সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বড্ড বেশি নাক গলিয়েছিলেন বোধহয়। সাংবাদিক সুলভ আচরণ করতেন। তাও আবার প্রতিবাদী সাংবাদিক। একটি বিশেষ পন্থার বিরোধ করতেন হামেশা। ফল যা হওয়ার তাই হল। ব্রেকিং নিউজ- অজ্ঞাত পরিচায় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারালেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। তালিকায় তিনি অবশ্য একা নন। সাম্প্রতিক অতীত খুঁজে দেখলে আরও অনেক নামই মিলবে।
- ২০১৬ সালের মে মাসেই ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হত্যা করা হয় দুই সাংবাদিককে। বিহারের সিওয়ান রেলস্টেশনের কাছে গুলি করে হত্যা করা হয় বিহারের হিন্দি দৈনিক ‘হিন্দুস্তান’-এর ব্যুরো চিফ রাজদেও রঞ্জনকে। রাজদেবের মাথায় ৫ রাউন্ড গুলি করে দুষ্কৃতীরা। এর কয়েকঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ঝাড়খণ্ডের চাতরায় নিহত হন তাজা টিভির রিপোর্টার অখিলেশ প্রতাপ সিং।
- ২০১৫ সালে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় ‘আজ তক’-এর বিশেষ সংবাদদাতা অক্ষয় সিংহর। ব্যাপম কেলেঙ্কারি নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়েছিলেন তিনি।
- এই বছরই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক সন্দীপ কোঠারিকে। প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করে পরে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। শোনা যায়, অবৈধ ম্যাঙ্গানিজ খনি নিয়ে খবর করার জন্যই এই হাল হয়েছিল তাঁর।
- পুড়িয়ে মারা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের সাংবাদিক যোগেন্দ্র সিংকেও। শোনা যায়, রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নাকি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি।
- সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে’র কথা মনে আছে? মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতেন ৫৫ বছরের সাংবাদিক। এই অপরাধেই দিনের আলোতেই গুলি করা হয় তাঁকে।
- এমনকী, ধর্ষক বাবা ডেরা সাচা প্রধান রাম রহিম ইনসানের বিরুদ্ধে খবর করার অপরাধেও প্রাণ দিতে হয়েছিল সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতিকে।
[সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের নির্মম হত্যা, বিচারের দাবি মমতার]
শুধু সাংবাদিকই নন লঙ্কেশের মতো রহস্যজনকভাবে খুন হতে হয়েছে শিক্ষাবিদ, যুক্তিবাদি লেখকদেরও।
- মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন এম এম কালবুর্গি। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে যাঁকে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাতে হয়। নিজের বাড়িতেই খুন হন কালবুর্গি।
- বাদ যাননি মহারাষ্ট্রের বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা গোবিন্দ পানসারেও। ৮২ বছরের নেতা ও তাঁর স্ত্রীকে কোলাপুরের সাগারমালাতে গুলি করে মারে দুষ্কৃতীরা।
- ২০১৩ সালে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকর। এর মূল্য তাঁকে প্রাণ দিয়েই চোকাতে হয়। ঘটনার তিন বছর বাদে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় হিন্দু জনজাগৃতি সংঘের সদস্য বীরেন্দ্র সিং তাবড়েকে।
গৌরী লঙ্কেশের হত্যার ঘটনাতেও একজনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু তারপর? তারপর আবার মামলা দায়ের হবে। আর বছরের পর বছর তা চলবে। পরিবারের আরজি অনুযায়ী মামলা সিবিআই-এর হাতে যাবে। তেমন হলে তদন্ত কমিটি গঠন হবে। কিন্তু রহস্য সময়ের কুয়াশাতেই হয়তো ঢাকা পড়ে যাবে। তবে সাংবাদিকরা নাকি বড় নাছোড়বান্দা হন। আবার খবরের পিছনে তাঁরা ছুটবেনই।
[এ কোন সমাজ গড়ে তুলছি? গৌরী খুনে নেটদুনিয়ায় প্রশ্ন বিশিষ্টদের]