সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ধোঁয়া ওঠা ভাতে জঙ্গলমহলের ‘মানভূম ঘি’র সুবাস ছড়াচ্ছে বাংলায়। ময়রাদের পরামর্শ নিয়ে একেবারে মাটির গন্ধে প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের এই খাঁটি ঘি এল বাজারে। রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের আওতায় থাকা পুরুলিয়ার মানভূম কো–অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেডের এই দুগ্ধজাত দ্রব্য টেক্কা দিচ্ছে বাজারে থাকা বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির ঘি-কে। জঙ্গলমহলের এই জেলার বিভিন্ন গ্রামের মহিলা কৃষক দ্বারা পরিচালিত সমিতিগুলি থেকে তাদের গরুর দুধ সংগ্রহ করে কৃত্রিম রং ও গন্ধ বর্জিত এই খাঁটি ঘি তৈরি করছে রাজ্য সরকারের ওই সমবায়।
পুরুলিয়া থেকে উৎপাদিত ওই ঘি’র ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে এই এলাকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘মানভূম ঘি’। অতীতে এই জেলা বিহারে থাকার সময় এই এলাকা ‘মানভূম’ নামে পরিচিত ছিল। সেই সাবেক মানভূমকে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজে লাগিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করছে সরকারের ওই সমবায়। ইতিমধ্যেই এই সমবায়ের ‘মিষ্টি জঙ্গলমহল’ সাড়া ফেলেছে রাজ্যে। এই মিষ্টি যেমন এই জেলা ছাড়িয়ে পড়শি জেলা-সহ মিষ্টি উৎসবে জায়গা পায় তেমনই একেবারে মাটির ছোঁওয়ায় তৈরি এই ‘মানভূম ঘি’–র ঘ্রাণে বাংলা সুবাসিত হবেই দাবি ওই সরকারি সমবায়ের।
এই মিল্ক প্রোডিউসার্স ইউনিয়ন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নির্মাল্যরঞ্জন সরকার বলেন, “জঙ্গলমহল মিষ্টির পর এই ‘মানভূম ঘি’ উৎপাদন আমাদের কাছে বড় সাফল্য। একেবারে পরিবেশবান্ধব এই খাঁটি ঘি শুধু জঙ্গলমহল-সহ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা গুলিতে নয়, ধীরে ধীরে সমগ্র রাজ্যেই পুজোর মধ্যে বাজার ধরার চেষ্টা করছি। তারপর আমরা দই ও পনিরেরও ব্র্যান্ডিং করব।” আপাতত একশো ও দুশো গ্রামের ঘি বোতলবন্দি করে বিক্রি চলছে। একশো গ্রামের দাম রাখা হয়েছে ৯৯ টাকা। দুশো গ্রামের দাম ১৮০ টাকা।
এই জেলার মহিলা কৃষক পরিচালিত ২৯টি সোসাইটির প্রাণিপালন করা গরুর দুধ সংগ্রহ করা হয়। ওই সমিতি নিজেরাই ‘ন্যাশনাল ডেয়ারি প্ল্যান বোর্ড’–এর সহায়তায় সবুজ ঘাস খাওয়া গরুর দুধের ফ্যাট, সলিড নট ফ্যাট পরীক্ষা করে হুড়ার শ্যামপুরে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে নিয়ে আসে। সেখানে দুধ ঠান্ডা হওয়ার পর শহরের উপকন্ঠে ওই সোসাইটির বেলগুমা ডেয়ারি প্ল্যান্টে যায়। সেখানে ময়রাদের পরামর্শমতো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রচালিত পদ্ধতিতে দুধের থেকে মাখন পৃথক করে তা দিয়ে এই ঘি তৈরি হচ্ছে। সেখানেই হচ্ছে প্যাকেজিং।
ইতিমধ্যেই এই জেলার ‘মিষ্টি জঙ্গলমহল’ কাউন্টার ছাড়া একাধিক জেলার ‘সুফলা’ বিপনিতেও এই ‘মানভূম ঘি’র সুবাস ছড়াচ্ছে। ওই সমবায় জানিয়েছে, এই ঘি বিক্রি করার জন্য বেকার যুবক–যুবতীর পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকেও উপযুক্ত মার্জিন রেখে তাদের স্বনির্ভরতা ও ব্যবসার পথ খুলে দেওয়া হয়েছে।
ছবি: অমিত সিং দেও