দেবশ্রী সিনহা: ভারতে ভয়াবহ হামলা চালানোর হুমকি দিল ইসলামিক স্টেট ওরফে দায়েশ৷ ভারত সরকারকে চরম শিক্ষা দিতে ভারতে বিস্ফোরণ, হত্যাকাণ্ড ও ধবংলীলা চালানো হবে বলে এই প্রথম সরাসরি হুমকি দিল তারা৷ ভারতের উপর হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে শনিবার একটি ভিডিও টেপ প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট ৷ ভিডিও টেপ-এ দেখা গিয়েছে মুম্বইয়ের থানে এলাকার বাসিন্দা ফাহাদ তনবির শেখ নামে এক যুবক বলছে, “ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিটি অত্যাচারের বদলা নেব আমরা৷ তোমরা কি মুম্বইয়ের ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনা ভুলে গেছ? গুজরাতের ঘটনা ভুলে গেছ? দিল্লির ঘটনা ভুলে গেছ?”
ভিডিওটিতে ওই ভারতীয় দায়েশ জঙ্গি হুমকি দিয়েছে, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধবংস থেকে শুরূ করে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের অত্যাচার, গুজরাতের দাঙ্গা, মুজফফরনগরের দাঙ্গা-সহ প্রতিটি জায়গার মুসলিমদের উপর আক্রমণের বদলা খুব শীঘ্রই নেবে তারা৷ ভারতে বিধর্মীদের উপর হত্যালীলা চালানো হবে৷ এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমতো চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে সাউথ ব্লকের শীর্ষ আধিকারিকদের মধ্যে৷ কারণ এই প্রথম কোনও ভারতীয় জঙ্গিকে সামনে রেখে সরাসরি ভারতকে উদ্দেশ্য করে কোনও ভিডিও টেপ প্রকাশ করল আইএস (আরবি ভাষায় নাম দায়েশ)৷ যাতে ফাহাদ তানবির শেখ বলেছে, “খুব শীঘ্র আমরা ফিরছি৷ তবে এবার হাতে তরোয়াল নিয়ে৷ তোমাদের গলার নলি কাটতে আসব আমরা৷ মুসলিমরা ভারতে নিরাপদ নয়৷ আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷” ভিডিওতে ফাহাদ তানবির ছাড়াও আরও কয়েকজন জঙ্গিকে দেখা গেলেও তাঁদের পরিচয় বোঝা যায়নি৷ তবে মনে করা হচ্ছে এদের সকলেই পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের প্রাক্তন সদস্য৷ কারণ ভিডিওয় তাদের কথাবার্তা থেকেই সেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে৷ এ হেন হুমকির পর রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন৷
এই হুমকির প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, ধর্ম ও জাতপাত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে বদ্ধপরিকর কেন্দ্রীয় সরকার৷ নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক বুদ্ধ পূর্ণিমা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দায়েশের. নয়া হুমকি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি বলেন, “দেশকে যে কোনও বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে কেন্দ্র সবরকম ব্যবস্থা করছে৷ ভারতের সব ধর্ম ও জাতপাতের মানুষ নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাবে৷ সর্বশক্তি দিয়ে সন্ত্রাসবাদকে রোখা হবে৷ এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ৷” এ ধরনের হুঁশিয়ারির ভিডিও আদতে মানুষের মনে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুও৷ এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ভিডিও আসতেই থাকে৷ এই হুমকির পিছনে আইএস বা যে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনই থাকুক তারা কোনও পরিস্থিতিতেই ভারতের মাটিতে কাউকে প্রভাবিত করতে পারবে না৷” তানবির ও তার সঙ্গীদের কথায়, “বাটলা হাউজ এনকাউন্টারের পর আমাদের জন্য পরিস্থিতি যথেষ্ট প্রতিকূল হয়ে গিয়েছে৷ এটিএস(সন্ত্রাস দমন শাখা), পুলিশ, গোয়েন্দারা আমাদের পিছনে পড়ে গিয়েছে৷ আমরা কোনওমতে ভারত ছেড়ে পালিয়ে এসে খোরাসানে পৌঁছেছি৷ মুজাহিদদের সঙ্গে জেহাদ চালিয়ে যাচ্ছি৷”
এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই তানবিরের পরিচয় এবং ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু করে দিয়েছে পুলিশ৷ গোয়েন্দা সূত্রে খবর, প্রথম জীবনে থানে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিল ফাহাদ তানবির শেখ৷ ২০১৪ সালের মে মাসে মুম্বইয়ের কল্যাণের আরিফ মজিদ, আমান ট্যান্ডেল, শহিম টাঙ্কি এবং ফাহাদ তানবির শেখ আইএস-এ যোগ দিতে ইরাক পাড়ি দেয়৷ এদের মধ্যে এনআইএ গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে গিয়েছে মজিদ৷ সিরিয়া থেকে ফেরার চেষ্টা করার সময়ই এনআইএ-র জালে ধরা পড়ে সে৷ গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত বছর রাক্কায় এক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে টাঙ্কি৷ এখনও পর্যন্ত আমান ট্যান্ডেলের হদিশ পেতে হন্যে হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তদন্তকারীরা৷