ছবি: প্রতীকী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কালো, কুৎসিত মেয়েও ছাদনাতলায় যেতে পারে, যদি মেলে পণ! খাস টেক সিটিতেই শেখানো হচ্ছে এ কথা। বেঙ্গালুরুর সেন্ট জোসেফ কলেজের সমাজবিদ্যার পাঠ্যবইয়ে রীতিমতো ধরে ধরে বোঝানো হয়েছে পণপ্রথার সুফল। কীভাবে এই প্রথা ‘কালো’ অর্থাৎ ‘কুৎসিত’ মেয়েদেরও বিয়ের পিঁডি়তে বসিয়ে তাঁদের জীবন উদ্ধার করে দেয়, তাঁদের সারাজীবনের অসম্মান আর অবহেলায় প্রলেপ লাগিয়ে নতুন পরিবারে চিলতে খানেক হলেও গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করে, তারই অনুপম বর্ণনা রয়েছে ওই বইয়ের ছত্রে ছত্রে। দেশ থেকে যে পণ প্রথাকে আইনবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় আগে, এখনও যা নিতে গিয়ে ধরা পড়লে বর বাবাজির বাসরঘরের বদলে শ্রীঘরে রাত কাটানোর ‘চান্স’ ষোলো আনা, তার বিরুদ্ধে ‘হাল্লা’ বলার বদলে ঢাক পিটিয়ে তারই জয়জয়কার করা হয়েছে বইটি জুড়ে।
তা, জ্ঞানের কী কী মুক্তো ছড়ানো রয়েছে অমূল্য ওই গ্রন্থে?
পটলচেরা আয়ত দু’টি চোখ, ক্ষীণ কটিদেশ, কালো মেঘের মতো ঘন কেশদাম। না, বিবাহযোগ্যা পাত্রীর এ সব কিছু না থাকলেও খুব একটা সমস্যা নেই। কিন্তু দুধসাদা গায়ের রং? সেটি থাকতেই হবে। কারণ তা না হলে যে মেয়ে কালো। মানে, অসুন্দর। কুৎসিত। আর কুৎসিত কৃষ্ণকলিদের জীবনের গতি করা থুড়ি তাঁকে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া একেবারেই সহজ কাজ নয়। সমাজবিদ্যার ওই বইতে বলা হয়েছে, কুৎসিত মেয়েদের বিয়ে হওয়া রীতিমতো দুষ্কর। একমাত্র পণ দিয়েই তা করা যেতে পারে। চমকের এতেই শেষ নয়। বইয়ে পণপ্রণার আরও কিছু ‘ইতিবাচক’ দিক তুলে ধরা হয়েছে। যেমন ধরুন, ‘হ্যান্ডসাম’ এবং চরিত্রবান সোনার টুকরো ছেলেরা না কি বিয়ে করতে তেমন আগ্রহ পান না। তাই তাঁদের সংসারী করে তুলতে পণ দেওয়া দরকার। পণ পেলে তবেই এঁরা বিয়ে করতে আগ্রহী হন। ফলে স্বনিযুক্তি বাড়ে। গরিব ঘরের মেধাবী ছেলেরা পণ হিসাবে টাকা, সোনা পেলে তবেই উচ্চশিক্ষায় যেতে পারেন। নিজেদের ভবিষ্যৎ গডে় তুলতে পারেন।
দেখুন ছবি:
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসামাত্র ছড়িয়ে পড়েছে বিতর্ক। যার মুখে পড়ে সেন্ট জোসেফ কলেজের জনসংযোগ আধিকারিক কিরণ জীবনের সাফাই, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষ কখনওই এ ধরনের মত সমর্থন করে না। বইয়ের এহেন বিষয়বস্তুর কারণ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।” প্রসঙ্গত, বেঙ্গালুরুর ঘটনা প্রথম নয়। পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিতর্ক আগেও হয়েছে। মহারাষ্ট্রের এক স্কুলে দ্বাদশের সমাজবিদ্যার বইয়ে লেখা ছিল, ‘প্রতিবন্ধী, অসুন্দর মেয়েদের বিয়ে হওয়া খুব কঠিন। এই মেয়েদের বিয়ে করতে পাত্রপক্ষ বেশি টাকা পণ চায়। মেয়েটির পরিবারকে বাধ্য হয়েই তা দিতে হয়।’ আবার, রাজস্থানে নবম শ্রেণির হিন্দি পাঠ্যবইয়ে লেখা ছিল, ‘স্ত্রীর থেকে ভাল হল গাধা। গাধাকে খাবার খাওয়ালে মুখ বুজে কাজ করে। প্রভুর অবাধ্য কখনও হয় না। কিন্তু স্ত্রী-রা তা করে না।’ এছাড়াও অন্য নানা বিষয় নিয়েও পাঠ্যবইগুলিতে অদ্ভুতুড়ে তথ্য পেশ করা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.