Advertisement
Advertisement
মুজফ্ফরপুরের মাতৃহারা অসহায় শিশু

অবশেষে ভাঙল ঘুম! মুজফ্ফরপুরের মাতৃহারা অসহায় শিশুদের পাশে নেতা-মন্ত্রীরা

স্টেশনে মৃত মাকে জাগানোর চেষ্টা করা এই শিশুরাই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

Political leaders helps Bihar's Muzaffarpur's helpless viral kids
Published by: Sayani Sen
  • Posted:June 1, 2020 10:37 am
  • Updated:June 1, 2020 11:45 am

গৌতম ব্রহ্ম: অ্যাসবেস্টসে ছাওয়া একচিলতে ঘর। কোনওক্রমে দুই নাতিকে নিয়ে মাথা গুঁজে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শায়রুন বিবি ও ভোকা মির। মেয়ে আরভিনা খাতুনকে কবর দেওয়ার পর সেই যে ঘরে ঢুকেছেন, আর বেরোননি। বেরোনোর দরকারও হয়নি। কারণ, এখন যে সবাই ওঁদের একচিলতে ঘরেই এসে ভিড় জমাচ্ছেন! সরকারি অফিসার থেকে জনপ্রতিনিধি, নেতা থেকে স্বেচ্ছাসেবী। সবাই পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন। উপহার-আদরে ভরিয়ে দিচ্ছেন দুই নাতি আরমান ও রহমতকে।

অথচ আহমেদাবাদ থেকে বিহারের মুজফ্ফরপুরে আসার সময় ঠিকমতো খাবার জোটেনি দুই শিশুর। অনাহারক্লিষ্ট রুগ্ন শরীরে ট্রেনযাত্রার ধকল নিতে পারেননি দুই শিশুর মা আরভিনা খাতুন। মুজফ্ফরপুরে নামার পর প্ল্যাটফর্মে শুয়ে পড়েছিলেন ২৩ বছরের তরুণী। আর ওঠেননি। দেড় ঘণ্টা প্ল্যাটফর্মেই পড়ে ছিল আরভিনার নিথর দেহ। সহযাত্রীরা একটি কাপড়ে ঢেকে দিয়েছিলেন আরভিনাকে। দেড় বছরের রহমত বারবার সেই কাপড় সরিয়ে মাকে জাগানোর চেষ্টা করেছে। অবোধ শিশুর সেই মিনিটখানেকের ভিডিও নিমেষে ভাইরাল রয়েছে।

Advertisement

তার দৌলতেই এখন রহমতদের ঘরে রাজা-উজির সবাই। আরজেডি-র তেজস্বী যাদব ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। বিহারের সমাজকল্যাণ দপ্তর ‘পরবরীস’ প্রকল্পের আওতায় মাসে মাসে ৪ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার কল্যাণ তহবিল থেকেও ২০ হাজার টাকা অনুদান মিলেছে। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন অখ্যাত ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া’র বিহার রাজ্যের সভাপতি নাসিম আখতার। তিনি নিজে দু’টি বাচ্চার সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে চাইলেন।

Advertisement

সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন কাটিহারের প্রাণপুরের মায়াদঙ্গি গ্রামে। এখানেই নানা-নানির সঙ্গে রয়েছে আরমান-রহমত। অবোধ দুই শিশু এখনও বুঝতে পারেনি, মা তাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গিয়েছে। এদিন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর তরফে নাসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানালেন, “বাচ্চা দুটোর সারা জীবনের খরচ বহন করতে চাই। দরকার হলে বাড়িতে এনে নিজের ছেলের মতো মানুষ করব। সেই ইচ্ছে নিয়েই রহমতদের বাড়ি গিয়েছিলাম।” বাড়ির লোকজন অবশ্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সময় চেয়েছেন। নাসিমের নিজস্ব স্কুল রয়েছে। সেই স্কুলেই আপাতত ভরতি করে নিতে চান আরমানকে।

[আরও পড়ুন: আমফানের পর নতুন বিপর্যয়ের আশঙ্কা, শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ‘হাইকা’]

নাসিম জানালেন, “খুব দুঃখজনক ঘটনা। রহমত পেটে থাকার সময় আরভিনাকে ছেড়ে চলে যায় স্বামী মহম্মদ ইসলাম। ছেলে দুটোকে মানুষ করার জন্যই আট মাস আগে আহমেদাবাদ গিয়ে নির্মাণ শ্রমিকের সহযোগীর কাজ নিয়েছিল আরভিনা।” বছর সাতেক আগে উত্তরপ্রদেশের বরেলির ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আরভিনার। শায়রুনের অভিযোগ, পোয়াতি অবস্থায় মেয়েকে তালাক দিয়ে চলে যায় ইসলাম। কোনও খোঁজ নেয়নি। শায়রুনের আর এক জামাই মহম্মদ ওয়াজির আমেদাবাদে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনিই আহমেদাবাদে আরভিনার কাজের ব্যবস্থা করে দেন।

একটি নির্মাণ প্রকল্পে সেই থেকেই ৩০০ টাকা রোজে হেল্পারের কাজ করছিলেন আরভিনা। লকডাউন হওয়ার পর টাকায় টান পড়ে। বাধ্য হয়েই দুই ছেলেকে নিয়ে কাটিহারে ফেরার ট্রেন ধরেন আরভিনা। আরভিনার সঙ্গে ছিলেন ওয়াজির। তিনিই জানিয়েছেন, ২৩ মে শ্রমিক স্পেশ্যালে উঠেছিলেন তাঁরা। তখন খাবার দেওয়া হয়েছিল। ফের খাবার দেওয়া হয় ২৫ মে। আরভিনা-সহ অনেক যাত্রীই অনাহারে ছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে আরভিনার দেহের অন্ত্যেষ্টি নিয়েও। জানা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিক হওয়া সত্ত্বেও আরভিনার কোনও কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা হয়নি। অজ্ঞাত কারণে মৃত্যু হলেও, হয়নি ময়নাতদন্ত।

[আরও পড়ুন: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় রেকর্ড হারে মৃত্যু, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সংক্রমিতের সংখ্যাও]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ