সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: CAA বিরোধী আন্দোলনে এখনও শান্ত হয়নি রাজধানী। লাগাতার প্রতিবাদ চলছেই। CAA এবং NRC’র বিরুদ্ধে গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে শাহিনবাগের শাহিন স্কোয়্যারের একটি বাস স্ট্যান্ডে প্রতিবাদে বসেছেন স্থানীয় মহিলারা। অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে পথ। কনকনে ঠান্ডাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাজির আট থেকে আশি। নেই কোনও শীর্ষ নেতৃত্ব। কং হোক কিংবা আপ, কাউকেই এযাবৎকাল দেখা যায়নি সেই প্রতিবাদী জমায়েতের পুরোভাগে। কিন্তু তবুও মহিলাদের এই আন্দোলনে শামিল হতে নাছোরবান্দা ‘দাদিরা’। দিল্লির এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে সেখানে হাজির শাহিনবাগের ‘দাদি’রাও। বয়স কারও সত্তরো্র্দ্ধ, তো কেউ বা আবার আশির কোঠায়।
‘দিল্লি কি সর্দি’ শুনলেই সাধারণত হাড় কাঁপানো এক ঠান্ডার কথা মনে হয়। সেই কড়া শীতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই CAA’র বিরোধিতায় নেমে পড়েছেন শাহিনবাগের ‘দাদি’রা। বিগত বেশ কিছু দিন ধরে একটানা চলছে তাঁদের প্রতিবাদ আন্দোলন। আন্দোলনের মুখ ৯০ বছরের আসমা খাতুন, অশীতিপর বিলকিস এবং সত্তরোর্ধ্ব শর্বরীরা। বাড়িতে বসে না থেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন এই প্রৌঢ়ারা। যতই জমিয়ে ঠান্ডা পড়ুক আর যতই তাঁদের আন্দোলন ভাঙতে এগিয়ে আসুক আইনের রক্ষকরা, এই দাদিরা পিছু হঠছেন না, হঠবেনও না! বরং প্রকৃতি হোক বা প্রশাসন, যার তরফে যতই বাধা আসুক, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে ‘দাদি’স অফ দিল্লি’স শাহিনবাগ’-এর উদ্যত কণ্ঠ থামছে না। উলটে সময়ের সঙ্গে আরও জোরালো হয়েছে প্রতিবাদী কণ্ঠ।
[আরও পড়ুন:‘সিএএ’কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই জানে বিশ্ব’, সমালোচনার জবাব বিদেশ মন্ত্রকের]
দাদিদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড় আসমা। কিন্তু আসমাই হোন বা শর্বরী, সম্পূর্ণ নাম জিজ্ঞাসা করলে সকলের মুখে মিলবে একটাই উত্তর। ‘‘আমরা বলব না।’’ কিন্তু কেন? কেন বলবেন না? দাদিদের জবাব, ‘‘আমাদের কাছে প্রামাণ-নথিপত্র নেই, তাই।’’ কিন্তু CAA’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কেন করছেন? উত্তরে আসমার দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্ন করুন কেন প্রতিবাদ করছি! এরকম দিন আমাকে কেন দেখতে হবে? এর জন্য কে দায়ী?’’ বৃদ্ধার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী চান, নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে আমি নথিপত্র দেখাই? দেশে বহু মানুষ আছেন, যাদের কাছে কাগজপত্র নেই। অনেকেই বৃষ্টি-বন্যা, আরও কতরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে নথিপত্র হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁরা এখন কোথা থেকে সেসব ফিরে পাবেন? আমি প্রধানমন্ত্রীকেই চ্যালেঞ্জ করছি। প্রধানমন্ত্রী ওঁর পরিবারের সাত প্রজন্মের নাম বলুন। প্রধানমন্ত্রী পারলে আমিও আমার পরিবারের ন’জনের নাম বলে দেব।’’
[আরও পড়ুন: ‘পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়েও প্রতিবাদ করুন’, CAA বিরোধীদের কটাক্ষ মোদির ]
অন্যদিকে বিলকিসের মন্তব্য, ‘‘আন্দোলনকারীদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। শুধু যে মুসলিমরা প্রতিবাদ করছেন, তা তো নয়। দেখুন, আন্দোলনকারীদের যারা রোজ খাবার দিচ্ছেন, তার মধ্যে সব ধর্মের মানুষজনই আছেন। কেউ আমাদের কলা দিচ্ছেন, কেউ ফলের রস আর বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন।’’ আর দাদিদের মধ্যে সবর্কনিষ্ঠ শর্বরীর কী মত? তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এখানে জন্মেছি, এখানেই মরতে চাই। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। তাই কোনওমতেই আমি একে সমর্থন করব না।’’ কিন্তু দিল্লির ঠান্ডা তো কুখ্যাত! এই প্রবল শীতে আর কতদিন চলবে তাঁদের আন্দোলন? ত্রয়ীর উত্তর, ‘‘খোলা আকাশের নিচে আমাদের ঠান্ডা লাগে না। আমাদের সঙ্গে সকলের সমর্থন রয়েছে। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলে যেতে চাই যে, ওদের অধিকারের জন্য আমরা লড়াই করেছি।’’