সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক বা দু’দিন নয়। প্রায় মাসখানেক ধরে দুপুর হলেই ভাঙা ডান হাতটাকে কোনও মতে সামলে, বাঁ হাত দিয়ে একটা জলের বোতল থেকে মেঝেয় জল ঢালেন বছর ষাটের পালমতী দেবী। তার পর পরিষ্কার করে নেন সামনের একটুখানি জায়গা। মোছেন নিজের কাপড় দিয়েই! তার পর অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন দুপুরের খাবার আসবে! খাবার আসে ঠিকই! তবে, থালায় করে নয়! এক কর্মী এসে মেঝেতেই ঢেলে দিয়ে যায় সামান্য ভাত, ডাল আর একটুখানি তরকারি! খিদের জ্বালায় এভাবেই খেতে বাধ্য হন বৃদ্ধা!
ঝাড়খণ্ডের তথাকথিত বিখ্যাত এক সরকারি হাসপাতাল, রাঁচি ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর সৌজন্যে এমন ঘটনারই মুখোমুখি হচ্ছেন রোগীরা! এভাবেই চলত ব্যাপারটা দিনের পর দিন! কিন্তু পালমতী দেবীর এই দুরবস্থার ছবি রাজ্যের এক বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘দৈনিক ভাস্কর’-এ প্রকাশিত হওয়ার পর ঠিক যেন শান্ত পুকুরের জলে একটা ঢিল পড়ল!
পালমতী দেবী জানিয়েছেন, এক পথদুর্ঘটনায় তিনি মাথায় চোট পান, ভেঙে যায় ডান হাতটি। তার পরেই তিনি চিকিৎসার জন্য আসে এই হাসপাতালে। ভর্তিও হন অর্থোপেডিক বিভাগে। চিকিৎসা কীরকম চলছে, তা নিয়ে তাঁর কোনও সম্যক ধারণা নেই। কিন্তু, হাসপাতাল-কর্মীদের ব্যবহারে যে মানবিকতার কোনও ছাপই নেই, সেটা মর্মে মর্মে বুঝেছেন এই বৃদ্ধাও!
অবশ্য, প্রথম যখন তাঁকে এভাবে খাবার পরিবেশন করা হয়, তখন তিনি একটা থালা চেয়েছিলেন। জবাব আসে, বাসন অপ্রতুল! অতএব, খেতে হলে এই নিয়মই মানতে হবে। তার পর থেকে প্রায় মাসখানেক এমন বন্দোবস্তই চলছে। আরও চলত যদি না সংবাদপত্রে প্রকাশিত হত তাঁর এই দুরবস্থার ছবি!
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, বছরে সরকারের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান পায় যে হাসপাতাল, তারা একটা থালায় করেও কি খেতে দিতে পারে না অসুস্থদের? চিরাচরিত নিয়মেই ভেসে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উত্তর, এরকম ঘটনা এই প্রথম ঘটল! যে কর্মী এমন অমানবিক আচরণ করেছেন পালমতী দেবীর সঙ্গে, তার বিরুদ্ধে কমিশন গঠন করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলেই কড়া শাস্তি দেওয়া হবে তাকে!
ও দিকে, হাসপাতালের তরফে সামনে এসেছে আরও একটি তথ্য! দাবি করা হয়েছে, পালমতী দেবী না কি আদৌ হাসপাতালের অধীনস্থ রোগীই নন! অর্থাৎ, তিনি নিয়ম মেনে এই হাসপাতালে ভর্তি হননি! পথদুর্ঘটনার পর পুলিশ এসে তাঁকে এখানে রেখে যায়। সেই থেকে তিনি এখানেই রয়েছেন। সেই জন্যই হাসপাতালকর্মীরা বুঝতে পারেননি, তাঁকে থালায় করে খেতে দেওয়া হবে কি হবে না!
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তি বেড়েছে প্রশাসনেরও! নড়েচড়ে বসেছেন রাজ্যের বিশেষ স্বাস্থ্য সচিব মনোজ কুমার। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, রোগী হোন বা না হোন, এমন অমানবিক আচরণ কি কখনই সমর্থন করা যায়? তাই তিনিও ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু বিতর্ক থামছে না। সরকারি হাসপাতালে রোগীরা কেমন পরিষেবা পান, তা নিয়ে কথা উঠছেই! এবার তারই চূড়ান্ত অমানবিক রূপটি তুলে ধরল রাঁচি!