সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাথায় বাঁধা গেরুয়া ফেট্টি৷ দু’হাত ছড়ানো দু’দিকে৷ একহাতে ধরা লোহার রড৷ গুজরাত দাঙ্গার সময় এ ছবিই হয়ে উঠেছিল দেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির প্রতীক৷ আর এ ছবি যার, সেই অশোক পারমার হয়ে উঠেছিলেন দাঙ্গার মুখ৷ কিন্তু কী আশ্চর্য! তিনিই এখন দলিত-মুসলিম একতার পক্ষে সওয়াল করছেন৷ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি৷
কিন্তু এই ভোলবদল? তাহলে ফিরে যেতে হবে তাঁর দাঙ্গার মুখ হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীতে৷ তখন সদ্য প্রেমিকাকে হারিয়েছেন অশোক৷ এদিকে শহরের যা পরিস্থিতি, তাঁর কাজের যা ক্ষতি হচ্ছে, মানসিক অবস্থা যেরকম, তাতে তিনি রীতিমতো বিরক্ত ছিলেন৷ চোখের সামনে দেখছেন এক ধর্মের মানুষ আর এক ধর্মের মানুষকে খুন করছে৷ এমন সময় এক ফটোগ্রাফার তাঁকে বলেন পোজ দিতে৷ তিনিও দাঙ্গাকারীদের মতো করে পোজ দেন৷ আর সেই ছবিই প্রচারিত হতে হতে গুজরাট দাঙ্গার মুখ হয়ে ওঠে৷ আর তার জেরে তাঁকে কিছুদিন জেলেও কাটাতে হয়৷ অথচ তিনি দাঙ্গাকারী ছিলেনই না৷ আজও তাঁর প্রশ্ন, দাঙ্গাকারী হলে দলবল নেই কেন ছবিতে? কেন গোটা ছবিতে তিনি একাই দাঁড়িয়ে আছেন! তাঁকে যে পোজ দিতে বলা হয়েছে এবং সে ছবির অপব্যবহার করা হয়েছে আজও সে কথাই বলে চলেছেন তিনি৷
তবে শুধু এ কথাই নয়, আজ তিনি দলিত ও মুসলিমদের একতার কথাও বলছেন৷ পেশায় তিনি মুচি৷ আজও সেই পেশাতেই আছেন৷ অশোক মুচি নামেই তিনি সমাধিক পরিচিত এলাকায়৷ সেদিন আবেগের বশে পোজ দিয়ে ফেললেও, আজ তিনি মনে করেন, কোনও ধর্মীয় মৌলবাদই কাঙ্খিত নয়৷ বরং দলিত ও মুসলিমরা যেভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছে এ দেশে, সেখানে তাদের সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করার সময় এসেছে৷ একদিন সঙ্ঘ পরিবার যার ছবিকে মুখপত্র করে তুলেছিল আজ তাঁর গলাতেই শোনা যায় মোদি সরকারের সমালোচনা৷ নির্দ্বিধায় তিনি জানান, ‘হিন্দুত্ব আবেগে কাজ হবে না দেখেই এখন উন্নয়নের ধুয়ো তোলা হচ্ছে৷ কিন্তু বহু শিক্ষিত মানুষকেও দেখি রিক্সা টেনে রুজি রুটি জোগাড় করছেন৷ এতেই বোঝা যায়, কেমন উন্নয়ন হচ্ছে৷”
চলতি কথায় বলে, ছবি কখনও মিথ্যে বলে না৷ কিন্তু কখনও ছবিও যে ভুল কথা বলে তারই যেন প্রমাণ দিলেন অশোক৷