Advertisement
Advertisement

Breaking News

সীমান্তের উত্তেজনায় নির্লিপ্ত আমজনতা, ক্যারম আর ক্রিকেটে স্বস্তি খুঁজছে ভূস্বর্গ

বনধের থমথমে পরিবেশ কাটিয়ে খেলায় মজেছেন উপত্যকার মানুষ।

People in Srinagar find peace through games
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 28, 2019 11:20 am
  • Updated:February 28, 2019 11:20 am

পুলওয়ামা পরবর্তী সময়ে টানটান উত্তেজনা উপত্যকাজুড়ে। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ফাঁকা পথঘাট। কিন্তু এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেও খেলায় মজেছেন জম্মু-কাশ্মীরের আমজনতা। ইনডোর, আউটডোর গেমসেই ভুলতে চাইছেন অশান্তি। গ্রাউন্ড জিরো থেকে জানাচ্ছেন প্রতিনিধি সোম রায়।

শহর জুড়ে দু’দিনের বনধ। সকাল সকাল ফোন ড্রাইভার শাকিব ভাইয়ের। জানালেন, এখনও চলছে পেট্রলের হাহাকার। একটি পাম্পের খোঁজ মিলেছে, যেখানে পেট্রল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে শ’খানেক গাড়ির লাইন। তাই অহেতুক সময় নষ্ট না করে তাই গুটিগুটি পায়েই বেরিয়ে পড়া হল শহর ভ্রমণে। হোটেল থেকে বেরিয়ে যে ছবি নজরে এল, তাতে চমকে উঠতে হয়।আশপাশের সব দোকান বন্ধ। সেই সুযোগে ডাল গেট রোডের প্রতাপেশ্বরী মন্দিরের সামনে বসেছে ক্যারম বোর্ডের আসর। শ্রীনগর-লে হাইওয়েকে এক পাশে রেখে ডাল গেট ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে এগোতে গিয়ে দেখা গেল, জোরকদমে চলছে ক্রিকেট। শর্টপিচ বল জোরে পুল করায় গিয়ে পড়ল ডাল লেকের জলে। ব্যাটসম্যান আউট। কিন্তু বল? নো টেনশন। ঝোলা থেকে বেরিয়ে এল নতুন বল। উঁকি দিতে দেখা গেল প্রায় এক ডজন প্লাস্টিক বল রয়েছে সেখানে।

Advertisement
পাক হামলার জবাব দিতে ফের সেনাকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবিগুলো কেমন যেন অন্যরকম লাগল শহর কলকাতা থেকে আসা মনে। শ্রীনগর থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দুরে বদগামে সক্কালবেলাতেই ভেঙে পড়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার একটা চপার। মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। একটু পরই খবর এল, ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়া পাকিস্তানের F16 যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ওদিকে আবার পাক সীমান্তের ওপারে আটক হয়েছেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। যাকে বলে ঘটনার ঘনঘটা।

Advertisement

aircraft
গোটা দেশ তখন উত্তাল। অথচ শ্রীনগর নির্বিকার। তারা পালন করছে বনধ। হ্যাঁ, পালন করছে। কেউ জোর করে দোকান বন্ধ করতে বলেনি। আপাতদৃষ্টিতে যা স্বতঃস্ফুর্ত, তা আসলে অভ্যাস। শহর কলকাতার মতোই। সবাই তাই বনধ পালন করছেন। ক্রিকেট খেলে। ক্যারম পিটিয়ে। চুটিয়ে আড্ডা মেরে।

কারগিলে যুদ্ধবন্দি বায়ুসেনার দুই পাইলট নচিকেতা ও অজয় আহুজার কী পরিণতি হয়েছিল?

আগেরদিন একটা ইঙ্গিত মিলেছিল। কাশ্মীরিরা ব্যস্ত নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে। তাঁরা চিন্তিত কীভাবে এই আতঙ্কের পরিস্থিতির মধ্যেও সুখে,শান্তিতে থাকা যায় নিজেদের পরিবারের সঙ্গে। তাই বলে এভাবে সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে যাবে ভূস্বর্গ? নিজের প্রশ্নের এই উত্তর খুঁজতেই স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা শুরু। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সামনে চায়ের দোকানে তখন আড্ডা জমিয়েছেন স্থানীয়রা। নিজেকে ট্যুরিস্ট পরিচয় দিয়ে শুরু তাদের সঙ্গে কথাবার্তা। শুরুতেই একজন বলে উঠলেন, “আসলে বিষয়টা কী বলুন তো, ভারত হোক বা পাকিস্তান – যে যাকেই আক্রমণ করুক, করবে তো আমাদের উপর দিয়েই। কাজেই আগুন যেদিকেই লাগুক, পুড়তে হয় আমাদের। তাই আমরা এসব থেকে দূরে নিজেদের সুরক্ষার কথাই ভাবি শুধু। আমাদের জন্য কোনও সরকারই কিছু করে না।” মাঝবয়সী চা ওয়ালা ইউসুফ বলে উঠলেন, “দাদা আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কথা কেউ ভাবে না।” তাহলে এই বন্‌ধ? দোকানপাট, ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ থাকলে তো ক্ষতি ‘গরিব মানুষ’-এরই। পাশে দাঁড়িয়ে ছোলা, খেজুর বিক্রেতা বললেন, “যারা বনধ ডেকেছে, তারা তো আমাদের হয়েই কথা বলে।” কিন্তু তারা তো বিচ্ছিন্নতাবাদী। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ নাকি ভারত বা পাকিস্তান কোনও দেশের অধীনেই থাকতে চায় না? তাহলে পাকপন্থীদের সমর্থন কেন? এবার যিনি উত্তর দিলেন, কলকাতার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। সল্টলেকে কাশ্মীরি হস্তশিল্পের দোকান রয়েছে তাঁর দাদার। বছরে অন্তত তিন মাস তিনি থাকেন কলকাতায়। ইকবাল বাট বলছিলেন, “খুব একটা অযৌক্তিক কথা বলেননি। কিন্তু ওই যে উনি বললেন! ওরা যেমন আমাদের কথা বলে, তেমনই ওদের সাহায্য করাও তো আমাদের কর্তব্য।” এই সময়ই সাইরেন বাজিয়ে গেল কয়েকটি
গাড়ি। আঙুল দেখিয়ে বললেন, “ওই দেখুন আবার হয়তো কারও বাড়িতে রেড করতে বা গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছে। ভারত ওদের সব নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সাধারণ মানুষই ওদের বাড়ি পাহারা দেয়। জানেন কি সে কথা? মঙ্গলবার যখন হুরিয়ত কনফারেন্সের চেয়ারপার্সন উমর ফারুকের বাড়িতে রেড করে এনআইএ, গেটের বাইরে তখন শ’য়ে-শ’য়ে মানুষ। সিআরপিএফ ডেকে তাদের সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়েছে এনআইএ-কে।” সেই মুহূর্তে চোখেমুখে আতঙ্ক ফুটে উঠল চায়ে-পে-চর্চারত কাশ্মীরিদের। সঙ্গে একরাশ বিরক্তি।

kashmir-streets

অভিনন্দনের যেন কোনও ক্ষতি না হয়, পাক ডেপুটি হাই কমিশনারকে হুঁশিয়ারি নয়াদিল্লির

পরে জানা গেল, পুলওয়ামা নাশকতার তদন্ত করতে এনআইএ এদিন দক্ষিণ কাশ্মীরের ১১টি জায়গায় রেড করে। যার মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মহম্মদ শাবান দার, শওকত মৌলবি এবং ইয়াসমিন রাজার বাড়িতেও চলে অভিযান। সিল করা হয়েছে বেশ কিছু মোবাইল, সিম কার্ড, ইলেকট্রনিক ডিভাইস-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি। পদব্রজে রাজপথে উঁকি মেরে পরিষ্কার হল কয়েকটি বিষয়। দুই দেশের লড়াইয়ে মাথাব্যথা নেই শ্রীনগরের। উল্টে তারা ধরেই নিয়েছে, যুদ্ধ লাগল বলে। আবার পুড়ল তাঁদের কপাল। পাহাড়ঘেরা ডাল লেকের শহরেও তাই কেমন ভারী হয়ে আছে চারিদিক। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, এয়ারস্ট্রাইকের মতো ভারী ভারী শব্দ সরিয়ে তাদের চিন্তা, কত তাড়াতাড়ি ঠিক হবে জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়েতে ধসে যাওয়া রাস্তা। তাহলে সহজেই আসবে পণ্যবাহী গাড়ি। শহরে ঢুকবে পেট্রল, আনাজপাতি। তাহলে অন্তত কিছুটা স্বস্তি মিলবে এই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে। তার মাঝে ক্যারম আর ক্রিকেট খেলেই সাময়িক স্বস্তি ভূস্বর্গের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ