Advertisement
Advertisement

সীমান্তে মুখোমুখি ভারত ও চিনের প্রায় তিন হাজার সেনা

একে অপরের চোখে চোখ রেখে প্রহর গুনছে করছে দুই দেশের সেনা...

Massive troop buildup in India-China border
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 30, 2017 3:26 am
  • Updated:June 30, 2017 10:02 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের কি পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে ১৯৬২-র? ভারত ও চিন কি ফের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হবে? শেষ কবে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত ইস্যুতে এতটা উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল, মনে করতে পারছেন না প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। দুই দেশই এখন নিজেদের সীমান্ত রক্ষায় পুরোদস্তুর সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ফেলল। ভারত ও চিন- দুই দেশই সিকিম, ভুটান ও তিব্বতের ত্রিমুখী সংযোগস্থলে তিন হাজার করে পদাতিক সেনা মোতায়েন করে ফেলেছে। সিকিম—ভুটান সীমান্তে দোকা লা এলাকার সংকীর্ণ পাহাড়ি রাস্তায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত ও চিন সেনা। নয়াদিল্লি ও বেজিং – দু’পক্ষই নিজের সেনাকে সাহায্যের জন্য প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ‘রি-ইনফোর্সমেন্ট’ পাঠাচ্ছে।

[ভারতকে ‘শিক্ষা’ দিতে তোড়জোর শুরু বেজিংয়ের]

বৃহস্পতিবারই পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে গিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত গ্যাংটকে ১৭ মাউন্টেন ডিভিশন ও কালিম্পংয়ে ২৭ মাউন্টেন ডিভিশনের সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন। দুই দেশেরই প্রায় তিন হাজার সেনা এখন সিকিম, ভুটান ও তিব্বতের ত্রিমুখী সংযোগস্থলে মুখোমুখি, একে অপরের চোখে চোখে রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে বিশেষ সূত্রে খবর। যদিও ভারতীয় সেনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই খবর স্বীকার করেনি। সেনার এক মুখপাত্রের দাবি, ওই এলাকা এমনিতেই স্পর্শকাতর। সেখানে সেনা প্রতিটি মুহূর্তেই নজরদারি চালায়। তবে সূত্রের খবর, সিকিম পরিদর্শনে গিয়ে রাওয়াত বিশেষ গুরুত্ব দেন ১৭ ডিভিশনের দিকে। কারণ, ওই বিশেষ বাহিনীর হাতেই পূর্ব সিকিমের চারটি ব্রিগেডের দায়িত্ব বর্তায়। সূত্রের দাবি, ‘৩৩ কর্পস ও ১৭ ডিভিশনের সমস্ত উচ্চপর্যায়ের কর্তারাই রাওয়াতের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার সকালে নয়াদিল্লি ফিরবেন জেনারেল রাওয়াত।’

Advertisement

india-china

Advertisement

ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সিকিম, ভুটান ও তিব্বতের ত্রিমুখী সংযোগস্থলের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চিনকে রাস্তা তৈরি করতে দেওয়া হবে না। সূত্রের খবর, ভুটান সীমান্তে দোকা লা এলাকায় ‘ক্লাস ৪০’ সড়ক নির্মাণ করতে চায় চিন। এই ধরনের রাস্তায় ৪০ টনের সাঁজোয়া গাড়ি অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। চিন ওই রাস্তা ব্যবহার করে হালকা সাঁজোয়া গাড়ি, কামান ও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ভারতের দিকে তাক করে মোতায়েন করতে চায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত সীমান্তের খুব কাছেই তিব্বতের মালভূমিতে হালকা ওজনের ট্যাঙ্ক নিয়ে যুদ্ধের মহড়া চালিয়েছে চিন। গত দু’দিন ধরে টানা এই মহড়া চালানো হয়েছে। চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মুখপাত্র কর্নেল উও কিয়ান সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত ৩৫ টনের অনেকগুলি যুদ্ধের ট্যাঙ্ক নিয়ে মহড়া চালানো হয়েছে। সঙ্গে ছিল রকেট লঞ্চার ট্রাক ও হেলিকপ্টার গানশিপ। সাম্প্রতিককালে এই ধরনের মহড়া এই প্রথম।

[সিকিম সীমান্তে চিনা সেনার অনুপ্রবেশের চেষ্টা রুখে দিল ভারতীয় সেনা]

যদিও চিনের সরকারি বাহিনী পিএলএ-র দাবি, “কোনও দেশকে লক্ষ্য করে (ভারত) এই মহড়া চালানো হয়নি। এটা নেহাতই একটি রুটিন মহড়া। হালকা ওজনের ট্যাঙ্কগুলির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। যুদ্ধের ময়দানে নয়া অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামগুলির সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বয় গড়ে তোলাই এই মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল। এর সঙ্গে কোনও দেশকে (ভারত) খারাপ বার্তা দেওয়ার কোনও মনোভাব চিনের নেই।” যদিও চিনের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ ভারতীয় সামিরক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ‘কারণ ছাড়া কার্য হয় না’। কারণ খুব হিসেব কষেই কাজ করে লালফৌজের নিয়ন্ত্রক সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন। যদিও ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত স্পষ্ট জানিয়েছেন, “চিনা আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।”

army-web-1

এদিকে, ভারতের সেনাপ্রধানকে একহাত নেন কর্নেল উও কিয়ান। সম্প্রতি রাওয়াত বলেছিলেন, “ভারতীয় সেনা একসঙ্গে ‘আড়াইখানা যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আড়াইখানা শক্তির বিরুদ্ধে টানা লড়াই চালিয়ে যেতে ভারতীয় সেনাবাহিনী মানসিক ও শারীরিকভাবে পুরোপুরি তৈরি।” আড়াইখানা যুদ্ধ বলতে তিনি চিন, পাকিস্তান এবং ভারতের অভ্যন্তরে মাওবাদী ও অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধের কথা বলেছিলেন। রাওয়াতের মতে, মাওবাদী ও অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধই তো চালাচ্ছে সেনা ও সিআরপিএফ। এই প্রসঙ্গে কিয়ান বলেন, “ভারতীয় সেনাকর্তাদের কেউ বার বার ‘যুদ্ধ’ শব্দটা খুব উচ্চারণ করছেন। এরকম ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ করা থেকে তাঁরা বিরত থাকুন।  যুদ্ধ শব্দটি বার বার উচ্চারণ করলেই সমস্যা মিটে যাবে না। ভারতীয় সেনাকর্তারা বরং ‘ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন’। ইতিহাস থেকে দেখুন যুদ্ধ করার কী ফল হয়েছিল তাঁদের।” বলা বাহুল্য, লালফৌজের সামরিক মুখপাত্র ১৯৬২ সালের ভারত—চিন যুদ্ধের প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। সেই যুদ্ধে ভারতের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ভারতের প্রায় ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার পার্বত্য জমি চিনের কব্জায় চলে যায়। অরুণাচল, অসমে ব্যাপক হত্যালীলা চালিয়েছিল চিনা সেনারা।

[চিনকে কড়া জবাব দিতে সিকিমে সেনাপ্রধান রাওয়াত]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ