Advertisement
Advertisement
Indira Gandhi

পুলিশ ভ্যানে ইন্দিরা! জনতা সরকারের ‘ঐতিহাসিক ভুলে’ রাজনৈতিক পুনর্জন্ম প্রিয়দর্শিনীর

গ্রেপ্তারি আসলে 'অক্সিজেন'ই জুগিয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীকে।

How Indira Gandhi’s arrest help her ro regain popularity
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:March 23, 2024 9:30 pm
  • Updated:April 23, 2024 2:57 pm

লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে নানা কিসসা-কাহিনি পর্বে পর্বে সংবাদ প্রতিদিন ডট ইনে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ‘মৃত্যুরহস্য’ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর ‘জেলযাত্রা’, জ্যোতি বসুর ‘ঐতিহাসিক ভুল’ থেকে মোদির ‘রাজধর্ম পালন’- ফিরে দেখা হারানো সময়। লিখছেন বিশ্বদীপ দে

‘চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়…’ বিখ্যাত এই নজরুলগীতি জীবনের সব ক্ষেত্রের মতোই রাজনীতির ক্ষেত্রেও এক চরম সত্যি। দিন যায়, সময় বদলায়। কুরসিতে আসে নতুন দল, নতুন মুখ। পুরনো মুখ চলে যায় আড়ালে। কখনও কারাগারেও যেতে হয় একদা ক্ষমতার শীর্ষ অবস্থানে থাকা ব্যক্তিকে! ইন্দিরা গান্ধীর মতো অসাধারণ এক ব্যক্তিত্বকেও জীবনের আশ্চর্য সাপ-লুডো খেলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়, বাংলাদেশের জন্মের মুহূর্তে গোটা দেশের হৃদয়ের রানি নেহরুকন্যা। ১৯৭৫ সালে জারি হল ‘জরুরি অবস্থা’। ১৯৭৬ সালের গুয়াহাটি কনক্লেভে নেত্রীর উদ্দেশে দেবকান্ত বড়ুয়া বলে ওঠেন, ”ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা অ্যান্ড ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া।” ভারতই ইন্দিরা, ইন্দিরাই ভারত। ১৯৩০ পরবর্তী জার্মানির ‘হিটলারই জার্মানি এবং জার্মানিই হিটলার’ স্লোগানেরই ভারতীয় সংস্করণ তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কংগ্রেসের (Congress) তৎকালীন জাতীয় সভাপতির এই স্তূতিবাক্য মিথ হতে সময় নেয়নি। কে ভাবতে পেরেছিল পরের বছরই গ্রেপ্তার হতে হবে ইন্দিরাকে! যদিও শেষপর্যন্ত এই গ্রেপ্তারি ‘অক্সিজেন’ই জুগিয়েছিল ইন্দিরাকে।

Advertisement

সেকথায় আসার আগে একবার ফিরে দেখা দরকার জরুরি অবস্থার শেষে ইন্দিরার (Indira Gandhi) পরাজয়ের দিনগুলো। ২৫ জুন, ১৯৭৫। ভারতের জনতার যখন ঘুম ভাঙল, জারি হয়ে গিয়েছে জরুরি অবস্থা। স্বাধীনতার পর গত সাড়ে সাত দশকের ইতিহাসে জরুরি অবস্থা যে কত বড় অধ্যায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে ১৯৭৫ সালের জুন মাসের সেই বিশেষ সকালের আগে থেকেই ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার বীজ তৈরি হচ্ছিল ইন্দিরার মনে। কংগ্রেসও ক্রমশই নীতিভ্রষ্ট হচ্ছিল বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

Before Rahul Gandhi, his grandmother Indira Gandhi aldo went to jail

[আরও পড়ুন: ‘তিহার জেলে স্বাগত’, কেজরিওয়ালকে আগাম অভ্যর্থনা ‘ঠগবাজ’ সুকেশের]

দীর্ঘদিন ইন্দিরার ব্যক্তিগত সচিব থাকা পি এন ধর তাঁর ‘ইন্দিরা গান্ধী, দ্য এমার্জেন্সি অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ডেমোক্রেসি’ বইয়ে লিখেছিলেন, দুর্নীতি ও ইন্দিরার নেতৃত্বের সমালোচনায় মুখর জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন এই বিষয়ে খুব বড় একটা ফ্যাক্টর। আর সেই আন্দোলনের ধাক্কায় নাকি দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার জোগাড় হয়েছিল। হিংসা বাড়ছিল। তাই জরুরি অবস্থায় হাঁটা ছাড়া নাকি ইন্দিরার উপায় ছিল না। ১৯৭৫ সালের জুন থেকে শুরু হওয়া জরুরি অবস্থা শেষ হয় ১৯৭৭ সালের মার্চে। এর পর হওয়া সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে দেশের প্রথম অ-কংগ্রেসি সরকার গঠন করেছিল জনতা পার্টি। নিজের কেন্দ্রটিও হারান ইন্দিরা। মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন সরকার। আসলে জরুরি অবস্থায় সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি, তারই জবাব যেন চাইছিল আমজনতা। আর সেই প্রতিরোধ ও প্রশ্নমালায় ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন ইন্দিরা। আর তাঁর পরাজয়ের ফলে মোরারজি দেশাইয়ের সামনে খুলে যায় কুরসির দরজা। জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী হতে চাইছিলেন তিনি। এবার তাঁর স্বপ্নপূরণ হল। কিন্তু অচিরেই ভেঙেও গেল! মাত্রা আড়াই বছরেই।

১৯৭৭ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হন ইন্দিরা। তিনি একাই নন। তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল আরও চারজনকে। তাঁরা সকলেই ইন্দিরার একদা মন্ত্রিসভার চার প্রতিনিধি। দুটি ভিন্ন মামলায় এই গ্রেপ্তারি। কিন্তু একটা গোটা দিনও ইন্দিরাকে গ্রেপ্তার করে রাখতে পারেনি প্রশাসন। তাঁর এই গ্রেপ্তারি স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ১৬ ঘণ্টা। গ্রেপ্তারির পরদিন ৪ অক্টোবর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জানায়, ইন্দিরার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সাপেক্ষে কোনও প্রমাণই নেই। আপাত ভাবে মনে হতে পারে ইন্দিরার গ্রেপ্তারি হয়তো তাঁর ভাবমূর্তির চূড়ান্ত ক্ষতি করে দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবটা ছিল একেবারেই উলটো। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইন্দিরাকে গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত জনতা পার্টির জন্য ‘বুমেরাং’ হয়ে গিয়েছিল।

Tableau on India Gandhi death in Canada, sparks massive outrage

[আরও পড়ুন: হিমাচলে নতুন ‘খেলা’, বিজেপিতে যোগ কংগ্রেসের ৬ বহিষ্কৃত বিধায়কের, পদত্যাগ ৩ নির্দলেরও]

১৯৮০ সালে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে মসনদে প্রত্যাবর্তন করেন ‘লৌহমানবী’। আসলে নিজের গ্রেপ্তারির ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে জনতার সহানুভূতি আদায় করে হারানো ‘অক্সিজেন’ ফিরে পাওয়ার রণকৌশলটি দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন ইন্দিরা। এখানে আরও একটা বিষয় রয়েছে। ইন্দিরা প্রথম থেকেই বলে এসেছিলেন, তাঁর এই গ্রেপ্তারি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে।

আসলে দেশাই প্রশাসনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং তাঁর ‘চালে’ একটা মোক্ষম ভুল করেছিলেন। যদি ইন্দিরা মার্চে গ্রেপ্তার হতেন, তাহলে সেটার প্রতিক্রিয়া হত একেবারে ভিন্ন। কেননা সেই সময় ইন্দিরার বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভ ছিল শীর্ষে। সেদিন তাঁর গ্রেপ্তারি দেশাইকে আরও বেশি করে জনসমর্থন দিত। কিন্তু অক্টোবরে জনতা সরকারের বেশ কয়েক মাস হয়ে গিয়েছে। ততদিনে দেশাই প্রশাসনের প্রতি মানুষের কিছু কিছু ‘নেগেটিভ’ ধারণা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ইন্দিরা ফের হারানো মাটি ফেরত পেতে শুরু করেছেন। তাঁর জনসভায় ভিড় বাড়ছে। এহেন অবস্থায় ইন্দিরাকে গ্রেপ্তার করতে চেয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছিল চরণ সিংদের।

১৯৭৭ সালের মার্চে যে সরকার গঠিত হল তার আয়ু হল মাত্র দুবছর ৪ মাস! ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে সেই সরকারের পতন হয়। এর পর ইন্দিরার মসনদে ফিরে আসা। কংগ্রেস (আই) তথা ইন্দিরা কংগ্রেস পায় ৩৫৩টি আসন। যেখানে জনতা পার্টি পায় মাত্র ৩১টি আসন। জনতা পার্টি (সেকুলার) পায় ৪১ আসন। বামপন্থীদের জয় ৩৭টি আসনে। ইন্দিরার এই বিপুল জনসমর্থন পাওয়ার পিছনে অবশ্য কেবল গ্রেপ্তারির আবেগকে উসকে দেওয়াই একমাত্র ‘ফ্যাক্টর’ ছিল না। নিজের ‘একনায়ক’ ইমেজকে ধূলিসাৎ করতে মানুষের মাঝে মিশে গিয়েছিলেন ইন্দিরা। লড়াইটা সহজ ছিল না। কিন্তু দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় সেই লড়াইয়ে অনায়াস জয় পেয়েছিলেন তিনি। ফের ফিরে এসেছিলেন আলোকবৃত্তে। প্রমাণ করেছিলেন, রাজনীতির ময়দানে হার না মানা মানসিকতার কোনও বিকল্প নেই। আজ বদলে যায় কালে। বদলায় পরিস্থিতি। আগাম আঁচ পেয়ে সেইমতো নিজেদের বদলান, কৌশল স্থির করেন সুদক্ষ নেতা বা নেত্রীরা। ইন্দিরার সেই লড়াইয়ের বাকি কথা পরের পর্বে।

[আরও পড়ুন: লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর নেপথ্যে ইন্দিরা! কী হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর আগে শেষ ২৪ ঘণ্টায়?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ