রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: অন্যতম অথর্কারী সবজির নাম পেঁপে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই গাছের গোড়া পচে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কখনও ভেঙে পড়ছে, আবার কখনও-বা মরে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চাষিরা ব্যাপক সমস্যায় পড়েছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে যায় মহকুমা উদ্যান পালন দপ্তর। এই দপ্তরের উদ্যোগে ‘পলিমালচিং’ পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ শুরু করা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই গাছ ভেঙে পড়া বা মরে যাওয়ার সংকট কাটিয়ে পেঁপে চাষিরা ঘুরে দাঁড়ান। ফলে বৃদ্ধি পায় উৎপাদন। কাটতে থাকে আর্থিক সমস্যা।
[দেশ-বিদেশের দু’শোর বেশি প্রজাতির জবার সংরক্ষণ কেন্দ্র বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে]
স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে কি এই পলিমালচিং পদ্ধতি? এটি কাণ্ড জাতীয় ফসল চাষের একটি কৌশল। একটু ভেঙে বললে সবাই সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। এটি হল জমি চাষের উপযোগী হওয়ার পর তার উপর লম্বা পলিথিন বিছিয়ে গোটা জমিটি ঢেকে দেওয়া হয়। তারপর যেখানে যেখানে পেঁপে গাছ লাগানো হবে সেই জায়গাগুলিতে ছিদ্র করে চারা পুঁতে দেওয়া হয়। সারিবদ্ধভাবে গাছের চারা লাগানো হয়। ফলে গাছের গোড়ায় কোনও পোকার উপদ্রব দেখা দেবে না। এমনকী, গাছের গোড়ায় জল জমবে না। ফলে গোড়া পচবে না বা আগাছাও জন্মাবে না। যার জন্যই ফলন খুব ভাল হবে। বর্তমানে কালনায় এই পদ্ধতিতে চাষ খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে। এই প্রথম পলিমালচিং পদ্ধতিতে এই চাষ শুরু করা হয়েছে৷ খুব শীঘ্রই ব্যাপক হারে এই পদ্ধতিতে চাষের প্রক্রিয়াটি কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে গোটা র্যাজ্যের প্রেক্ষিতে বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গে উদ্যান জাতীয় ফসল চাষের ক্ষেত্রে পলিমালচিং-এর ব্যবহার একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু এই পদ্ধতির সাহায্যে চাষ করলে চাষিরা অনেক লাভবান হতে পারেন। এই পদ্ধতিতে পেঁপে ছাড়াও বিভিন্ন উদ্যান জাতীয় ফসল যেমন-টম্যাটো, শশা, ঝিঙে ও পটলের মতো লাভজনক সবজি চাষ করে ভাল লাভ পাওয়া যেতে পারে।
[প্রায় ১০০ প্রজাতির আম সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের]
জমি তৈরির পদ্ধতি:
যে জমিতে পলিমালচিং ব্যবহার করা হবে সেই জমিতে তিন ফুট চওড়া করে জমির দৈর্ঘ্য বরাবর লম্বা পলিথিনের বেড তৈরি করে দিতে হবে। বেডের মাটি আগাছা মুক্ত ও ঝুরঝুরে হয়ে গেলে এর উপরে ১.২ মিটার চওড়া পলিমালচিং পেপার মেলে দিতে হবে। ধারের দিকেও যথেষ্ট পরিমাণে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে । যাতে হাওয়াতে পলিথিন উড়ে না যায়। এর পর চারা বসানোর দূরত্ব অনুযায়ী পলিমালচিং এর উপরে ছিদ্র করে নিতে হবে। তার উপর চারা রোপন করতে হবে।
উপকারিতা :
মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে। বারবার জলসেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। সেচের খরচ কমে। মাটির তাপমাত্রা গাছের বৃদ্ধির উপযোগী থাকে। গাছের গোড়ায় আগাছা জন্মাতে দেয় না। মাটিঘটিত রোগ কম হয়। ফসল ও ফসলের রঙ ভাল হয়। ফলে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। পলিমালচিং-এর উপরের দিকটা চকচক রঙের হওয়ার ফলে পোকামাকড়ের অনেক আক্রমণ কমে যায়। অতিবৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি কম হয়। গাছের গোড়া থেকে মাটি ধুয়ে চলে যায় না। খরচও খুব একটা বেশি নয়। সামান্য পরিমাণ টাকা খরচ করে পাতলা পলিথিন কিনে জমিতে পাতলেই পাওয়া যাবে উচ্চফলন।