Advertisement
Advertisement

কুস্তির আখড়ায় জীবনের মূল্য বোঝালেন সুলতান

ওলিম্পিকে সোনাজয়ী কুস্তিগির সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে চড়তে নিচে তাকাতে ভুলেই গিয়েছিলেন৷ যখন মুখ থুবড়ে পড়লেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ তবে জীবনের লড়াইয়ে হার মানতে নেই৷

Sultan Review
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 8, 2016 9:41 pm
  • Updated:August 9, 2021 1:09 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:

গপ্পোখানা কীরকম: হরিয়ানার গ্রামের ছেলে সুলতান (সলমন খান)৷ বিশেষ কাজ কর্ম করে না, একটু হুল্লোড়বাজ৷ এ ছেলেই একদিন প্রেমে পড়বে সুন্দরী আরফার(অনুষ্কা শর্মা)৷ কিন্তু আরফাও যেমন তেমন মেয়ে নয়৷ প্রেম করতে চাইলেই সে সহজে ধরা দেয় না৷ সুলতানকে সে মন দিতে পারে কিন্তু একটা শর্তে৷ কী সেই শর্ত? সেখান থেকেই সুলতানের উত্তরণের শুরু৷ হুল্লোড়বাজ ছেলে থেকে কী কারণে খ্যাতিমান কুস্তিগির হয়ে উঠলেন, সুলতান আর আরফার সম্পর্কেরই বা কী হল তা রুপোলি পর্দার জন্যই তোলা থাক৷

Advertisement

Salman-Khans-Sultan-Movie-New-Look

Advertisement

রিভিউ: অনেক বড় কাজ মানুষ সহজে করে ফেলতে পারে৷ কিন্তু অনেক সহজ কাজ সহজে করা তার হয়ে ওঠে না৷ যে মানুষ ভিনগ্রহে পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে অনায়াসে, সে মানুষই সারাজীবন হাতের উপর হাত রাখতে হিমশিম খায়৷ এটাই দস্তুর৷ আসলে জীবনের চ্যালেঞ্জের থেকে বড় আর কিছুর মুখোমুখি হতে হয় না মানুষকে৷ সেখানে কখনও মানুষের জয়, কখনও বা জীবনের৷ কিন্তু সিনেমা তো ইচ্ছেপূরণের বাস্তবতা৷ আর তাই শেষমেশ জীবনের চ্যালেঞ্জকে হার মানিয়ে জিতেই যায় সুলতান আলি৷

কে সুলতান আলি? না, রক্তমাংসের কোনও চরিত্র তিনি নন৷ আবার একেবারেই যে নন, যে তাই বা বলা যায় কী করে! জীবনের অভিসন্ধি যদি মানুষকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়, তবে মানুষও তা কাটিয়ে উঠতে আশ্রয় নেয় এই ছদ্ম বাস্তবতার৷ চরম বাস্তবতা মানুষকে পেড়ে ফেললে কখনও সখনও সম্ভব হয় ফিনিক্সের মতো কামব্যাক৷ আর পরাজিতের দলে থেকে যাওয়াই যাদের নিয়তি, অন্ধকার সিনেমাঘরে তাদের গোপন ইচ্ছেকে পূরণ করতে উঠে দাঁড়ায় সুলতান আলি৷ কুস্তির যে প্যাঁচে সে জীবনের চ্যালেঞ্জকে ধরাশায়ী করে, তা-ই আসলে অনেক পরাজিতের সম্মিলিত স্বপ্নপূরণের হাততালি হয়ে ওঠে৷ আর বলিউডি বক্স-অফিসে আরও একবার সফল হয় ইদ ইক্যুয়ালস টু সলমন খানের চেনা সমীকরণ৷

সুলতান আলি বলে তাই সত্যি কেউ না থাকতে পারে, তবে অনেকের প্রতিনিধি হয়েই তিনি পর্দায় জীবনের থেকে জয় ছিনিয়ে আনেন৷ অবশ্য হরিয়ানার কুস্তির আখড়াগুলোয় উঁকি মারলেই এরকম সুলতানকে খুঁজে পাওয়া যাবে৷ দেশের আর পাঁচটা রাজ্যের চেয়ে কুস্তিতে এগিয়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা৷ সুশীল কুমার, যোগেশ্বর দত্তরা তো সেই রাজ্যের মাটিতেই বড় হয়ে উঠেছেন৷ এ মাটির গন্ধ আর ঐতিহ্যের পরম্পরা নিয়েই বড় হয়ে উঠেছে সুলতানও৷

salman-khan-anushka-sharmas

কিন্তু হলে কী হবে, মাটির দাম মেটানোর কোনও ইচ্ছেই তার নেই৷ হুল্লোড়ের নেশায় সে মশগুল৷ এখান থেকে সুলতানের কুস্তিগির হয়ে ওঠার নেপথ্যে আছে তার জীবনদর্শন- “আসলি পেহেলবান কি পেহচান আখাড়ে মে নহি, জিন্দেগি মে হোয়ে৷ তাকি যব জিন্দেগি তুমহে পটকে, তো তুম ফির খরে হো৷ অউর অ্যায়সা দাও মারো, কে জিন্দেগি চিৎ হো জায়ে৷” বক্তা সুলতান আলি খান, তবে আসলে তো এ সংলাপ সলমন খানের৷ ইদের বক্স-অফিসকে ডায়লগে-অ্যাকশনে ভরিয়ে রাখা যাঁর কাজ৷ আমজনতার অনেক পাওয়া, না-পাওয়ার হিসেবকে নিজের ক্যারিশমায় ঢেকে দিয়ে বিনোদনের প্যাকেজিংয়ে ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ হয়ে ওঠাই যাঁর ধর্ম৷ পরিচালক আলি আব্বাস জাফরের চিত্রনাট্য তাঁকে সে সুযোগ দিয়েছে পুরোদমে৷ যে ‘ভাইজান’ মৈত্রীর আবেগকে উসকে দিয়ে একশো কোটির ক্লাবে জোয়ার আনেন, তিনি যে বিনোদন বৈতরণী ঠেলে জীবনের চালকে কুস্তির প্যাঁচে মাটিতে মিশিয়ে প্রেমের কাছে, সফলতার দুয়ারে তথা হ্যাপি এন্ডিংয়ে পৌঁছে যাবেন এ আর আশ্চর্য কী! মজা এই যে, সুপারস্টারের ফর্মূলা মেনেই জীবনকে এভাবেই ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি, কিন্তু তার মধ্যে পরিচালক সুকৌশলে মিশিয়ে দিয়েছেন মাটির গন্ধ৷ ঘাম-ধুলোয় মাখামাখি জীবনের বাস্তবতাকে অনেক কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান দর্শক৷ আর তা থেকে উত্থানের পর্বটিও তাই রেখাপাত করে গভীরভাবে৷ এটাই সুলতানের ইউএসপি৷

পঞ্চাশ পেরোনো সলমনকে ছবির গল্পের স্বার্থেই তিরিশের ছোকরা সেজে প্রেম করতে হয়েছে অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে৷ তবে সেই সলমনকেই নিপুণ হাতে মাঝবয়সি ব্যক্তিতে পরিণত করেছেন পরিচালক৷ তাঁর হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গি, সবই পাল্টে গিয়েছে৷ চোখে মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে৷ বজরঙ্গি ভাইজানে হনুমান ভক্ত পবন কুমার, সুলতানে হয়ে উঠেছেন পাক্কা হরিয়ানার জাট৷ তাঁর সঙ্গে তাল মেলালেন আরফা৷ মানে অনুষ্কা৷ সুলতানের আড়ম্বরে ধামাচাপা পড়েনি তাঁর রাশভারি ব্যক্তিত্ব৷ মুসলিম মহিলারাও আর হিজাবের নিচে লুকিয়ে থাকবেন না৷ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েদেরও এগিয়ে যেতে হবে৷ একথা খুব সহজে বুঝিয়ে দিলেন কুস্তিগির আরফা৷ সঙ্গে সুলতানকেও জীবনের আসল মানেটা খুঁজে বের করতে বড়সড় ভূমিকা নিলেন৷

sultan-movie

ওলিম্পিকে সোনাজয়ী কুস্তিগির সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে চড়তে নিচে তাকাতে ভুলেই গিয়েছিলেন৷ যখন মুখ থুবড়ে পড়লেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ তবে জীবনের লড়াইয়ে হার মানতে নেই৷ তাই গল্প যত গড়াল ততই জীবনের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে উঠলেন কুস্তিগির সুলতান৷
এমন ছবির প্রেক্ষাপট বলিউডে বেশ অভিনব, তা বলা যাবে না৷ তবে সলমন এ ধরনের চরিত্রে আগে অভিনয় করেননি৷ ছবির জন্য তাঁকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে তা দেখলেই বোঝা যায়৷ মার্শাল আর্টের গুরু হিসেবে রণদীপ হুডা নিজের জায়গায় ঠিকঠাক৷ তবে অনন্ত বিধাতকে একেবারেই সলমনের বন্ধু মনে হয়নি৷ অনুষ্কা নিজের সেরাটা দিয়েও কোথাও যেন একটা ফাঁক রেখে দিলেন৷ তবে প্রায় তিন ঘণ্টার ছবি একা কাঁধে টেনে নিয়ে গেলেন সেই সুলতানই৷

পরিচালক খুব যত্ন করে ছবিটা তৈরি করতে গিয়ে কিছু জিনিস এডিট করতেই ভুলে গিয়েছিলেন৷ এই যেমন ‘৪৪০ ভোল্ট’ গানটা এক্কেবারে বেখাপ্পা৷ সলমন-অনুষ্কা প্রেম পর্ব বা প্রো টেক-ডাউনে একের পর এক লড়াই এত বিস্তারিত না দেখালেও চলত৷ তবে গ্রামের রাস্তাঘাট, মানুষের কথা বার্তা, কুস্তিগিরদের রোজনামচা যেন দর্শকদের হাত ধরে হরিয়ানাতেই পৌঁছে দেয়৷

অন্তত এটুকু বলা যায়, যে সলমনের বিগ বাজেটের ছবি আপনাকে হতাশ করবে না৷ কারণ মাটির কাছাকাছি থাকা ভারতীয়দের দেশি লস্যি বেশ প্রিয়৷ উৎসবের আবহে সেই স্বাদই দেবে ‘সুলতান’৷ ছবির দু’দিনের সাফল্য দেখে মুগ্ধ প্রযোজক আদিত্য চোপড়া সুলতানের সিক্যুয়েল বানানোর চিন্তা ভাবনাও শুরু করে দিলেন৷

…………………………………………………………………………………………

অভিনয়- সলমন খান, অনুষ্কা শর্মা, রণদীপ হুডা প্রমুখ৷ 

পরিচালনা – আলি আব্বাস জাফর৷

প্রযোজনা- যশ রাজ ফিল্মস৷ 

রেটিং: ৩.৫/৫

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ