সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় সঙ্গীতের দুনিয়ায় তিনি কিংবদন্তি। সব শ্রেণির মানুষকে সুরের জাদুতে বেঁধেছেন। তাঁদের ভালো থাকার রসদও তাঁর কণ্ঠের সম্মোহনী শক্তি। আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে তাঁর সম্পর্কে কিছু মিথ, কিছু পাগলামো, কিছু ভাল লাগার গল্প। জানা-অজানা কিশোরকুমারের সেরকমই কিছু গল্প থাকল আপনাদের জন্য।
৪ দিয়ে যায় চেনা
৪ আগস্ট জন্ম কিশোরকুমারের। ভোর চারটের সময় তাঁর জন্ম হয়েছিল। মৃত্যুর সময়েও রয়ছে চার-এর যোগ। মহান শিল্পীর প্রয়াণ হয়েছিল বিকেল ৪.৩৫-এ। কিশোরকুমাররা চার ভাই-বোন। কিংবদন্তি শিল্পীর স্ত্রী ছিলেন চারজন। রুমা গুহঠাকুরতা, মধুবালা, যোগিতা বালি এবং লীনা চন্দভরকর।
মাত্র ৪টি বাংলা ছবিতেই তাঁকে দেখা গিয়েছিল। ‘লুকোচুরি’ ছবিতে তাঁর গাওয়া চারটি গানই সুপারহিট। ১৯৫৭ সালে ‘বন্দি’ ছবিতে তিন ভাই অর্থাৎ কিশোরকুমার, অশোককুমার এবং অনুপকুমারকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। সব মিলিয়ে ৯২টি ছবি তিনি অভিনয় করেছেন।
মেজাজটাই আসল রাজা
বি আর চোপড়াকে একবার কিশোর জিজ্ঞেস করেছিলেন, কুকুরের মতো ডাকার ক্ষমতা আছে কি তাঁর? কিংবা মুরগির আওয়াজ করতে পারবেন? তাহলেই নাকি তাঁর ছবিতে কাজ করবেন কিশোর। এ শিল্পী এমনই খামখেয়ালি ছিলেন একবার এক সংগীত পরিচালকের সঙ্গে তাঁর একটি গান নিয়ে ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না। কিশোরের এই মেজাজে বিরক্ত হয়ে ওই সুরকার আদালতে গিয়েছিলেন।
জুটির প্রাপ্তি
আর ডি বর্মনের সঙ্গে সবথেকে বেশি ছবিতে কাজ। কিশোর-রাহুল দেব বর্মনের রসায়ন দেখা যায় ১৬৪টি ছবি। আর এসডির সুরোরপিত ৪৩টি ছবিতে গেয়েছেন কিশোর।
ওয়ান ম্যান আর্মি
প্রযোজক, পরিচালক, সুরকার, গীতিকার, গায়ক, চিত্রনাট্যকার থেকে নায়ক। একেবারে ওয়ান ম্যান আর্মি। চারটি সিনেমায় কিশোরকুমারকে এতগুলো ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। সেগুলি হল, শাবাস ড্যাডি, দুর কা রাহি, দূর গগন কি চায়ো মে এবং বধতি কা নাম দাধি।
অষ্টযোগ
কেরিয়ারে আটবার ফিল্মফেয়ার। ‘রূপ তেরা মস্তানা’ দিয়ে শুরু। শেষ পুরস্কার ‘সাগর কিনারে’ গানের জন্য।
‘নিষিদ্ধ’ কিশোর
১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় একমাত্র গায়ক হিসাবে কিশোরকুমারের গান নিষিদ্ধ হয়েছিল। বিবিধভারতী এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর দরজা বন্ধ ছিল কিশোরের। তাঁর অপরাধ, ইন্দিরা গান্ধীর ‘২০ পয়েন্টস’ অনু্ষ্ঠানের হয়ে সওয়াল করেননি। আশির দশকে একাধিকবার তাঁকে আয়কর হানার মুখে পড়তে হয়েছিল।
মজে ভাজিতে
পুরু ভাজির পোকা ছিলেন কিশোরকুমার। বছরের প্রতিদিনই কিশোরদার পুরু ভাজি চাইই চাই।
কিশোরকুমারকে নিয়ে মিথেরও অভাব নেই।
কিশোর মিথ
একবার কোথায় বেড়াতে যাবেন বুঝে পাচ্ছিলেন না কিশোরকুমার। একদিন এক মুদিখানার দোকানে মুসুরির ডাল নিয়ে নড়াচড়া করতে করতে নাকি তাঁর মুসৌরি যাওয়ার কথা মাথায় আসে।
‘কিশোর হইতে সাবধান’
মুম্বইয়ের ওয়ার্ডেন রোডের নিজের ফ্ল্যাটে কিশোর হইতে সাবধান সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছিলেন এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী। প্রযোজক-পরিচালক এইচএস রাওয়াইল একবার কিশোরের বাড়িতে গিয়েছিলেন। একটি সিনেমার গানের ব্যাপারে দরাদরি চলছিল। পারিশ্রমিক নিয়ে তাঁর কী মনোভাব তা বোঝানোর জন্য এই সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছিলেন কিশোর।
অর্থই সব নয়
কেরিয়ারে শুরুর দিকে তিনি ঠিকমতো পারিশ্রমিক নেননি। বলা ভাল, তাঁকে ঠকানো হয়েছিল। পরের দিকে এই ব্যাপারে একেবারে পেশাদার মানসিকতা দেখাতেন কিশোর। তবে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে আমি চিনিগো চিনি গানের জন্য একটি টাকাও নেননি। পারিশ্রমিকের কথা বললে কিশোরকুমার নাকি সত্যজিৎ রায়ের পায়ে হাতে দিয়ে প্রণাম করেছিলেন।
প্রাণের হৃষি
হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় ও কিশোরকুমারের বন্ধুত্ব বহু পুরনো। ‘আনন্দ’ ছবির প্রধান চরিত্রের জন্য প্রথমে বন্ধু কিশোরকে ভেবেছিলেন হৃষিকেশ। কিশোর কুমার ও রুমা গুহঠাকুরতার সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে অভিমান ছবিটি বানিয়েছিলেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়।
পাঁচ রুপাইয়া বারা আনা রহস্য
‘চলতি কা নাম গাড়ি’ সিনেমায় ‘পাঁচ রুপাইয়া বারা আনা’ গানের সাফল্য কিন্তু অন্য জায়গায়। শোনা যায় কলেজ জীবনে ওই ৫ টাকা ৭৫ পয়সা নিয়ে ক্যান্টিনে যেতেন কিশোর। সেই সিকি আধুলির হিসাবে মজে যায় দেশ।
চুঁচুড়া শ্রদ্ধাঞ্জলি ইউনিট-এর উদ্যোগে কিশোর মূর্তিতে মাল্যদান:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.