সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাতাস আছে সর্বত্র। কিন্তু শ্বাস নেওয়ার জো নেই। নেবেন কী করে! ফুসফুসটিই যে ছিল অকেজো। টানা পাঁচ বছর এমনই দমবন্ধকর অবস্থায় জীবনযাপন করেছেন রিমা আগরওয়াল। অবশেষে মুক্তি। হল সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপন। এখন তিনি সুস্থ। পূর্ব ভারতে এই প্রথম জোড়া ফুসফুস প্রতিস্থাপনে নজির গড়লেন গ্লেনাগেলস গ্লোবাস হসপিটালস-এর চিকিৎসকরা।
[ ডিম নাকি নিরামিষ, খাওয়া যাবে একাদশীতেও! ]
২০১২ সালে ফুসফুসের অসুখ ধরা পড়ে শিলিগুড়ির বাসিন্দা রিমার। পালমোনারি ফাইব্রোসিসে ভুগছিলেন তিনি। স্বামী রাজেশ আগরওয়াল পেশায় ব্যবসায়ী। এক পুত্র ও কন্যা আছে দম্পতির। কিন্তু আচমকাই যেন অসুখের থাবায় থমকে যায় জীবন। চিকিৎসার অবশ্য কোনও খামতি হয়নি। দিল্লির বেদান্ত হসপিটালে চিকিৎসা হয়। দেওয়া হয় স্টেরয়েড। তাতে তো অসুখ সারেনি। উলটে ওজন বেড়ে যায় প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ কেজি। এরপর ভেলোর থেকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি, কোথাও ঘুরতে বাকি রাখেননি। কিন্তু ওষুধ বলতে ওই স্টেরয়েড। চলতি বছরের একেবারে গোড়ার দিকে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন রিমাদেবী। শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। অক্সিজেন দিয়ে কোনওক্রমে জীবনরক্ষা হচ্ছিল। উপায় একটাই, ফুসফুস প্রতিস্থাপন। অনেকেই বিদেশে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। তাতে একে তো বিপুল খরচের ধাক্কা আছে। দ্বিতীয়ত ভিসা ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্যার হ্যাপাও কম নয়। শেষমেশ ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে চেন্নাইয়ের ‘ইনস্টিটিউট অফ হার্ট অ্যান্ড লাং ট্রান্সপ্লান্টেশন’-এর খবর পান রিমার স্বামী রাজীববাবু। যোগাযোগ করলে জানতে পারেন, সেখানে ফুসফুস প্রতিস্থাপন সম্ভব। যদি দাতা মেলে।
অবশেষে তাও মিলেছিল। গত জুলাইয়ে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জটিল অস্ত্রোপচার হয়। নেতৃত্বে ছিলেন ডাঃ সন্দীপ আতাওয়ার। তাঁর নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জন চিকিৎসকের এক মেডিক্যাল টিম এই কাজে শামিল হন। কঠিন অপারেশন। তবে সকলেই সাফল্যে আশাবাদী ছিলেন, হয়েওছে তাই। পূর্বভারতে এই প্রথমবার সফলভাবে ফুসফুস প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে। এখন রিমাদেবী পুরো সুস্থ। ভিড়ভাট্টা আর দূষণ বাদ দিলে তাঁর শ্বাস নিতে আর কোনও সমস্যা নেই। এমনকী ট্রেড মিলে যথেষ্ট দ্রুত হাঁটতেও পারছেন।
[ নাবালিকা স্কুলছাত্রীদের ধর্ষণে অভিযুক্ত ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ]
সফল এই অস্ত্রোপচারে খুশি প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকরা। প্রাণভরে শ্বাস নিতে পেরে আনন্দের ঝিলিক রিমাদেবী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের চোখেমুখেও। বিপুল খরচের অপারেশন। কোনওরকম বিমা নেই। ঝুঁকি নিয়েছিল তাঁর পরিবার। তা বিফলে যায়নি। তবে চিকিৎসকমহল জানাচ্ছে, হয়তো বছর আষ্টেক পর ফের এই ফুসফুস অকেজো হয়ে যাবে। আবার প্রতিস্থাপন করতে হবে। কেননা যত দিন পেরবে প্রতিস্থাপিত ফুসফুসের কার্যকরিতার আয়ু তত কমতে থাকবে। তবে আপাতত সে কথা ভাবছেন না আগরওয়াল পরিবার। বহু কষ্টে ও ব্যয়ে যে রিমাদেবী সুস্থ হয়েছেন এতেই তাঁরা খুশি। আর রিমাদেবী নিজে কী বলছেন? তিনি অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, সেই দাতাকে। তাঁকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠিও দিয়েছেন। তাঁর প্রতিটি নিঃশ্বাস যে আসলে সেই আজানা দাতারই, সে কথা তিনি ভুলবেন কী করে!
[ সহপাঠীর উপর ‘যৌন নিগ্রহ’ চালিয়ে আটক চার বছরের শিশু ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.