Advertisement
Advertisement
Fish

মাছশূন্য জলাশয়, অস্তিত্ব সংকটে সরপুঁটি-বোরলি-খলিসা

দূষণে বাধা পাচ্ছে মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি।

Many species of fish is getting extinct in West Bengal । Sangbad Pratidin

অস্তিত্ব সংকটে সরপুঁটি। ফাইল ছবি

Published by: Sayani Sen
  • Posted:January 10, 2024 9:09 pm
  • Updated:January 10, 2024 9:09 pm

বর্তমানে কিছু লোভী মানুষের জন্য প্রায় সব নদীই মাছ-শূন্য হতে চলেছে। খাল, বিল জলাশয়ের মাছও বিপদের মুখে। হারাতে বসেছে উল্কো, চ্যাং, চেলা, পুঁটি, সরপুঁটি, মৌরলা, চুনো, বাটা, বেলে, শোল, ল্যাঠা, পিয়ালি, কুচো চিংড়ি, বান, বউ, বোয়াল, বোরলি, কুঁচে, ছোট পাঁকাল, ন্যাদোস, খলিসার মতো মাছও বিলুপ্তির পথ ধরেছে। লিখেছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের গবেষক অন্তরা মহাপাত্র ও বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বরিষ্ঠ গবেষক ড. পরিতোষ বিশ্বাস।

মৎস্য ধরিব, খাইব সুখে
নদীর ধারের মৎস্যজীবীরা এক সময় বাপ-ঠাকুর্দার মুখে এই কথা শুনতেন। কিন্তু এই প্রবচন এখন আর চলছে না। নদীতে মাছ না পাওয়াতে মৎস্যজীবীরা বাধ্য হচ্ছেন অন্য পেশায় যেতে। কেউ বা দিনমজুর, কেউ বা শ্রমিক। কেউ কেউ অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন কাজের খোঁজে, পেটের দায়ে। পরিযায়ী শ্রমিকের দলে নাম লেখাচ্ছেন। অনিশ্চিত জীবন। নদীর মাছ ধরলে ট্যাক্স দিতে হবে।

Advertisement

ব্রিটিশ সরকার এই আইন চালু করেছিল। তখনকার কলকাতা অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা বিপদে পড়ে রানী রাসমণির শরণাপন্ন হন। তিনি মোটা টাকা দিয়ে গঙ্গা নদীর সব মাছ ধরার অধিকার নেন। দলিলে লিখে নেন, তাঁর মাছ চাষে কেউ যেন অসুবিধার সৃষ্টি না করে। তারপর তিনি লোহার শিকল গঙ্গার উপর বেঁধে দেন। বৃটিশ সরকারের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেন। কারণ, তাঁর মাছ চাষে ক্ষতি হচ্ছে। কূটনৈতিক চালে বৃটিশ সরকার বিপদে পড়ে। তখন বাধ্য হয়ে রানী রাসমনির শর্তে রাজি হয়ে শুধু গঙ্গা নয়, ভারতবর্ষের সব নদী থেকে মাছ ধরার উপর ট্যাক্স নেওয়া বন্ধ করে দেয়।। সেই আইন এখনও চলছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: জিওল মাছে বাজিমাত, কোটিপতি হতে এই পদ্ধতিতেই করুন চাষ]

বর্তমানে কিছু লোভী মানুষের জন্য প্রায় সব নদীই মাছ-শূন্য হতে চলেছে। যেমন- ইছামতী, সোনাই, পিয়ালী, কাটাখালি, সরস্বতী, যমুনা, পদ্মা, বিদ্যাধরী, ওয়ালি, কটকুন্তি, আত্রেয়ী, ব্রাহ্মণী, পুনর্ভবা, টাংগন, তিস্তা, দরিয়া, সেনজাজন, রায়ডাকি, ধারিস, দৌলা, তুরতুরী, সিনাই, কাঁসাই, ভৈরব, জলঙ্গী, দামোদর, অজয়, দ্বারকেশ্বর, প্রভৃতি। মৎস্যজীবীরা আবার বিপদের সামনে। জীবিকায় টান পড়েছে। বাঙালীর পাতে আজ মাছ বাড়ন্ত হতে বসেছে। অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরশীল। রাজ্যের কষ্টের আয় করা টাকা, অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। খুবই দুঃখের কথা!

নদীর হারানো মাছ

সুস্বাদু ইলিশ মাছ সহ আরও অনেক মাছ। যেমনঃ উল্কো, চ্যাং, চেলা, পুঁটি, সরপুঁটি, পেট কাটা লাল পুঁটি, মুখ পোড়া পুঁটি, মৌরলা, চুনো, বাটা, বেলে, কুল্পী ট্যাংরা, কুচো ট্যাংরা, বড় ট্যাংরা, রায়ঘর, শোল, ল্যাঠা, পিয়ালী, হন্যে চিংড়ি, মোচা চিংড়ি, চামটে চিংড়ি, কুচো চিংড়ি, বান, বউ, বোয়াল, বোরলি, কুঁচে, ছোট পাঁকাল, বড় পাঁকাল, বাছা, ডারাংগি, খোকা, কই, ন্যাদোস, খলিসা, মাগুর, সিঙ্গি, লয়টা, ভোলা বাওয়ালী, মহাশোল, পাথরঘরিয়া, কালবোম, কাঁসকেল, তাড়ুই, চিতল, পুলা, বাঘের, পীটকাটা, মৃগেল, রুই, কাৎলা, গুলে, দাঁড়কেক, ত্রিচোখা, তোপসে, খয়রা, ফ্যাঁসা, কাঁচকি, ইত্যাদি।
মাছের ক্ষতি কীভাবে?
১) বিষ দিয়ে মাছ ধরা: বিষ প্রয়োগে মাছ ধরলে তা মাছের যেমন ক্ষতি করে তেমনই মানুষের জন্যেএবং পরিবেশের পক্ষেও ক্ষতিকারক।
(২) বিষ্ফোরক ফাটিয়ে মাছ ধরা: উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা বা ডিনামাইট জলে ফটিয়ে মাছ ধরার ফলে এই বিস্ফোরণে মাছের পটকা ফেটে গিয়ে মাছ মরে যায় এবং জলের উপর ভেসে উঠে।
(৩) ঘন-জালে মাছ ধরা: ঘন বা সূক্ষ্ম ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরলে ছোট-বড় সব মাছ ধরা পড়ে। কেউ বাদ যায় না। মাছেরা সবংশে মারা পড়ে। বংশে বাতি দিতে কেউ থাকে না।
(৪) সেচে মাছ ধরা: সেচ দিলে পুকুরের জল শুকিয়ে যায়। কোনও মাছের পক্ষে কাদায় লুকিয়ে থাকা সম্ভব হয় না। পুকুর মাছ-শূন্য হয়ে যায়। পরবর্তী বছরে মাছ আর জন্মায় না।
(৫) জলের দূষণ: শহর বা কারখানার বর্জ্য-দূষিত পদার্থ নদীতে পড়ার ফলে জল দূষিত হয়ে যায়। ফলে, মাছ আর জন্মাতে পারছে না।
(৬) নদীর বুকে নির্মাণ: রাস্তা বা রেল লাইনের জন্য নদীর বুকে নির্মাণ হচ্ছে। কংক্রিট বা অন্যান্য জিনিস নদীতে জমা হচ্ছে। মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধা পাচ্ছে। নদী মাছ শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
(৭) চাষের কীটনাশক: চাষের জমিতে কীটনাশক বা আগাছানাশক প্রয়োগ করলে মাটির জলে ধুয়ে ওই কীটনাশক নদীতে বা জলাশয়ে এসে জমা হয়। মাছের ক্ষতি হয়। নদী বা জলাশয়গুলি মাছ- শূন্য হয়ে যায়।
(৮) নদী-চুরির সমস্যা: লোভী মানুষ আবর্জনা, মাটি, বালি ফেলে ডোবা, পুকুর, খাল, নদী সব ভরাট করে ঘর-বাড়ি করছে। জলের এলাকা কমে যাচ্ছে। নদী ও জলাশয় গুলি মৎস্য-বিহীন হয়ে যাচ্ছে। অনেক নদী আজ অবলুপ্তির পথে। যেমন: আদি গঙ্গণ, ইছামতী, সোনাই, পিয়ালী, কাটাখালি, সরস্বতী, যমুনা, পদ্মা, বিদ্যাধরী, ওয়ালি, কটকুন্তি, ইত্যাদি।
(৯) রোগ সমস্যা: খাল, বিল, পুকুর বা নদীতে মাছেরা স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না। ফলে মাছেরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মাছ মরে যাচ্ছে। আমরা মাছ পাচ্ছি না।
সমাধান সূত্র
১) অজ্ঞ মৎস্যজীবীদের বোঝানো।
২) নিয়ম পালনকারীদের উৎসাহ দেওয়া ও পুরস্কৃত করা।
৩) নদীর জল দূষণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
৪) অবৈধভাবে মাছ ধরা, বিষ প্রয়োগ, বিষ্ফোরক, সেচ, জল দূষণ, ঘন জাল ব্যবহার বন্ধ করা।
৫) নিয়মভঙ্গকারীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া।
৬) নদী-খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে মাছের বীজ পোনা ও শিশু মাছ ছাড়তে হবে। যাতে নতুন প্রজন্মের নতুন মাছ আবার জন্মায়।

[আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক ‘বঞ্চনা’, গ্ল্যাডিওলাস ফুল চাষে মুখ ফেরাচ্ছেন কৃষকরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ