Advertisement
Advertisement
Uttarkashi

যন্ত্র ব্যর্থ, মানুষের হাতেই সাফল্য উত্তরকাশীতে! মেঘালয়ের প্রাচীন পদ্ধতিতেই উদ্ধার শ্রমিকরা

১৭ দিনের মাথায় সুড়ঙ্গ থেকে মুক্ত ৪১ শ্রমিক।

Machines fail, people succeed in Uttarkashi। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:November 29, 2023 9:05 am
  • Updated:November 29, 2023 9:05 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যন্ত্র পারল না। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে শেষ পর্যন্ত ভেলকি দেখাল অধুনা দেশে নিষিদ্ধ, অতি-বিপজ্জনক এক অজ পদ্ধতি। ‘র‌্যাট হোল মাইনিং’। নামেই স্পষ্ট, ইঁদুর যেভাবে মাটিতে গর্ত খোঁড়ে, ঠিক সেই কায়দায় খনন চালানোর পদ্ধতি এটি। অনেকটা ‘সিঁদ কাটা’র মতো। খনি থেকে আকরিক উত্তোলনের এই প্রাচীন পদ্ধতি মেঘালয়ে বহুল প্রচলিত। তবে জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুন‌্যাল একে অনেক আগেই বেআইনি ঘোষণা করেছে। নির্দিষ্টভাবে বললে, ২০১৪ সালে।

এটি কাজ করে কীভাবে? এই পদ্ধতিতে প্রথমে মাটিতে অত‌্যন্ত সরু গর্ত খোঁড়া হয়। গর্তের গভীরতা চার ফুটের বেশি হয় না। বলাই বাহুল‌্য, গর্তটি এতটাই সংকীর্ণ হয় যে, তা দিয়ে শুধুমাত্র একজনই ওঠানামা করতে পারেন। সাধারণত কয়লাখনিতে ওই গর্ত দিয়েই মই বা দড়ির সাহায্যে একজন শ্রমিক নিচে নামেন, বেলচা দিয়ে ঝুড়িতে কয়লা তোলেন এবং সেই পথেই ফের বেরিয়ে আসেন। সিল্কইয়ারা এবং বারকোটের মধ‌্যবর্তী নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গপথে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের অন্য সমস্ত রাস্তা যখন ব‌্যর্থ সাব‌্যস্ত হয়েছে, তখন শেষ আশা হিসাবে ‘র‌্যাট হোল মাইনিং’ পদ্ধতির প্রয়োগ করেন উদ্ধারকারীরা। ১০-১২ মিটার খনন বাকি থাকতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। আর তাতেই আসে সাফল‌্য। জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক এই অভিযানের জন‌্য ১২ জনকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল দিল্লি থেকে। এঁদের মধ্যে ছজন মধ‌্যপ্রদেশের। কিন্তু কেউই পেশাগতভাবে ‘র‌্যাট মাইনার্স’ নন। এঁরা স্রেফ এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। উত্তরাখণ্ড সরকারের তরফে নোডাল অফিসার নীরজ খইরওয়াল এই কথা নিশ্চিত করেছেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: জিলেটিন স্টিক উদ্ধার মামলা: তিহাড়ে গিয়ে অনুব্রত-সায়গলকে জেরা করবে NIA]

অন‌্যদিকে এই ১২ জন বিশেষজ্ঞের অন‌্যতম রাজপুত রাজ সাংবাদিকদের কাছে ব‌্যাখ‌্যা করেছেন তাঁদের কাজের পদ্ধতি। জানিয়েছেন কীভাবে এক জন যখন খনন করেছেন, অন‌্যজন মাটি-পাথর-নুড়ি সংগ্রহ করেছেন, আর অপর জন সেই সমস্ত জিনিস ট্রলিতে চাপিয়ে সুড়ঙ্গ থেকে বের করে এনেছেন। বস্তুত, উত্তরাখণ্ডে শ্রমিকদের উদ্ধারের সবচেয়ে বড় ভরসা ‘অগার মেশিন’ তৃতীয় তথা শেষ বার ভেঙে পড়ার পর সাহায‌্য নেওয়া হয়েছিল ‘র‌্যাট-হোল-মাইনিং’ পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতেই ম্যানুয়াল ড্রিলিং করা শুরু হয়। পরে ৮০০ মিমি লোহার পাইপ ভিতরে বসানো হয়। উদ্ধারকাজ অন্তিম দফায় এই ভাবেই এগিয়েছে।

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণভাবে তথ‌্য বলছে, ‘র‌্যাট মাইনার্স’রা সাধাণত দুভাবে কাজ করেন। এক, ‘সাইড-কাটিং’ পদ্ধতি অনুসারে। আর দুই, ‘বক্স কাটিং’ কায়দায়। প্রথম ক্ষেত্রে পাহাড়ের ঢাল বরাবর একটি সরু সুড়ঙ্গ খনন করা হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত কয়লার স্তর পর্যন্ত পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে, ততক্ষণ সুড়ঙ্গটি খনন করা হয়। অন‌্যদিকে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে প্রথমে ১০ থেকে ১০০ বর্গ মিটারের একটি আয়তাকার জায়গা চিহ্নিত করে, সেখানে উল্লম্বভাবে গর্ত খনন করা হয়। এই গর্তগুলি সাধারণত ১০০ থেকে ৪০০ ফুট গভীর হয়। কয়লার স্তর শনাক্ত করার পর, ছোট ছোট ইঁদুরের গর্তের মতো, বেশ কয়েকটি অনুভূমিক সুড়ঙ্গ খনন করা হয়। সেই সুড়ঙ্গগুলি দিয়েই শ্রমিকরা কয়লা তোলার জন্য নিচে নামেন।

[আরও পড়ুন: মুক্তি দিয়েও শিশু পণবন্দিদের হুকুম বন্দুকধারীদের! হামাসের হাড়হিম করা ভিডিও প্রকাশ্যে]

কিন্তু ‘র‌্যাট হোল মাইনিং’ (অন‌্য নাম অ‌্যাসিড মাইন ড্রেনেজ) দেশে নিষিদ্ধ। কারণ নিরাপত্তার অভাব। এটি শুধুমাত্র শ্রমিকদের জন‌্যই অসুরক্ষিত বা প্রাণহানিকর নয়, পরিবেশের জন‌্যও ক্ষতিকারক। ২০০৮ সালে মেঘালয়ে এর জেরে বড় দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। এই ‘র‌্যাট হোল মাইনিং’ পদ্ধতি অবলম্বন করেই সেখানে কয়লা উত্তোলনের কাজ চলছিল। কিন্তু বন‌্যার জলে ভেসে গিয়েছিল সেই খনি। ১৫ জন শ্রমিক ভিতরে আটকে পড়েছিলেন। দুমাস ধরে উদ্ধারকাজ চললেও কেবলমাত্র দুজনের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছিল। বাকিদের কোনও খোঁজ মেলেনি। একই সঙ্গে এই পদ্ধতির যথেচ্ছ ব‌্যবহারে শিশু শ্রমিকদের সংখ‌্যায় বাড়বৃদ্ধিরও অভিযোগ উঠেছিল। কারণ, গর্তগুলি অত‌্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় কয়লা উত্তোলনে শিশুদের ঢোকানো হত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ