সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জল্পনা ছিল আগেই। সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিলমোহর পড়ল এবার। পনেরো মাসের তদন্তে ইতি টেনে সহায় কমিশন জানিয়ে দিল, বেশিরভাগ সাক্ষীই বিশ্বাস করেন, ফৈজাবাদের গুমনামি বাবা আসলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
[নেতাজি কি সত্যিই বেঁচে রয়েছেন? নেটদুনিয়ায় তরজা তুঙ্গে]
বাংলামায়ের বীর সন্তান। মুখাবয়বের মিল ছিল। সাদৃশ্য ছিল আচার-আচরণে, কথাবার্তায়। এমনকী, সংবাদমাধ্যমসূত্রে এ-ও জানা গিয়েছিল যে, লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা ওই বাবার গোপন ট্রাঙ্ক থেকে না কি মিলেছে আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতার বেশ কিছু পারিবারিক ছবি এবং টেলিগ্রাম। মূলত এ সবের রেশ ধরেই এই চর্চার সূচনা হয় যে ‘গুমনামি বাবা’এবং সুভাষ বসু, আলাদা নন। আদপে একই ব্যক্তি। জল্পনা চলে বেশ কয়েক দশক। কখনও পক্ষে আবার কখনও বিপক্ষে সওয়াল হয়। আদালতে জমা পড়ে আবেদন। সব মিলিয়ে বিতর্ক বাড়ে। যার অবসান ঘটাতে এলাহাবাদ হাই কোর্টের নির্দেশে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন সপা সরকারের তরফে গঠিত হয় তদন্ত কমিশন। বিচারের ভার পড়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিষ্ণু সহায়ের উপর। ২০১৬ সালের জুন মাসে তদন্ত শুরু হয়েছিল। শেষ হল সম্প্রতি। তদন্ত-রিপোর্ট উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নায়েকের হাতে তুলে দিয়েছেন সহায়।
কী লেখা আছে ৩৪৭ পাতার ওই রিপোর্টে? পুরোটা খোলসা করেননি সহায়। তবে সংবাদমাধ্যমকে যেটুকু জানিয়েছেন, তার নির্যাস হল, তদন্তকারী কমিশনের সামনে উপস্থিত হয়ে যে সব সাক্ষী বয়ান দিয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করেন, ‘গুমনামি বাবা’ই আসলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সহায় বলেছেন, “কমিশনের কাছে দু’ধরনের প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ ছিল। এক, যে সাক্ষীরা আমার সামনে দাঁড়িয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। দুই, যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে হাজিরা দিতে পারেননি বলে হলফনামা পাঠিয়েছিলেন, যাকে আমি তাঁদের বয়ান হিসাবেই ধরে নিয়েছি। সাক্ষীদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, গুমনামি বাবাই নেতাজি। খুব কম মানুষই ভিন্নমত পোষণ করেছেন।”
[‘নেহরু নয়, নেতাজিই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী’]
তবে এর পাশাপাশি সহায় মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন, এই তদন্ত চালানো তাঁর পক্ষে একেবারেই সহজ ছিল না। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক ছিল সময়ের দীর্ঘ ব্যবধান। ২০১৩ সালে মুজফফরনগর সংঘর্ষের তদন্তকারী সহায় বলেছেন, “১৯৮৫-তে মৃত্যু হয়েছিল ফৈজাবাদের গুমনামি বাবার। আর তাঁকে যাঁরা দেখেছিলেন বা তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁরা সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছেন ২০১৬-১৭ সালে। তিন দশকেরও বেশি একটা সময়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষীদের মনে রাখার ক্ষমতা তো কমবে বই বাড়বে না! ঘটনার সত্যতা বিচারের সময় সেই বিষয়টাকেও মাথায় রাখতে হয়েছিল।” বিচারপতি সহায়ের দাবি, “কমিশনের বিচার্য বিষয় ছিল গুমনামি বাবার সঠিক পরিচয় খুঁজে বের করা। সাক্ষীদের একটা বড় অংশ আগেভাগেই এটা ধরে নিয়ে বয়ান দিতে শুরু করেছিলেন যে গুমনামি বাবা আসলে নেতাজিই। তাঁদের মানসিকতা অনেকটা এমন ছিল যে, যদি তাঁদের সঙ্গে কমিশনের মতের মিল না হয়, তবে গুমনামি বাবার প্রকৃত পরিচয় খুঁজে বের করা যেন একান্তভাবেই কমিশনের দায়। আসলে ওঁরা ঘোড়ার গাড়ি চালানোর সময় ঘোড়ার আগে গাড়ি রেখে সেটা চালাচ্ছিল।”