাট্যের সুবাদে এবং নিজের ক্ষমতায় অঞ্জন দত্ত যিশু সেনগুপ্তের চাইতে এগিয়ে। যিশু অবশ্যই তাঁর পাশে আছেন। ডাক্তারের কাছে ভেঙে পড়ার মুহূর্তে সত্যিই যিশু অনবদ্য। মেয়ে সারা প্রথম অ্যাপিয়ারেন্সেই বুঝিয়ে দিল বর্ন অ্যাক্টর সে। কোনও জড়তা নেই ক্যামেরার সামনে। অসুস্থতার অভিনয় সারাকে করতে হয়নি। ওর বিহেভিয়ারিয়াল প্যাটার্ন ও চেহারাটাই যথেষ্ট। ভাসানের দৃশ্যে চমক হচ্ছে দেব ও প্রসেনজিতের ঝলক। অনির্বাণ জাত অভিনেতা, আবারও বোঝা গেল। আর এ ছবির আবিষ্কার বাবুল সুপ্রিয়, সত্যিই অনবদ্য তিনি।

[সৃজিতের ‘উমা’ দেখে কেন কেঁদে ফেললেন এই বিদেশিনী?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ