সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বছর পাঁচেক আগের কথা। রাজধানী দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ডের প্রতিবাদে মোমবাতি হাতে রাজপথে নেমেছিলেন কয়েকশো মানুষ। কিন্তু, এক ‘বাবা’কে যখন ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত, তখনই ছবিটা পালটে গেল! গত শুক্রবার ডেরা সাচা সওদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের সমর্থনে হরিয়ানা ও পাঞ্চাবে তাণ্ডব চালালেন তাঁর অনুগামীরা। প্রাণ গেল অন্তত ৩৪ জনের। পুড়ল সরকারি অফিস, দু’শোরও বেশি গাড়ি। উত্তেজনার আঁচ টের পাওয়া গেল রাজধানী দিল্লিতেও। কিন্তু কেন এমন ঘটল? গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণটাই বা কী? এই প্রশ্ন ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক। প্রশ্ন উঠছেও। বাস্তবে, পাঞ্চাব ও হরিয়ানার জাতপাতের বৈষম্যই গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের মতো ‘বাবা’দের জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
[হানিপ্রীত ম্যাসাজ না করে দিলে আমি মরে যাব, আর্তি ধর্ষক বাবার]
গুরমিত রাম রহিম সিং দাবি করেন, পাঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ গোটা উত্তর ভারতে নাকি তার অনুগামীর সংখ্যা পাঁচ কোটি। আর সে দাবি যে অমূলক নয়, গত শুক্রবারের ঘটনাই তার প্রমাণ। আর সম্পত্তি? শুধুমাত্র হরিয়ানা সরিসাতেই অন্তত কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে ডেরার। সেখানে প্রায় ৭০০ একর জমির উপর ডেরার আশ্রম। আর সেই আশ্রমে মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল, হাসপাতাল, স্কুল কী নেই! রয়েছে ডেয়ারি, সবজি ক্ষেতও! এককথায় হরিয়ানায় কার্যত একটা সমান্তরাল সাম্রাজ্য চালাতেন ধর্ষক বাবা গুরমিত রাম রহিম সিং। অনেকেই বলছেন, এসবই সম্ভব হয়েছে পাঞ্জাব, হরিয়ানার জাতপাতের বৈষম্যের কারণেই।
[জানেন, ডেরার কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কে হচ্ছেন?]
বিষয়টি ঠিক কী? মাথাপিছু আয়ের নিরিখে দেশের অন্য অনেক রাজ্যের থেকেই এগিয়ে পাঞ্চাব ও হরিয়ানা। কিন্তু, জাতিভেদের অভিশাপ থেকে মুক্ত নয় এই দুটি রাজ্য। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় জাতিগত কারণে প্রবল বৈষম্যের শিকার হতে হয় দলিতদের। অথচ পাঞ্চাবের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই দলিত সম্প্রদায়ের। যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক। আর হরিয়ানায় প্রায় ২০ শতাংশ দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। অভিযোগ, সামাজিক সম্মান কিংবা সরকারি সুযোগ-সুবিধা, সবকিছু থেকেই বঞ্চিত তাঁরা। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগান গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের মতো ভণ্ড ধর্মগুরুরা।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে জাতিগত বৈষম্য দুর করার ডাক দিয়েছিল গুরমিত। এমনকী, বাপ-ঠার্কুদার পদবি ত্যাগ করে ভক্তদের নামের পর ‘ইনসান’ বা মানুষ শব্দটি ব্যবহার করার নির্দেশ দেয় সে। এইসব পদক্ষেপের জেরেই দলিতদের কাছে কার্যত ভগবান হয়ে যায় গুরমিত। পাশাপাশি, ডেরার আশ্রম থেকে খাদ্য, রেশন, শিক্ষা, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেত দলিতরা। ভক্তদের মাদকের নেশা বর্জন করার কথাও বলত গুরমিত। এতে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার দলিত মহিলাদের আরও বেশি করে গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন। হু হু করে বাড়তে থাকে ভক্তের সংখ্যা। আর সেই ভক্তির জোর এতটাই, যে গুরমিত সিং রাম রহিমের জন্য দেশের আইন-আদালতকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানাতেও পিছুপা হন না তাঁরা।
[বন্যার জন্য দায়ী ইঁদুর, আজব সাফাই বিহারের মন্ত্রীর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.