Advertisement
Advertisement

Breaking News

Hilsa

ভরা বর্ষায় অমিল ইলিশ, কেন কমছে জোগান? জেনে নিন আসল কারণ

সাগর থেকে নদীতে ইলিশ ঢোকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কীসের জানেন?

Here are important reason to not getting Hilsa in rainy season । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:August 23, 2021 4:21 pm
  • Updated:August 27, 2021 12:30 pm

ইলিশের নাম শুনলেই মাছে-ভাতে বাঙালির জিভে জল। তবে মনমতো ইলিশ মেলাই যেন দুষ্কর। ইলিশরা সব গেল কোথায়? কী কারণে কমছে ইলিশ? জানালেন ইলিশ ও মৎস্য গবেষক অধ্যাপক অসীম কুমার নাথ
হ্যামিল্টন সাহেব কি ইলিশ (Hilsa) খুব ভালবাসতেন? মাছ খেতেন খুব? তিনিই তো ১৮২২ সালে গঙ্গানদীতে কাজ করে ২৭২ টি প্রজাতির মাছের সন্ধান দিয়েছিলেন। তাতে ইলিশও ছিল। সেই সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ ভাগীরথী-হুগলি নদীতে পাওয়া যেত, আজ তা গল্প। শুধুই কি ইলিশ? নদীর রুই, কাতলা, মৃগেলরা কোথায় গেল?

Ruhi-Fish
রুই মাছ

এখন এই এস্চুয়ারিতে খরশুলা, বেলে, গুলে, রিঠা, বাচা, আড়দের রাজত্ব, যারা অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র দিয়েও প্রশ্বাস নেয়। উল্লেখ্য যে, ধরা পড়া অধিকাংশ মাছেরই আকৃতি ছোট, অর্থাৎ যতটা বড় হতে পারে সেই সুযোগ তাদের নেই। কারণ নদীতে ব্যবহৃত জালের ফাঁস এক করেরও কম। এরকম হল কেন? ইলিশ বেশি পাওয়া যায় বাংলাদেশের মেঘনা-পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র এস্চুয়ারিতে এবং পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী, হুগলি এস্চুয়ারিতে। তারা সব গেল কোথায়?

Advertisement

মাঝে হুগলি নদীতে জলস্রোত কমে যাওয়ায় ১৯৭৫ সালে তৈরি হল ফরাক্কা ব্যারেজ। একইভাবে চাষের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দামোদর নদীকে আটকে তৈরি করা হয়েছে মাইথন, পাঞ্চেত। সাময়িক সুবিধা পেলেও বাঁধ পরবর্তী সময়ে পলি পড়ে নদীর খাতকে অগভীর করেছে। বাঁধের সামনের দিকে নদীখাত আজ প্রায় স্রোতহীন। প্রতি বর্ষায় তীব্র গতিতে নেমে আসা জল নদীর খাত গভীর করে নদীবক্ষে জমে থাকা পলিকে ঠেলে নামায় সমুদ্র সংলগ্ন মোহানায়, যা জন্ম দেয় মাছের খাদ্য প্ল্যাঙ্কটনের। কিন্তু বাঁধ দেওয়ায় নদীর এই প্রবাহ আজ প্রায় বিলীন।

Advertisement
Fishing
মাছ ধরায় ব্যস্ত মৎস্যজীবীরা

জোয়ারের সময় সাগরের জল নদীতে যতদূর পর্যন্ত যায় এবং ভাটায় ফিরে আসে, মানে নদীতট উন্মুক্ত হয়, সেই অঞ্চলকে এস্চুয়ারি বলা হয়। ভাগীরথী হুগলি (সঙ্গে রূপনারায়ণ) আগে অনেক বিস্তৃত ছিল। বাংলাদেশের মেঘনা-পদ্মা- ব্রহ্মপুত্র এস্চুয়ারিও অনেক দীর্ঘ ছিল। উপরের দিকে এই এস্চুয়ারি ছিল মিঠে জলের। দিনকে দিন নাব্যতা কমে এই এস্চুয়ারি ছোট হয়ে আসছে। সাগর থেকে নদীতে ইলিশ ঢোকার জন্য জোয়ারের জলের চাপ খুব জরুরি।

[আরও পড়ুন: Agriculture News: রাস্তার ধারে ফল গাছ থাকার প্রয়োজনীয়তা কী? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের মত]

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। পাকিস্তানের সিন্ধু নদীতে ইলিশের উৎপত্তি। সিন্ধুপ্রদেশের দেবতা ঝুলেলালের বাহন ইলিশ। সর্বাপেক্ষা বেশি ইলিশ পাওয়া যায় বাংলাদেশে(৮৬.৭%)। তারপর ক্রমে ভারত(৮%), মায়ানমার (৪%), ইরান(১.১%). ইরাক(০.২%), পাকিস্তান(০.১%), কুয়েত (০.০৩%)। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে জুলাই থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে সাগর থেকে মোহানা হয়ে ইলিশ নদীতে (গঙ্গায়) ঢোকে। মিষ্টি জলে ডিম ছেড়ে সমুদ্রে ফিরে যায় অর্থাৎ প্রজনন ও স্পনিংয়ের জন্য।

Hilsa
পাকিস্তানের সিন্ধু নদীতে ইলিশের উৎপত্তি

ফিরে যাওয়ার পথে মোহনার কাছে ফের জালে ধরা পড়ার জন্য ইলিশের একটা অংশ গঙ্গারই বিভিন্ন জায়গায় থেকে যায়। এদেরই আমরা অসময়ে পাই। এরাই ইলিশের রেসিডেন্সিয়াল পপুলেশন। বৃষ্টির পরিমাণ ভাল হলে সাগর ও নদীর সংযোগস্থলে নোনা ভাব কমে, যা সমুদ্র থেকে ইলিশকে নদীতে আকর্ষণ করে। নদীর মিষ্টি জল ঢুকে ইলিশের গোনাডাল হাইড্রেশেন হয়। এছাড়া ফেব্রুয়ারি ও মার্চেও এদের মাইগ্রেশন দেখা যায়। ডিম ফোটার পর ৭০ থেকে ১১০ মিমি বা ওজনে প্রায় ৬০ গ্রাম হলে এরা নিচে উপকূলের দিকে নেমে যায়। আসলে এদের শরীরে তখন লবণের দরকার হয়।

কিন্তু নদীতে প্রাপ্ত ইলিশের পরিমাণ? বাংলাদেশে নদীতে উৎপাদন বর্ধিষ্ণু। কিন্তু আমাদের ভাগীরথী-হুগলি-রূপনারায়ণে এর প্রাপ্তি ক্ষয়িষ্ণু। ভাগীরথীর নিশ্চিন্তাপুর (কাকদ্বীপ থেকে ১০ কিলোমিটার উপরে) ডায়মন্ড হারবারে ইলিশের প্রাপ্তি বেশি গোদাখালি বা বলাগড় অঞ্চলের তুলনায়। ভাগীরথী-হুগলি এস্চুয়ারির মুখ বেশ বড়। কিন্তু এই জায়গায় জলের চাপ অনেক বেশি। নদীতে মিষ্টি জলের প্রবাহ কমে যাওয়া সাগর থেকে নদীতে ইলিশ ঢোকার প্রতিবন্ধক।

Hilsa
নদীতে মিষ্টি জলের প্রবাহ কমে যাওয়া সাগর থেকে নদীতে ইলিশ ঢোকার প্রতিবন্ধক

অর্থাৎ বৃষ্টির পরিমাণ ভাল হলে সমুদ্র থেকে এস্চুয়ারির মুখের দিকে ইলিশ আসার পরিমাণ বাড়বে, যা আমরা সামুদ্রিক ইলিশের আহরণের পরিমাণ দেখেই বুঝতে পারি। কিন্তু এই বৃষ্টিপাতের সঙ্গে নদীর ভিতরে প্রাপ্ত ইলিশের কোনও সম্পর্ক নেই। সাগর বা হুগলি এস্চুয়ারি, দু’জায়গাতেই ইলিশ ধরার পরিমাণ বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে বেশি। কিন্তু উল্লেখ্য যে, ধরা পড়া ইলিশের ওজন ১০০ থেকে ৩০০ গ্রাম।

[আরও পড়ুন: করোনা কালে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা, Tulsi চাষে মাত্র তিন হাজার টাকা খরচেই লাভ হতে পারে ৫০ হাজার!]

অবাক হতে হয় বিধি অনুযায়ী ৯০ মিমি-র কম ফাঁসের জাল, ২৩ সেমি-র কম দৈর্ঘ্যের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হয় না। কম ফাঁসের জালে হুগলি নদীতে ঝটকা বা ইলিশ জুভেনাইল প্রায় সারা বছর ধরা হয়। প্রাপ্তির পরিমাণ ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, মে, জুন মাসে বেশি। একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে, এতই যদি করুণ দশা হয়, তবে ইলিশের প্রণোদিত প্রজনন করলেই তো হয়!

দেখা গিয়েছে, স্ট্রিপিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ডিমকে নিষিক্ত করে যে বাচ্চা জন্মায়, তার মৃত্যুহার অনেক বেশি। মিষ্টি জলের পুকুর বা নোনাজলের পুকুরে ইলিশের বৃদ্ধির হার অনেক কম। সেক্ষেত্রে বলা যায়, একটা পরিণত ইলিশ নদীতে প্রায় ১০-১২ লাখ ডিম পাড়ে। তার ২০% বাঁচাতে পারলে ইলিশ‌ প্রাপ্তির জন্য আমাদের হাহাকার করতে হবে না।

Hilsa
মিষ্টি জলের পুকুর বা নোনাজলের পুকুরে ইলিশের বৃদ্ধির হার অনেক কম

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ