সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশে একাধিক রেল প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিল ভারত। যেগুলোর ব্যয়মূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এই সিদ্ধান্তের জেরে থমকে যেতে পারে বহু প্রতীক্ষিত আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগের কাজও। এক সময় বাংলাদেশ ছিল ‘ভারতবন্ধু’। কিন্তু মহম্মদ ইউনুসের জমানায় সেই সংজ্ঞা এখন অতীত। শেখ হাসিনার আমলের রীতিনীতি, কূটনীতি সব কিছুই তিনি পালটে ফেলেছেন। দেশে ভারত বিরোধিতার হাওয়া তুলে প্রধান উপদেষ্টা কাছে টানছেন চিন আর পাকিস্তানকে। নিপীড়িত হিন্দুরা। এই টালমাটাল পরিস্থিতির জেরেই এহেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি বলে খবর।
আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন এবং মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ইউনিট-২-সহ আরও কয়েকটি রেল প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করছিল ভারত-বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই প্রোজেক্টগুলোর উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ‘গণ অভ্যুত্থানে’ গদি হারান মুজিবকন্যা। তারপরই ঢাকার উপর জাঁকিয়ে বসার চেষ্টা করছে ভারত বিরোধী শক্তিগুলো। পদ্মাপারে হিন্দু নির্যাতন এখন লাগামছাড়া। কয়েকদিন আগেই বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয় এক হিন্দু নেতাকে। যার কড়া নিন্দা জানায় ভারত। জানা গিয়েছে, এরপরই বাংলাদেশে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখেই আপাতত এই রেল প্রকল্পগুলোর কাজ স্থগিত করে দিয়েছে দিল্লি।
এই সিদ্ধান্তের জেরে বিশ বাঁও জলে নির্মাণাধীন আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রোজেক্ট। প্রভাবে পড়তে পারে খুলনা-মোংলা রেল লাইনেও। ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ প্রকল্পও থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হত। সূত্রের খবর, পড়শি দেশের আরও পাঁচটি পরিকল্পিত প্রকল্পও স্থগিত রাখা হয়েছে। কয়েকদিন আগেই প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের অনুদানের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে রেলের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে হাসিনার শাসনকালে অনুমোদন মিলেছিল খুলনা-দর্শনা যুগ্ম লাইন রেল প্রকল্প এবং সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মিশ্র গেজ লাইন প্রকল্পের। দুই প্রকল্পেই ভারত ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও টাকা আসেনি বলে অভিযোগ তুলেছ ঢাকা। ফলে কাজ শুরু করা যায়নি।
এছাড়াও ভারতের ঋণের টাকায় খুলনা-মোংলা রেলপথ (২০১০ সালে অনুমোদিত) এবং আখাউড়া-আগরতলা (২০১৬ সালে অনুমোদিত) লাইনের কাজ হয়েছে। এই দুই প্রকল্পের পুরোপুরি সমাপ্তি ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ সরকার। খুলনা-মোংলা লাইনে একটি ট্রেন চলে। আখাউড়া-আগরতলা লাইনে এখনও ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। আরও একটি প্রকল্প দিনাজপুর-কাউনিয়া লাইনের (২০১৮ সালে অনুমোদিত) কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগ প্রকল্পটিতে ভারতের ৩৯২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাংলাদেশে ৬.৭৮ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ও ত্রিপুরায় ৫.৪৬ কিলোমিটার রেললাইন-সহ এই রেল সংযোগের দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার। খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পটি ভারত সরকারের কনসেশনাল লাইন অফ ক্রেডিটের অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছে, যার মোট প্রকল্প ব্যয় ৩৮৮.৯২ মিলিয়ন ডলার। এই প্রকল্পে মোংলা বন্দর ও খুলনায় বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর মোংলা ব্রডগেজ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ভারতীয় কনসেশনাল ফাইন্যান্সিং স্কিমের আওতায় ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের অধীনে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট হল বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের রামপালে অবস্থিত একটি ১৩২০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট (এমএসটিপিপি)। ফলে ভারতের এই সিদ্ধান্তে বড়সড় ধাক্কা খেল বাংলাদেশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.