সুব্রত বিশ্বাস: মাওবাদী দৌরাত্মের চরম সাক্ষী থাকল বিহারের মাসুদান স্টেশন। পূর্ব রেলের মালদহ ডিভিশনের জামালপুর কিউল শাখার এই স্টেশনেই চড়াও হয় মাওবাদীরা। ট্রেন চলাচল বন্ধের দাবিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় স্টেশনে। অপহরণ করা হয় অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশন মাস্টার ও তাঁর সহকারীকে। এখনও তাঁদের খোঁজ মেলেনি।
[ ‘মোদি বৃদ্ধ হয়েছেন, ওঁর এবার রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া উচিত’ ]
ইউপিএ-২ আমল থেকেই মাওবাদীদের কোমর ভেঙে গিয়েছে বলা হলেও আদতে যে তা কিছুই হয়নি তারই প্রমাণ মিলল। মোদি সরকারও বারংবার মাওবাদী দমনের কৃতিত্ব দাবি করেছে। কিন্তু তাতে মাওবাদী কার্যকলাপে রাশ পড়েনি। মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ মাসুদান স্টেশনে চড়াও হয় প্রায় তিরিশ জন মাওবাদী। প্রত্যেকেরই হাতে ছিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। প্যানেল রুমে ঢুকে অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশন মাস্টার মুকেশ কুমারকে ট্রেন চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। মুকেশ তা মানতে অস্বীকার করেন। এরপরই তাঁকে ও তাঁর সহকারী নরেন্দ্র মণ্ডলের হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অজ্ঞাত কোনও জায়গায়। সেইসঙ্গে লণ্ডভণ্ড করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় প্যানেল রুমে।
[ ‘পাকিস্তান কখনও ষড়যন্ত্র করে না’, মোদির অভিযোগ খারিজ ফারুক আবদুল্লার ]
স্টেশনে আগুন দেখে এগিয়ে আসেন যাত্রীরা। তাঁদের চেষ্টাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় পুলিশ। রাত সাড়ে এগারোটা থেকেই পূর্ব রেলের সমস্ত শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ। ফলে হাওড়া-শিয়ালদহ গামী বহু ট্রেন আটকে পড়েছে। আরিপএফ ও রেল পুলিশ যৌথভাবে অপহৃতদের সন্ধান চালাচ্ছে। পূর্ব রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ট্রেন চলাচল বন্ধ না হলে অপহৃতদের খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। স্টেশনের আশেপাশের এলাকায় এখন চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তবে শুধু মাও দমন নয়। যেহেতু খোদ অ্যাসিস্ট্যান্ট স্টেশন মাস্টারই অপহৃত, তাই খানিকটা সাবধানেই অপারেশন চালাতে হচ্ছে তাঁদের।
[ বিরাটের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার বিস্ফোরক অভিযোগ বিজেপি নেতার ]
মাওবাদীদের হাতে অপহরণের ঘটনা আগে ঘটলেও বেশ কিছুদিন তা বন্ধ ছিল। প্রায় বিনা নোটিসে এরকম হামলা হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, বিভিন্ন অঞ্চলে সংগঠন ফের মজবুত করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সংগঠন। যেভাবে মাসুদান স্টেশনে তাণ্ডব চালিয়েছে মাওবাদীরা তা রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। মাও দমনের কৃতিত্ব বিভিন্ন সময় সরকার নিতে চাইলেও, এই ঘটনা ফের তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এদিকে স্টেশনে এরকম ঘটনা ঘটায় মাও আতঙ্ক গ্রাস করেছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। রীতিমতো সিঁটিয়ে রয়েছেন তাঁরা। রেল ও রাজ্য পুলিশ যৌথভাবে অপহৃতদের খোঁজে তল্লাশি চালালেও, এখনও তাঁদের কোনও সন্ধান মেলেনি।