সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বয়স তখন মোটে ছয়, বোমার আঘাতে ডান পা উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু, জীবন যুদ্ধে হার মানেননি কেরলের কান্নুরের কে আসনা। নকল পায়ে ভর করে স্বপ্নপূরণের লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। ফলও মিলেছে হাতেনাতে। সদ্য ডাক্তারি পাস করে কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে কাজে যোগ দিয়েছেন আসনা। ওই যুবতীর স্বীকারোক্তি, ‘আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। যন্ত্রণাই আমাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী ও দৃঢপ্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল। দুঃখ একটাই, আমার জেলায় এখনও রক্ত ঝরছে।’
[বারামুল্লায় নিকেশ লস্কর জঙ্গি, অশান্তির আঁচে স্তব্ধ ইন্টারনেট]
বাম ও বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষে বারবারই খবরের শিরোনামে উঠে আসে কেরল। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরের দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে ২০০টির বেশি রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বাম ও আরএসএস সমর্থকরাও। মারা গিয়েছেন ১০ জন। প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ঠিকই। তবে কান্নুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে আসনার যা ক্ষতি হয়েছে, তা এ জীবনে আর পূরণ হওয়ার নয়। সালটা ছিল ২০০০। কান্নুর জেলার পুভাথুর গ্রামে নিজের বাড়ির সামনেই ভাই আনন্দের সঙ্গে খেলছিলেন বছর ছয়েকের আসনা। আচমকাই তাঁদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে আরএসএস কর্মীরা। বোমা আঘাতের আসনার ডান পা উড়ে দিয়েছিল। অসহ্য যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি। স্থানীয় হাসপাতালে তিন মাসে ধরে চিকিৎসা চলেছিল। হাসপাতাল থেকে কৃত্রিম পায়ে ভর করে বাড়ি ফিরেছিল আসনা। কিন্তু, এত বড় বিপর্যয়ের পরে ভেঙে পড়েননি ওই যুবতী। চরম শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন।
[থ্রি-ডি অবতারে চমকে দিলেন মোদি! যোগগুরু হয়ে শেখালেন ত্রিকোণাসন]
আসনার পরিবার ছিল কংগ্রেস সমর্থক। তাঁর বাবার সঙ্গে স্থানীয় আরএসএস কর্মীদের গন্ডগোল হয়েছিল। তারই পরিণতি আসনাদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছিল আরএসএস কর্মীরা। বোমার আঘাতে গুরুতর জখম মেয়ের চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থও ছিল না দরিদ্র পরিবারটির। তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করেছে কংগ্রেসের কান্নুর জেলা কমিটি। পরবর্তীকালে নিজের মেধার জোরে কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান আসনা। কিন্তু, ডাক্তারি পড়তে গিয়েও কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি! প্রতিদিন তিনতলার ক্লাসরুমে পৌঁছে গিয়ে নাজেহাল হতে যেতেন আসনা। বিষয়টি কেরলের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমান চান্ডির নজরে আনেন কয়েকজন কংগ্রেস নেতা। গত সপ্তাহে ডাক্তারি পাস করেছেন কে আসনা। এখন তাঁর নতুন ঠিকানা কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে। নিজের কলেজেই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ওই তরুণী।
[ব্যক্তিগত তথ্য বিদেশি সংস্থাকে পাচার করছে ‘মোদি অ্যাপ’!]
কে আসনা বলেন, ‘জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কম লড়াই করতে হয়নি। অতিরিক্ত হাঁটাচলা করলেই ডান পা দিয়ে রক্ত ঝরত। তবে এই যন্ত্রনাই আমাকে মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল। আমার মতো পরিণতি যেন কারও না হয়। কিন্তু, আমার জেলায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ এখনও থামেনি।’ ২০০৮ সালে আসনাদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় ১৩ জন আরএসএস ও বিজেপি কর্মীদের দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।
[নাইটি পরলে জরিমানা পাঁচশো টাকা, দেশের কোথায় এমন বিধান?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.