সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিন কয়েক আগে মধ্যপ্রদেশের ভিন্দ শহরে নেহাতই দুর্ঘটনাবশত বাছুরের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতে নিদানে দোষী সাব্যস্ত হন স্থানীয় এক মহিলা। তাঁকে ভিক্ষা করার নিদান দিয়েছিল গ্রামের মোড়লরা। আর এবার ফের একটি গরু আহত হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াল বিজেপিশাসিত এই রাজ্যে। ঘটনায় মুসলমান সম্প্রদায়ের সাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বেশ কয়েক সপ্তাহ পর জামিনে মুক্তি পান তাঁরা। তবে গরুর শোকে আত্মঘাতী হন গরুর মালিক। ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের অশোকনগর জেলার সিলাওয়ান গ্রামে।
[সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের নির্মম হত্যা, বিচারের দাবি মমতার]
সম্প্রতি সিলাওয়ান গ্রামের বাসিন্দা ঘনশ্যাম লোধির পোষা গুরুকে গুরুতর অবস্থায় স্থানীয় পশু হাসপাতালে ভরতি করা হয়। গরুটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, এলাকার বাসিন্দা জনৈক আখতার খান গবাদি পশুটি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিলেন। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এলাকায় অশান্তির আশঙ্কায় আহত গরুটিকে ভোপালের পশু হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। পুলিশের নির্দেশে আহত পশুটিকে নিয়ে ভোপালে চলে যান গরুর মালিক ঘনশ্যাম লোধি, তাঁর ভাইপো সুনীল ও স্থানীয় থানার এক কনস্টেবল। কিন্তু, ভোপালের পশু হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা যায় গুলি নয়, গরুটিকে ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। শুরু হয় চিকিৎসা। এরইমধ্যে একদিন রাতে ভোপালের পশু হাসপাতাল চত্বরেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন গরুর মালিক ঘনশ্যাম লোধি।
[২ লক্ষের বেশি ভুয়ো সংস্থার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক]
মৃত ঘনশ্যাম লোধির মরদেহ সিলওয়ানে নিয়ে আসা হয়। মৃতের এক আত্মীয়র অভিযোগ, সিলওয়ান গ্রামের কয়েকজন মুসলমান ভোপালের পশু হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তাঁদের একজন তাঁর মাথায় বন্দুক ধরে। বাকিরা ঘনশ্যামকে অপহরণ করে। বস্তুত, মামলা প্রত্যাহার করার জন্য অভিযুক্ত আখতার খানের পরিবারের লোকেরা ক্রমাগত চাপ যে দিচ্ছেন সেকথা সুনীল আগেই গ্রামবাসীদের জানিয়েছিলেন। এরপরই ঘনশ্যামের মৃতদেহ নিয়ে স্থানীয় থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত মৃতদেহ সৎকার করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ৬ মুসলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সপ্তাহ খানেক পর অবশ্য জামিন পেয়ে যান তাঁরা।
[নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অনন্ত’ অভিযোগ, কী করবেন মোদি?]
ঘটনায় সিলওয়ান গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপর। হিন্দুদের অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযুক্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা রুজু করেছে। অন্যদিকের মুসলিমদের বক্তব্য, গুলি লেগেই গরুটি আহত হয়েছে। এটা প্রমাণ করতে পারলে ঘনশ্যামকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ডাক্তারি পরীক্ষা তা প্রমাণ না হওয়াতেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। দু’পক্ষের অভিযোগ-পালটা অভিযোগে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক-সহ সমস্ত পুলিশকর্মীকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। এদিকে, যাকে নিয়ে এতকাণ্ড, সেই গরুটি এখন রয়েছে ভোপালের একটি গোশালায়।
[সিগারেট আনতে মানা, ‘সেলফি’র লোভ দেখিয়ে নাবালককে গুলি যুবকের]