সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যসভার লড়াই ছাপিয়ে গেল সাম্প্রতিক সব নির্বাচনের উত্তেজনা। গুজরাটের উত্তাপ পৌঁছল দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে রাত পর্যন্ত হত্যে দিলেন হাফ ডজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পালটা হিসাবে সেখানে দৌত্য কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতৃত্বর। দুই বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কের ভোট বাতিলের পর খেলা আরও জমে যায়। রাত আড়াইটা নাগাদ নির্বাচন কমিশন জানায় কংগ্রেস প্রার্থী আহমেদ প্যাটেল জয়ী। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহর সঙ্গে মর্যাদার লড়াইয়ে জিতে সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব জানিয়ে দেন ‘সত্যমেব জয়তে’।
এতদিন তিনি ছিলেন কংগ্রেসের অন্যতম ক্রাইসিস ম্যানেজার। সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব হিসাবে কংগ্রেসের রণকৌশল ঠিক করতেন। অন্তরালে থাকা আহমেদ প্যাটেলই এখন সিকন্দর। ম্যান অব দ্য মোমেন্ট। প্যাটেলকে হারানো মানে সোনিয়া গান্ধীর পরাজয়। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি এই কৌশলে সোনিয়ার রাজনৈতিক সচিবকে পর্যুদস্ত করতে রীতিমতো আটঘাট বেঁধেই নেমেছিলেন। পালটা হিসাবে কংগ্রেস বিধায়কদের কর্নাটকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিজেপির চাল প্রাথমিকভাবে ভোঁতা করে দেন আহমেদ। মঙ্গলবার রাজ্যসভার নির্বাচনে ছিল চূড়ান্ত নাটক। বিজেপির প্রতি আনুগত্য বোঝাতে দুই বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়ক নিজেদের ব্যালট পেপার দেখিয়ে দেন। এতেই বাধে গোল। সন্ধে ৬টার সময় ফল ঘোষণার কথা থাকলেও দুই বিধায়কের এই কাণ্ড নিয়ে হল্লা বাধায় কংগ্রেস। দুই বিধায়কের ভোট বাতিলের দাবি জানায় তারা। রিটার্নিং অফিসার সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে দিল্লির শরণাপন্ন হয়। এরপর রাজধানীতে জরুরি বৈঠকে বসে পড়ে কমিশনের ফুল টিম। কমিশনের ওপর চাপ বাড়াতে দফায় দফায় সেখানে হাজির হয় কংগ্রেস ও বিজেপি নেতৃত্ব। অরুণ জেটলির নেতৃত্ব হাফডজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দ্রুত ফলপ্রকাশের দাবিতে কমিশনে দরবার করে। দুই দল তিন দফায় কমিশনে হাজির হয়। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ দুই বিক্ষুব্ধ বিধায়কের ভোট বাতিলের কথা ঘোষণা করে কমিশন। এরপরই খেলার মোড় ঘুরে যায়। প্যাটেলের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪৫টি ভোট। দুটি ভোট বাতিলের পর অঙ্ক বদলে যায়। কমে যায় ম্যাজিক ফিগার। শেষ পর্যন্ত রাত আড়াইটে নাগাদ কমিশন জানিয়ে দেয় ৪৪টি ভোট পেয়ে প্যাটেল জয়ী হয়েছেন।
ফল ঘোষণার আগে ছিল আর একপ্রস্থ নাটক। একমাত্র জেডিইউ বিধায়ক দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্যাটেলকে ভোট দেন। দুই কংগ্রেস বিধায়কের ক্রস ভোটিংয়ের পাশাপাশি এক বিজেপি বিধায়কও দলের হুইপ না মেনে কংগ্রেসকে সমর্থন করেন। রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে কঠিন লড়াই জিতে প্যাটেল এই জয় তাঁর নয়। অর্থ, পেশিশক্তি এবং রাষ্ট্রীয় মেশিনারির পরাজয়। মর্যাদার লড়াইয়ে মোদি-শাহ জুটির অস্ত্র ভোঁতা করে প্যাটেল বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁকে ক্রাইসিস ম্যানেজার বলা হয়। কংগ্রেসের একাংশ বলছে প্যাটেলের মতো সক্রিয়তা যদি আরও অনেকের থাকত তাহলে শতাব্দীপ্রাচীন দলকে হয়তো এতটা পিছু হটতে হত না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.