শুভঙ্কর বসু: ভর দুপুরেও কিছুই দেখা যাচ্ছে না। না সামনের সিগনাল বাতি। না লোহার পাটি। চারপাশে ঘন সাদা ধোঁয়াটে দেওয়াল। দৃশ্যমানতা ‘শূন্য’! হেমন্তকাল এলেই ভারতীয় রেলে এটাই চেনা ছবি। হেমন্ত থেকে গোটা শীতকাল জুড়ে উত্তর ও উত্তর পূর্ব ভারতে দিনভর ঘন কুয়াশা। বিপর্যস্ত ট্রেন চলাচল। কোনও ট্রেন ২৪ ঘণ্টা লেট, কোনটি তারও বেশি। প্রতিবছরই এই সময়টা একাধিক ট্রেন বাতিল করতে হয়। চলতি মরশুমেও ছবিটা পালটায়নি। শীতকালের চেনা শত্রু সেই কুয়াশা-অসুরকে জব্দ করতে শেষপর্যন্ত প্রযুক্তির শরণাপন্ন ভারতীয় রেল। ভারতীয় রেল বোর্ডের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, দেশের কুয়াশা অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ‘ফগ পাস ডিভাইস’ ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্যেই কুয়াশার কবলে থাকা বিভিন্ন ট্রেনে পরীক্ষামূলকভাবে এই ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী ক’দিনের মধ্যেই আরও ছ’হাজার ‘ফগ পাস ডিভাইস’ কেনা হচ্ছে বলে রেলমন্ত্রক সূত্রে খবর।
কী এই ফগ পাস ডিভাইস?
রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, ‘ফগ পাস ডিভাইস’ একটি গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস নির্ভর যন্ত্র। জিও ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এটি কাজ করে। যেখানে জিপিএসের মাধ্যমে এই যন্ত্রে বিভিন্ন স্টেশনের লোকেশন, রেলপথের পাশে থাকা ওয়ার্নিং বোর্ড, সিগন্যাল, লেভেল ক্রসিং, হুইসল লিমিট বোর্ড ইত্যাদি আগে থেকেই নির্দিষ্ট বা ‘সেট’ করা থাকে। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকলেও যন্ত্রের সাহায্যে স্টেশন কিংবা লেভেল ক্রসিং, সবই ফুটে ওঠে ট্রেনের চালক বা গার্ডের চোখের সামনে। কিছুটা দূর থেকেই অডিও-ভিডিও অ্যালার্মের মাধ্যমে লোকো পাইলট জানতে পারেন সব কিছু। পাশাপাশি ট্রেনের গতি কিংবা পরবর্তী গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছতে কত সময় লাগবে, সবই বলে দেয় এই ‘ফগ পাস ডিভাইস’। রেল সূত্রে খবর, এই যন্ত্রের সঙ্গে লোকো পাইলটদের অভ্যস্ত করতে ইস্ট সেন্ট্রাল ডিভিশন, নর্দার্ন ডিভিশন ও নর্থ সেন্ট্রাল রেলওয়ে ডিভিশনে আপাতত ৬৯৪০টি ‘ফগ পাস ডিভাইস’ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এই সংখ্যাটা যথেষ্ট নগণ্য। তাই চলতি মরশুমে আরও ফগ পাস ডিভাইস কিনছে রেল। মন্ত্রক সূত্রে খবর, কুয়াশা অধ্যুষিত রুটগুলির জন্য আরও ছয় হাজার ‘ফগ পাস ডিভাইস’ কেনা হচ্ছে চলতি মাসেই।
[চিন-পাকিস্তানের উপর নজর রাখতে মহাকাশে পাড়ি দিল ‘মাইক্রোস্যাট-আর’]
রেল বোর্ডের এক কর্তা জানাচ্ছেন, গত বছর জানুয়ারির এই সময়টা কুয়াশার কারণে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষকে। উত্তর ও উত্তর পূর্ব ভারতে ঘন কুয়াশার দাপটে গত জানুয়ারিতেই রুটগুলিতে অন্তত ৪০০টি ট্রেন ভয়ঙ্কর দেরির কবলে পড়ে। বাতিল করতে হয় একাধিক ট্রেন। এবার ফগ পাস ডিভাইসের সহায়তায় ছবিটা অনেকটা ভাল, দাবি ওই রেল কর্তার। জানা গিয়েছে, আপাতত যেখানে ‘ফগ পাস ডিভাইস’ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না সেখানে কুয়াশার মধ্যে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে একাধিক বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে একটি নির্দিষ্ট স্পিড লিমিট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। লোকো পাইলটকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রিজিওনাল ডিভিশনগুলিকে সিগন্যাল ও সাইটিং বোর্ডগুলির দৃশ্যমানতা বাড়তে বলা হয়েছে। পাশাপাশি লোকো পাইলটকে সাহায্যের জন্য ‘ফগ সিগন্যাল ম্যান’ও নিয়োগ করতে ডিভিশনগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে রেল।
[হাড় কাঁপানো শীতের বিদায়, শুরু সূর্যের উত্তরায়ণ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.