সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেআইনি জমিতে তৈরি হয়েছে নির্মান। এই অভিযোগে রাজধানীতে গুড়িয়ে দেওয়া হল দৃষ্টিহীনদের হস্টেল। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের জেরে প্রবল ঠান্ডায় এখন রাত কাটছে বাস্তুহারাদের।
[আধপেটা খেয়ে দুই মেয়ের বোঝা জন্মদাত্রী, গৃহবন্দি ‘ভাগের’ মা]
দিল্লির জনকপুরীর বীরেন্দ্রনগরে গত সপ্তাহে চলে এই তাণ্ডব। হস্টেল ভেঙে দেওয়ায় পর কনকনে ঠান্ডায় প্রায় ১০ দিন আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। স্থানীয় এক এক সংস্থা দৃষ্টিহীনদের এই হস্টেলটি চালাত। গত ১৭ বছর ধরে বীরেন্দ্রনগরের হস্টেলটিতে থাকতেন মূলত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বোদয় স্কুলের পড়ুয়ারা। হস্টেলের কেয়ারটেকার কমলেশ কুমারও দৃষ্টিহীন। তিনি জানান দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদের কর্মী ও পুলিশ কিছু না জানিয়েই ভাঙতে থাকে। এব্যাপারে তাদের কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি হস্টেল কর্তৃপক্ষর। কমলেশ আক্ষেপের সঙ্গে জানান শেষ মুহূর্তে খবর পেলে কিছু হয়তো বাঁচানো যেত। ভিটে ছাড়া হয়েছেন ছাত্র আরিয়ান কুমার। তিনি যখন বিকেলে ক্লাস সেরে হস্টেলে ফেরেন তখন আরিয়ানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। আরিয়ান ভরতির কাগজ আর বই খুঁজে পানেনি। তার বন্ধুদের কারও মার্কশিট হারিয়েছে, কারও নোটস উধাও। এর দায় কে নেবে, প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। কেয়ারটেকার কমলেশের অভিযোগ ভাঙার আগে শুধুমাত্র ফ্রিজ, গ্যাস সিলিন্ডার ও বিছানা বার করা গিয়েছিল। হস্টেলের মধ্যে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী থাকলেও তা বের করার সুযোগ মেলেনি।
[সততাই মূলধন, ২ লক্ষ টাকা পেয়েও ফেরালেন রিকশচালক]
তবে দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদ হস্টেল কর্তৃপক্ষর অভিযোগ মানতে চায়নি। উলটে তাদের দাবি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রথমে তাদের এবিষয়ে জানানো হয়। এরপর আরও চারবার খবর যায়। এমনকী ভাঙার একদিন আগেও হস্টেল কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। কেন তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়নি। এর জবাবে উন্নয়ন পর্ষদের বক্তব্য, লিখিত আকারে কিছু পাঠালে তারা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনতে পারত। তার ফলে উচ্ছেদের বিষয়টি জটিল আকার নিত। সমবেদনা নয়, ডিডিএ উলটে প্রশ্ন তোলে সরকারি হস্টেল ছেড়ে কেন ওই পড়ুয়ারা বেসরকারি সংস্থার দখল করা জমিতে থাকছিল।
[৪৫ মিনিটের অপারেশন, লুট ২০ কেজি সোনা ও কয়েক লক্ষ টাকা]
এলাকার কাউন্সিলর নরেন্দ্র চাওলা জানান অবশ্য পড়ুয়াদের পাশে রয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, হস্টেলটি লাভজনক উদ্দেশ্যে করা হয়নি। পড়ুয়ারাই হস্টেলটি চালায়। তারপরও ডিডিএ হস্টেলটি ভেঙে দিয়ে চূড়ান্ত অমানবিকতার কাজ করেছে। মাথার উপর ছাদ সরে যাওয়ার পর অনেকের জীবন গতি যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। যেখানে তাদের থাকতে হচ্ছে সেই এলাকার চর্তুদিকে দুর্গন্ধ। নর্দমার নোংরা জল আসছে। অস্থায়ী জায়গায় এসে কারও স্টোভ চুরি হয়েছে। আক্ষেপ দেখানোর পাশাপাশি কেউ কেউ ফোঁস করেও উঠছেন। এক ভিটেহারার মতে ডিডিএর এলাকায় একের পর এক বেআইনি কলোনি গড়ে উঠেছে। কারও তা নজরে আসে না। ধনীদের বিরুদ্ধে কখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এই হস্টেলে থেকে অনেকে সরকারি চাকরি পেয়েছেন। আপাতত সেই লড়াই একেবারে একপেশে হয়ে গেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.