নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: একুশে বাঙালি আবেগে ভর করে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখা বিজেপিকে বড়সড় বিড়ম্বনায় ফেললেন দলেরই সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী (Subramanian Swamy)। যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে বাংলার ভোটের আগে নানাভাবে ব্যবহার করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তাঁরই লেখা জাতীয় সঙ্গীতে বদলের দাবিতে রীতিমতো গলা ফাটালেন বিজেপি সাংসদ। স্বামীর ‘আশা’ আগামী বছর ২৩ জানুয়ারির আগেই বদলে ফেলা হবে কবিগুরুর লেখা ‘জন গণ মন’ গানটি। বিজেপি সাংসদের এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করেছে এরাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস।
PM’s acknowledgement. I hope he implements by Jan 23, 2021 pic.twitter.com/r6DOdaz9qK
— Subramanian Swamy (@Swamy39) December 12, 2020
আসলে জাতীয় সঙ্গীতে বদলের দাবিতে গত ১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লেখেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তাঁর দাবি ছিল, সিন্ধু প্রদেশ যেহেতু এখন আর ভারতের অংশ নয়, তাই জাতীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত ‘সিন্ধু’ শব্দটি ছেটে ফেলতে হবে। স্বামীর মতে, বর্তমান জাতীয় সঙ্গীতের একাধিক শব্দ অনাবশ্যক সংশয় তৈরি করছে। কাকে বা কোন জায়গাকে উদ্দেশ্য করে তা লেখা স্বাধীনতা পরবর্তী প্রেক্ষিতে তা অস্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘আসল’ ‘জন গণ মন’র পরিবর্তে বিজেপি সাংসদ ১৯৪৩-এ নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের গাওয়া ‘শুভ সুখ চ্যান’ গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করতে অনুরোধ করেছেন। এই গানটি কবিগুরুর লেখা আসল গানটির আদলে তৈরি হলেও, অনেকটাই আলাদা। এবং এটি গাইতে সময় লাগে ৫৫ সেকেন্ড।
গত ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) স্বামীর লেখা সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন। যা আবার টুইটারে ফলাও করে পোস্ট করেছেন বিজেপি সাংসদ। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, আশা করি, ২০২১-এর ২৩ জানুয়ারির আগে জাতীয় সঙ্গীত বদলে ফেলা হবে। যার তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল (TMC) সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলছেন, “এখন ওরা দাবি তুলছে, রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীত বাতিল করতে হবে। কারণ, সিন্ধু নদের উল্লেখ আছে। গানটি লেখা হয়েছিল ১৯১১ সালে। তখন দেশভাগ হয়নি। তাছাড়া ঐতিহাসিকদের মতে, ভারতীয় সমাজব্যবস্থা তো সিন্ধু সভ্যতারই অবদান। আসলে নানাভাবে বাংলার ওপর হামলা শুরু হয়েছে। জাতীয় সঙ্গীতের ওপর আক্রমণ মানে বাঙালির গৌরব ও জাতীয় চেতনার মূলে কঠোরতম আঘাত।”
যদিও রাজনৈতিক মহল মনে করছে, একুশের ভোটের আগে কবিগুরুর লেখা জাতীয় সঙ্গীতে বদল আনার ঝুঁকি বিজেপি (BJP) নেবে না। বিশেষ করে খোদ প্রধানমন্ত্রী যেখানে নিজের বিভিন্ন ভাষণ-বক্তৃতায় বারবার রবীন্দ্রনাথকে পাথেয় করছেন, বাংলার মনীষীদের বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তখন কবিগুরুর গানে হাত দেওয়া মানে অকারণ বিড়ম্বনা বাড়ানো ছাড়া কিছুই নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.