সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কংগ্রেস (Congress) ছাড়লেন বর্ষীয়ান নেতা সুনীল জাখর (Sunil Jakhar)। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে শাস্তিমূলক নোটিস পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। অবশেষে ফেসবুকে দল ছাড়ার ঘোষণা করলেন পাঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। রাজস্থানে চলছে কংগ্রেসের চিন্তন শিবির। শনিবার শিবিরের দ্বিতীয় দিনেই সুনীলের মতো সিনিয়রের এহেন ঘোষণায় বড়সড় ধাক্কা খেল দল।
পাঞ্জাবে (Punjab) দলের সভাপতির পদ থেকে সুনীলকে সরিয়ে সভাপতি করা হয় সিধুকে। এরপর থেকেই বেসুরো ছিলেন বর্ষীয়ান নেতা। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চের নির্বাচনের প্রাক্কালে কংগ্রেস নেত্রী অম্বিকা সোনি মন্তব্য করেছিলেন, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু হলে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে। তাঁর এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে সুনীল বলেছিলেন, অম্বিকা দিল্লিতে বসে পাঞ্জাবে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, অম্বিকার ওই মন্তব্যে ‘হিন্দু’ সুনীলের ‘মুখ্যমন্ত্রীর মুখ’ হওয়ার সম্ভাবনাতেই যতিচিহ্ন পড়ে যায়। আর তাই তিনি ওই মন্তব্যের বিরোধিতার করেছিলেন।
[আরও পড়ুন: কাশীপুর কাণ্ড: জুয়ায় টাকা খুইয়েই অবসাদ, অর্জুনের ঝুলন্ত দেহের পকেটে ছিল মাত্র ৫০০ টাকা]
পাশাপাশি দলিত নেতা হওয়ার কারণেই সোনিয়া গান্ধী চান্নিকে পাঞ্জাবে দলের মুখ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন, এমনই মন্তব্য ছিল সুনীলের। তিনি বলেছিলেন, কংগ্রেস যেন পাঞ্জাবে বিএসপিকে প্রতিনিধিত্ব করছে। তিনি সোনিয়াকে আবেগপ্রবণ পরামর্শ দিয়েছিলেন, দল যেন তার আদর্শ থেকে সরে না আসে।
The congress should not loose #sunilkjakhar …. Is an asset worth his weight in gold …. Any differences can be resolved on the table
— Navjot Singh Sidhu (@sherryontopp) May 14, 2022
এদিকে সুনীলের দল ছাড়ার ঘোষণার পরেই টুইট করেছেন নভজ্যোৎ সিধু। কংগ্রেস নেতা তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ”সুনীল জাখরকে হারানো উচিত নয় কংগ্রেসের। কোনও সমস্যা থাকলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া যেতে পারে।” পাশাপাশি তিনি সুনীলকে দলের ‘গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ’ বলে দাবি করেন।
শুক্রবার অর্থাৎ ১৩ মে মরুরাজ্যের উদয়পুরে শুরু হয়েছে কংগ্রেসের চিন্তন শিবির। চলবে ৫ মে পর্যন্ত। গোটা দেশ থেকে মোট ৪২২ জন নেতা উদয়পুরের ওই শিবিরে অংশ নিচ্ছেন। রয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, গুলাম নবী আজাদ, পি চিদম্বরম, দিগ্বিজয় সিং, কমল নাথ, অধীর চৌধুরী-সহ অনেকেই।
[আরও পড়ুন: চাহিদা কমলেও কমছে না দাম, শহরের বহু দোকানে আলু ছাড়াই বিকোচ্ছে বিরিয়ানি]
গত আট বছরে বিভিন্ন নির্বাচনে লাগাতার পরাজয়ের তেতো স্বাদ পেতে পেতে বীতশ্রদ্ধ কংগ্রেস নেতারা। যেভাবেই হোক ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তারা। সংগঠন কবে ও কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, সেই উত্তর দেবে সময়। তবে সেই লক্ষ্যে ‘সংকল্প শিবিরের’ মতো মেগা ইভেন্টের জন্য সেজে উঠেছে উদয়পুর। এই পরিস্থিতিতে সুনীলের দল ছাড়ায় কংগ্রেস যে অস্বস্তিতে পড়ল তাতে সন্দেহ নেই।
উল্লেখ্য, তামিলনাড়ুর এক কংগ্রেস নেতাকে গত এপ্রিলেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আমেরিসাই ভি নারায়ণ দাবি করেছিলেন, দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রীদের ফিরিয়ে নিক কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জগন্মোহন রেড্ডি, কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের নাম উল্লেখ করে তিনি রাহুল-প্রিয়াঙ্কার কাছে আরজি জানান, এই নেতানেত্রীদের ফিরিয়ে এনে কংগ্রেসকে রক্ষা করুন তাঁরা। এরপরই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেয় কংগ্রেস হাইকমান্ড। এদিকে গত বৃহস্পতিবার দল থেকে বহিষ্কার করা হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা কে ভি থমাসকে। তাঁর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে।
এবার সুনীলকেও সরে যেতে ‘কার্যত’ বাধ্য করা হল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যার ফলে প্রশ্ন উঠছে, একদিকে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ভেবে চিন্তন শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ কেউ দলের ভাবমূর্তি উদ্ধারে কোনও পরামর্শ দিলে (সমালোচনার সুরে), যদি তা হাইকমান্ডের পছন্দ না হয়, তবে তাঁকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই বৈপরীত্যের কারণেই কি কংগ্রেসের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।