সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নাগরিকত্ব (সংশোধিত) বিল পাশ হওয়ার পর ১০ দিন কেটে গিয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আন্দোলনের ঝাঁজ। আন্দোলনকারী-পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে উত্তাল দেশের একাধিক রাজ্য। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের। গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ১৫ জন প্রতিবাদী প্রাণ হারিয়েছেন। জখম বহু। সবমিলিয়ে CAA বিরোধী আন্দোলনের জেরে গোটা দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২২। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের অভিযোগ, বহিরাগতদের মদতেই অশান্তি ছড়াচ্ছে। এদিকে রাজ্যে শান্তিরক্ষার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর কথায়, “কোনও পরিস্থিতিতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিৎ নয়।”
গত ৪৮ ঘণ্টায় রণক্ষেত্র উত্তরপ্রদেশে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এদের মধ্যে শুধু শুক্রবারই মারা গিয়েছেন ১৪ জন। যদিও পুলিশ সূত্রে দাবি এখনও পর্যন্ত ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। সূত্রের খবর, অশান্ত মীরাটের মেডিক্যাল কলেজে মারা গিয়েছেন চারজন। লখনউয়ে দুজন ও বিজনৌর দুজন প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ফিরোজাবাদ, সম্বল, গোরক্ষপুর, রামনগর-সহ অন্যান্য এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। অভিযোগ, মৃত ১০ জনের দেহে বুলেটের ক্ষত রয়েছে। যদিও যোগী প্রশাসনের পুলিশের দাবি, তাঁরা নাকি গুলি চালায়নি।
[আরও পড়ুন : বিক্ষোভের জের, এনআরসি চালু করতে নারাজ খোদ বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী!]
এদিকে রণক্ষে্ত্র উত্তরপ্রদেশে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দুই পুলিশকর্মীও। জখম বহু প্রতিবাদী। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুধুমাত্র মেরঠেই ৪০০ জনকে আটক করা হয়েছে। ১৫০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২১ জেলায় বন্ধ ইন্টারনেট। বহু এলাকায় বন্ধ ব্রডব্যান্ড পরিষেবাও। বন্ধ স্কুল-কলেজ। শনিবার সকাল থেকেই গোটা রাজ্যের পরিস্থিতি থমথমে। চলছে পুলিশি টহলদারি। তারপরেও একাধিক এলাকায় নতুন করে অশান্তি ছড়ানোর খবর সামনে এসেছে। শনিবার সকালে রামপুরের ইদগা এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ার খবর সামনে এসেছে। তাঁরা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলের চেষ্টা করতেই পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গাড়ি। অশান্তিতে লাগাম পড়াতে শহরজুড়ে ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। এদিকে মুজফফরপুরের ৪১টি দোকান সিল করে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি, এই দোকানগুলির ভিতর থেকেই অশান্তি ছড়ানো হচ্ছিল।
[আরও পড়ুন :CAA বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল দিল্লি, আটক ভীম সেনা প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ]
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সংসদে ওঠার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরই সেই বিল আইনে পরিণত হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতিবাদের ঝাঁজও। পড়ুয়া থেকে বর্ষীয়ান নাগরিক, খেটে খাওয়া মজদুর থেকে রূপালি পর্দার তারকা-একসঙ্গে সকলে পথে নেমেছেন। বির্তকিত আইন প্রত্যাহারে দাবিতে গলা মিলিয়েছেন সকলেই। তবে সেই প্রতিবাদী স্বর রোধ করতে পুলিশ-প্রশাসনও আগ্রাসী হয়েছে বলে অভিযোগ। আন্দোলনে নেমে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন ছয়জন। ম্যাঙ্গালুরুতে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন দুজন। যা দেখে বলাই যায়, CAA বিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ গোটা দেশ।