সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একজন মেয়ে গভীর রাতে বাড়ির বাইরে কী করছিল? গভীর রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে বারবার সেই প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্ট ফাঁসি রদের আরজি খারিজ করে দেওয়ার পর এমনই বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন নির্ভয়ার চার ধর্ষকের আইনজীবী এপি সিং। এমনই একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে নির্ভয়ার মাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সমস্ত আইনি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নির্ভয়ার চার ধর্ষকের। তখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হবে দোষীদের। তবে নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীদের ফাঁসি নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলল নাটক। বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগে দিল্লি হাই কোর্টে অক্ষয় কুমার সিং, পবন গুপ্তা ও বিনয় শর্মা ক্ষমার আরজি জানায়। রাতেই শুরু হয় শুনানি। আর গভীর রাতেই তা খারিজ করে দেয় দিল্লি হাই কোর্ট। দিল্লি হাই কোর্ট তিনজনের আরজি খারিজ করার পর পবন গুপ্তার আইনজীবী মধ্যরাতে আবেদন জানান সুপ্রিম কোর্টে। পবন ঘটনার সময় নাবালক থাকা সত্ত্বেও কেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তার ক্ষমার আরজি খারিজ করেছেন, এই দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন পবনের আইনজীবী।
[আরও পড়ুন: আস্থা ভোটের আগেই কি পদত্যাগ করছেন কমল নাথ? জল্পনা তুঙ্গে]
ইয়াকুব মেমনের ঘটনার মতোই রাত আড়াইটের সময় সেই মামলার শুনানি শুরু হয় শীর্ষ আদালতে। পবনের আইনজীবীর দাবি, ঘটনার সময় যে তাঁর মক্কেল স্কুলে পড়ত, সেই সমস্ত নথিপত্র সরকারকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারের তরফে সেইসব নথি চেপে যাওয়া হয়। সরকারের পক্ষে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। সুপ্রিম কোর্ট পবনের আইনজীবীর যুক্তি শুনতে চায়নি। শীর্ষ আদালত বলে, এই নিয়ে সব সওয়াল আগেই হয়ে গিয়েছে। স্কুলের দেওয়া শংসাপত্রের উপর বয়স ঠিক করা যায় না। সমস্ত আইনি জটিলতা মিটে যায় ফাঁসির ঘণ্টা কয়েক আগে।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে অগ্নিশর্মা হয়ে যান এপি সিং। তিনি বলেন, “পবনের মা বিশেষভাবে সক্ষম। তিনিও চাইতেন তাঁর সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে। জন্মদাত্রী মা কীভাবে নিজের সন্তানকে না দেখে থাকতে পারেন? আপনারা শুধুমাত্র একজন মায়ের কথা ভাবছেন। কখনও ভেবেছেন কেন জানতে পারলেন না রাত সাড়ে বারোটার সময় মেয়ে কোথায় ছিল? কার সঙ্গে ছিল? নির্ভয়ার মাকে কোনওদিন এই প্রশ্ন করেছেন?” এপি সিংয়ের এই দাবি ঘিরে শীর্ষ আদালত চত্বরে ওঠে তীব্র বিতর্কের ঝড়। একজন মহিলা প্রকাশ্যেই ধর্ষকদের আইনজীবীর নিন্দা করতে থাকেন। এক তরুণী কত রাত পর্যন্ত বাইরে রয়েছেন, তা দেখে চরিত্র নির্ণয় করা সম্ভব নয় বলেই পালটা দাবি তাঁর। যদিও সকলেই বলছেন, ধর্ষকদের ফাঁসিই এপি সিংয়ের বিতর্কিত মন্তব্যের যোগ্য জবাব।