BREAKING NEWS

১৩ আশ্বিন  ১৪৩০  রবিবার ১ অক্টোবর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

স্পেনে জন্ম হলেও গ্রামবাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয় শাক, জেনে নিন তার সাত-সতেরো

Published by: Sayani Sen |    Posted: May 3, 2023 1:55 pm|    Updated: May 3, 2023 1:56 pm

Here are some important facts about spinach । Sangbad Pratidin

আপাত নিরীহ, নিরামিষ, তুচ্ছ এক বস্তুর আড়ালে চাপা দিয়ে রাখা দুর্মূল্য কোনও বিষয় বা বস্তুর কথা বোঝাতে বাঙালি ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’ নামক প্রবাদ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু, এই নগণ‌্য শাকপাতারও এক রাজকীয় মর্যাদা রয়েছে। শুধুমাত্র পেট ভরানোর খাদ্যদ্রব্য হিসাবে নয়, শরীরের অত্যাবশ্যক পুষ্টির জোগান সুনিশ্চিত করতে শাকপাতার জুড়ি মেলা ভার। লিখেছেন ব্রেনওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এগ্রিকালচারের সহকারী অধ্যাপক ড. সৌরভ রায়। পড়ুন প্রথম পর্ব।

বাঙালির দৈনন্দিন আহার তালিকার এক অপরিহার্য অঙ্গ হল শাক। প্রথম পাতে শাক গ্রহণ করা যেন বাঙালির এক ঐতিহ্যগত স্বভাব। যা চলে এসেছে বংশ পরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মের হাত ধরে। কিন্তু, শাক বলতে আমরা সস্তায় সুলভে অর্জন করা যায়, এমন কোনও বস্তুকেই বুঝি। শাকপাতা মানেই গরু কিংবা দীন-দুঃখী মানুষ, এর বাইরে তার আর নিজস্ব কোনও গরিমা নেই। আপাত নিরীহ, নিরামিষ, তুচ্ছ এক বস্তুর আড়ালে চাপা দিয়ে রাখা দুর্মূল্য কোনও বিষয় বা বস্তুর কথা বোঝাতে বাঙালি “শাক দিয়ে মাছ ঢাকা” নামক প্ৰবাদ বাক্য ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু, এই নগণ্য শাকপাতারও এক রাজকীয় মর্যাদা রয়েছে, ইতিহাস তার সাক্ষ্য প্রমাণ বহন করে চলেছে।

একাদশ শতাব্দীতে স্পেনে খাদ্যবস্তু হিসেবে জন্ম নিয়েছে শাক। তবে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে ইতালি আর ফ্রান্স। আর ইহুদিরা তার নানারকম রেসিপির উদ্ভাবন করেছে।শাক আসলে ছিল বিত্তশালী মানুষের খাদ্য, আর তাইতো পশ্চিমের দেশ গুলিতে স্যুপের বাটিতে শাক পাতার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র পপাই দ্য সেলর ম্যানের কথাই ধরা যাক। মার্কিন কার্টুনিস্ট এলিজে ক্রিসলার সেগার এর সৃষ্ট এই কার্টুন চরিত্রের প্রিয় খাবার পালং শাক। এই শাকই পপাইয়ের শক্তির উৎস।

[আরও পড়ুন: ফুলচাষিদের লাভের মুখ দেখাবে জিপসোফিলার চাষ, জেনে নিন এর খুঁটিনাটি]

লিখিত ইতিহাসেরও আগে, সেই পৌরাণিক কাল থেকেই ভারতীয় এক মহাদেবীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে শাক। তিনি দেবী শাকম্ভরী। মহামায়া দুর্গার এক রূপ। মূলত নিরন্ন পৃথিবীতে খাদ্য হয়ে তিনিই উৎপন্ন হয়েছিলেন। তাঁর উৎপত্তি হয়েছিল এই শাকের রূপেই। সবুজ রং তাঁর। শাক তাই বর্তমানে যতই সস্তার ঝুড়িতে ঠাঁই পাক না কেন, শাকের যতই অধঃপতন হোক না কেন, তার ঐতিহ্যবাহী অতীতটা অস্বীকারের কোনও জায়গাই নেই।

১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যে কবি তাঁর পরিচারিকার শাক সংগ্রহের বিস্তৃত বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছিলেন; “নটে রাঙ্গা তোলে শাক পালঙ্গ নালিতা, তিক্ত ফলতার শাক কলতা পলতা। সাঁজতা বনতা বন পুঁই ভদ্র পলা, হিজলি কলমী শাক জাঙ্গি ডাঁড়ি পলা। নটুয়া বেথুয়া তোলে ফিরে ক্ষেতে ক্ষেতে, মহুরী শুলকা ধন্যা ক্ষীর পাই বেতে।”কালীপুজো বা দীপাবলির ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ আশ্বিন মাসের চতুর্দশীতে (যা ভূত চতুর্দশী নামেও খ্যাত) গ্রামবাংলার গৃহস্থ বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর সঙ্গে নিয়ম রয়েছে চোদ্দো রকমের শাক খাওয়ারও।

শাকগুলি হল যথাক্রম, ওল, কেঁউ, বেতো, সর্ষে, কালকাগুলে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা এবং শুষনি। নব্য-স্মৃতিশাস্ত্রকার রঘুনন্দন এই শাক গুলোর কথা উল্লেখ করছেন।আমাদের পূর্বপুরুষরা বহু ধরনের শাক পাতা খেতেন। মা-ঠাকুমারা শাক পাতা দিয়ে নানাবিধ পদ সৃষ্টিতে মগ্ন থাকতেন। গরীব মানুষের পেট ভরানোর খাদ্যদ্রব্য হিসেবে শুধু নয়, শরীরের অত্যাবশ্যক পুষ্টির যোগান সুনিশ্চিত করতে শাকপাতার জুড়ি মেলা ভার।

[আরও পড়ুন: সবুজ পাতায় শরীর ঢাকলেন ঋতাভরী, ছবি দেখে কী বলছেন নেটিজেনরা?]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে