Advertisement
Advertisement

Breaking News

চন্দ্রযান ২

১৩০ কোটি ভারতীয়র স্বপ্ন নিয়ে আজ চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি চন্দ্রযান ২-এর

স্রেফ চাঁদের মাটি পরীক্ষাই নয়, সেখানে প্রাকৃতিক স্পেস স্টেশন বানানোর লক্ষ্য রয়েছে ভারতের।

Chandrayaan-2 to be launched from Sriharikota at 2:43 pm today
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:July 22, 2019 8:26 am
  • Updated:July 22, 2019 1:24 pm

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: চন্দ্রযান ২-এর কুড়ি ঘণ্টার কাউন্টডাউন শুরু হতে তখনও ঢের দেরি। থালাইভার শহরে ফের পা রেখেছি রবিবার সকালেই। রোদ ঝলমলে হাওয়ায় তখন একবারও মনে হয়নি দুপুরের পর থেকেই ইসরোর কর্তারা এমনটা আড়ালে থাকতে শুরু করবেন। এমনটা হওয়ার কথা নয়। কারণ গতকালই চন্দ্রযানের রিহার্সাল হয়ে গিয়েছে। চেয়ারম্যান কে শিবান জানিয়েছেন, “সব ঠিক আছে। যানের ব্যবহারে কোনও অস্বাভাবিক আচরণ নেই। পৃথিবী আর চাঁদ মিলিয়ে মোট ১৫ বার পাক খেয়ে চাঁদের পিঠে নামার জন্য প্রস্তুত ভারত।”

[আরও পড়ুন:  চন্দ্রযান ২-এর নেপথ্যে দুই রকেট মানবীদের শুভেচ্ছা জানালেন অক্ষয় কুমার]

Advertisement

তবে কি টেনশন হচ্ছে? নাকি বাড়তি আত্মবিশ্বাস? আজ সোমবার ভারতীয় সময় দুপুর ২ টো ৪৩ মিনিটে শ্রীহরিকোটার মাটি ছাড়ার কথা চন্দ্রযান ২-এর। এটা তার ‘টেক টু’। ২০ ঘণ্টার কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৩ মিনিট থেকে। তার আগেই প্রাক্তন চেয়ারম্যান কে কস্তুরীরঙ্গন একগোছা শুভেচ্ছা-সহ ইসরোর রকেট উৎক্ষেপণের কিছু পুরনো ইতিহাস টেনে বার করেছেন। ইসরোর চওড়া কাঁধে হাত রেখে হিসাব কষে দেখিয়ে দিয়েছেন, এর আগে একসঙ্গে একটি রকেটে চাপিয়ে ১০৪টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের শিরোপা কিন্তু ভারতেরই হাতে। তা ছাড়া প্রথমবারের চেষ্টাতেই উড়ে গিয়ে চাঁদে জল আবিষ্কারের প্রমাণ ভারতই নিয়ে এসেছে। অনেকের মতে, এটাই চাপ বাড়িয়েছে।

Advertisement

প্রথম চন্দ্রযানের উৎক্ষেপণের আগেও এমন প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তাতে যদিও ‘মিশন অ্যাবর্ট’ করতে হয়নি। এবার পরিস্থিতি অন্য। ভাবাচ্ছে কিছু পুরনো ঘটনা। ঘুরে ফিরে আসছে আর্মস্ট্রং বা কল্পনা চাওলার স্মৃতি।

নীল আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে তার সঙ্গী বাজ অলড্রিনের তেমন বন্ধুত্ব ছিল না। ১৯৬৯-এ অ্যাপলো ১১-এ দুজনে সহযাত্রী হওয়ার অনেক আগে থেকেই একসঙ্গে কাজ করতেন দু’জনে। কিন্তু সৌহার্দে্যর বাতাবরণ থাকলেও আন্তরিকতা ছিল না। শেষে অলড্রিন যখন জানতে পারেন যে, চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখার জন্য আর্মস্ট্রংয়ের নাম চূড়ান্ত হয়েছে, তখন তো একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস-সহ একাধিক কাগজে তা নিয়ে চর্চাও হয়েছে। এই দুশ্চিন্তাই ভাবিয়েছিল নাসাকে। হয়তো মিশন সফল হবে না। দু’জনের সম্পর্ক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন আর্মস্ট্রং। প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “সব রটনা। আমাদের মধ্যে কোথাও কোনও সমস্যা নেই।” কিন্তু তার পরও দুর্ভাবনা ছিল। পরের ঘটনা তো আরও রোমহর্ষক। দীর্ঘ ১৮ বারের টালবাহানা আর যানের যান্ত্রিক ত্রুটি নাসা শুধু নয় মহাকাশচারীদেরও চিন্তার কারণ ছিল। ১৯৮১ থেকে টানা ২৭ বার মহাকাশে উড়েছে কলাম্বিয়া। তার মধ্যে একবার কল্পনা চাওলাকে নিয়েই। ২০০৩-এ অবশেষে যখন শেষবারের জন্য কল্পনা চাওলারা রওনা হলেন, তখনই নাসা জেনে গিয়েছিল কলাম্বিয়া আর ফিরবে না।

যে কোনও স্পেস সাটল পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় হাওয়ার সঙ্গে ঘর্ষণে প্রচণ্ড তাপ তৈরি হয়। সেই তাপ রোধের জন্য খুব মোটা কার্বনের পরত দেওয়া থাকে। উপরের অংশে থাকে সেই পরতেরই সাদা টাইল। নিচের অংশে থাকে কালো টাইল। আর ডানা ও নাকে থাকে আরও মোটা পরত। কলাম্বিয়া এতবার মহাকাশে যাওয়ার ফলে তার বুস্টার রকেটের অনেক প্রযুক্তিগত ত্রুটি ধরা পড়তে থাকে। কিন্তু নাসা তাতে আর গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ। সেসব কোনওমতে সারিয়ে তাড়াহুড়ো করে সাত নভোশ্চর সমেত কলাম্বিয়াকে মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়। উড়ানেই ঘটে যায় বিপত্তি। রকেটের একটি ছোট সুটকেসের মতো অংশ খুলে উড়ে এসে পড়ে কলাম্বিয়ার বাঁ দিকের ডানায়। বড় ছিদ্র হয়ে যায়। ভেঙে যায় সুরক্ষা বলয়। ফেরার সময় যেখানে পার্থিব গ্যাস ঢুকে তাপমাত্রা অত্যধিক বাড়িয়ে দেয়। যার পরিণতি মাটিতে পৌঁছনোর ২০ মিনিট আগেই বিস্ফোরণ।

এমন দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই কার্যত অভিযানে নামছে ইসরো। সমালোচকদের ভাষায় যা নিয়ে প্রায় শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে তারা। সেটা কেমন? এমনিতেই এমন ভারী স্মৃতি। তার মধ্যে প্রথম চন্দ্রযানের ১১ বছর পর এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযান। যাকে দ্রুত সফল করতে চাইছে ইসরো। তার জেরে একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই আট দিনের মাথায় নতুন করে উৎক্ষেপণের দিন ঘোষণা। সব মিলিয়ে সিভানের কপালে চিন্তার ভাঁজ আজ থাকছেই।

আরও একটা কূটনৈতিক এবং গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। তার সমাধান সূত্র এ পি জে আবদুল কালামই ভেবে রেখেছিলেন। তাঁর কল্পনা ছিল চাঁদকে অনেক কম খরচে ভারতের স্পেস স্টেশন বানাতে হবে। কারণ দুটি। প্রথমটি নিশ্চয়ই খরচে কাটছাঁট। আমেরিকা বা আর কোনও দেশের মতো ভারতের কৃত্রিম স্পেস স্টেশন নেই। তা বানানোও ব্যয়বহুল। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণায় আরও দূরে যেতে হলে চাঁদই প্রধান ভরসা। স্রেফ চাঁদের মাটি পরীক্ষাই নয়, সেখানে প্রাকৃতিক স্পেস স্টেশন বানানোর লক্ষ্য রয়েছে ভারতের। তা সম্ভব হলে অনায়াসে আমেরিকা, রাশিয়া বা চিনের মতো মহাকাশ গবেষণায় এগিয়ে থাকা দেশের সঙ্গে এক আসনে বসতে পারবে ভারত। কারণ এমন আন্তর্জাতিক মহলের অলিখিত নিয়ম হল, আগে কেউ কোনও জায়গায় পৌঁছে গেলে সেই জায়গার সত্ত্ব কিনে নেয় ওই দেশ। পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু আন্টার্কটিকার ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে। সেখানে হাতেগোনা ক’টা দেশের সঙ্গে ভারতও আগেভাগে গিয়ে গবেষণাকেন্দ্র বানিয়ে ফেলে। তার পরই সেখানে আর কারও গবেষণা কেন্দ্র বানানো বন্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে। সেই দুর্ভাবনা চাঁদে অভিযানের ক্ষেত্রেও রয়েছে ভারতের।

এত দিক বিবেচনা করে স্বাভাবিক গবেষণা করা একপ্রকার দুঃসাহসিকতা। সমালোচকদের অভিমত, ঝোঁকের মাথায় বেশি ঝুঁকি নেওয়া হয়ে যাচ্ছে না তো! তবু চেন্নাইয়ের থালাইভার বাড়ির গলির মুখে অজস্র যৌবনের ভিড়। নিরাপত্তরক্ষীরা ডাহা মিথ্যে বলে তাদের ঠেলার চেষ্টা করে। ‘রজনীকান্ত’ শুটিংয়ে মুম্বইতে। একটা নামও বলে গা গরম করা। বলে তামিল তেলুগুতে আগে ডাব হবে। বাড়ির গেটের বাইরে তাঁর নামের পাশে দাঁড় করিয়ে ঝকঝকে কটা ছবিও তুলে দেয়। তবু কে শোনে কার কথা। যৌবনের আবেগ বলে, “ওরা মিথ্যা বলার জন্যই বেতন পায়। রজিনি স্যর ইজ ইন হিজ হাউস। হি উইল ডেফিনিটলি কাম আউট টু কিপ হিজ প্রমিস অ্যান্ড মিট আস।” কিছু দূরের জে জয়ললিতা হাউসেও তখন প্রবল নজরদারি।

[আরও পড়ুন: চন্দ্রযান ২-এর নেপথ্যে দুই রকেট মানবীদের শুভেচ্ছা জানালেন অক্ষয় কুমার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ