Advertisement
Advertisement

Breaking News

farmers Protest

আন্দোলনের পাশাপাশি ‘ধর্ম’ পালন কৃষকদের, চলতি মরশুমে রেকর্ড গম উৎপাদন দেশে

আন্দোলন সামলে কীভাবে চলত চাষবাস?

Record yield despite farm protest shows farmers' resolve | Sangbad Pratidin
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 30, 2021 3:55 pm
  • Updated:April 30, 2021 3:55 pm

সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: এ যেন উলটপুরাণ। গত পাঁচমাস নিজেদের দাবি আদায় করতে দিল্লির রাজপথে হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন কৃষকরা (Farmers)। তার উপর দেশজুড়ে চলছে কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ। করোনাসুরের মারাত্মক ছোবলে ওষ্ঠাগত প্রাণ আসমুদ্রহিমাচলের। এই দুই কারণে মাথায় হাত পড়েছিল অনেকের। অনড়, একরোখা কৃষকদের জেদের সামনে হয়তো টান পড়বে দেশের শষ্যভান্ডারে। এই দুঃস্বপ্ন ভিড় করছিল অনেকের চোখে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সম্পূর্ণ উলটো ছবি।

এখন চলছে ফসল কাটাইয়ের মরশুম। দিল্লির বিভিন্ন সীমানায় নিজেদের অধিকার বুধে নেওয়ার সংগ্রাম জারি রাখার পাশাপাশি পাঞ্জাব (Panjub), হরিয়ানা (Haryana), উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের অন্নদাতারা ব্যস্ত মাঠে ফলে থাকা সোনালি শষ্য গুদামে তোলার কাজে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফসল ফলার যে পূর্বাভাস আসছিল, দেখা গেল তাই সত্যি হল। চলতি মরশুমে ভারতবর্ষে ১০ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়েছে। যা সর্বকালীন রেকর্ড। রোজই অল্প অল্প করে খেত থেকে গুদাম হয়ে যা রওনা দিচ্ছে এফসিআই গুদামের দিকে। কিন্তু কীভাবে হল এই মিরাকল? কীভাবে দিল্লির রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণ শষ্য উৎপাদন করা গেল ও তা খেত থেকে তোলাও গেল?

Advertisement

[আরও পড়ুন: কেন্দ্র ও রাজ্যে ভ্যাকসিনের পৃথক দাম কেন? মোদি সরকারকে বিঁধল সুপ্রিম কোর্ট]

কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২৬ নভেম্বর ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনের ডাক দেন দেশের অন্নদাতারা। ততদিনে তাঁরা খরিফ মরশুমের শষ্য তোলা, ট্রাক্টর ও হালের মাধ্যমে জমি তৈরি করে নেওয়া, সার মেশানো, সবশেষে রবি মরশুমের ফসল বপনের কাজ করে ফেলেছিলেন। এরপরই নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে পথে নামেন তাঁরা। প্রথমে বোঝেননি এত লম্বা চলবে আন্দোলন। তবু ঝুঁকি না নিয়ে মাঝের সময়ে খেতের শষ্য দেখাশোনার কাজের দায়িত্ব দিয়ে এসেছিলেন বাড়ির মহিলা ও ছোটদের হাতে। তাঁদের কাজ ছিল মূলত দৈনন্দিন খেতের দেখভাল করা। পোকা ধরল কিনা, জমিতে ঠিকঠাক জলের ব্যবস্থা করা, ইত্যাদি।

Advertisement

এর মাঝেই কাটতে থাকল সময়। সাধারণতন্ত্র দিবসের পর থেকে যখন সরকার তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করা বন্ধ করে দিল, তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসতেন কৃষক নেতারা। মার্চের মাঝামাঝি এমনই এক আলোচনায় ওঠে ফসল কাটাই মরশুমের রণকৌশল কী হবে, সেই প্রসঙ্গ। ঠিক হয়, খেতজুড়ে সোনার ফসলকে নির্দিষ্ট সময়ে তুলতেই হবে। তার অসম্মান করা যাবে না। তাহলে সমুহ বিপদ। সিদ্ধান্ত হয় চালু করা হবে রোটেশন পদ্ধতি। প্রত্যেক গ্রাম থেকে একটি করে প্রতিনিধি দল দিল্লি সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবাদ করবে। বাকিরা ফসল কাটাইয়ের কাজ করবে। বড় গ্রাম থেকে গড়ে ৪০ ও ছোট গ্রাম থেকে গড়ে ১৫-২০ জনকে দিল্লি সীমানায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে গড়ে সাত থেকে দশদিন বিক্ষোভ (Farmers Protest) দেখিয়ে সবাই ফিরে আসতেন গ্রামে। একইভাবে দিল্লির ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা গ্রামগুলিকে দেওয়া হয় অতিরিক্ত দায়িত্ব। প্রতি গ্রাম থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধিকে পাঠানো হত সীমান্তে। যে বা যাঁরা একদিন বিক্ষোভস্থলে গেলেন, তাঁদের পরবর্তী ডাক আসত দু’সপ্তাহ পর। রীতিমতো রোস্টার করে তৈরি করা হয়েছিল রুটিন।

[আরও পড়ুন: পর্যাপ্ত টিকার অভাব, ১ মে থেকে প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকাকরণে নারাজ একাধিক রাজ্য]

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার অন্যতম নেতা দর্শন পালের মতে, “সরকার নিজেদের রাজধর্ম পালন করতে ব্যর্থ। আমরা তো আর নিজেদের কিষাণ ধর্ম পালনে ব্যর্থ হতে পারি না। তাই নিজেদের অধিকার রক্ষার লড়াই করার পাশাপাশি দেশবাসীর পেটের ব্যবস্থাও করে গিয়েছি নিষ্ঠার সঙ্গে।” হাসি মুখে গোটা প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিলেন গাজিয়াবাদ সীমানায় বিক্ষোভরত এক যুবক কৃষক। হিন্দু মুসলিম শিখ ইসাই ভাইচারা নামক সংগঠনের সদস্য করণ বাওয়ার কথায়, “কেন্দ্র ভাবছিল আমাদের পাত্তা দেবে না, আর আমরা হতোদ্যম হয়ে বাড়ি চলে যাব। ওরা খুব ভাল করে জানত যে, দেশের সঙ্গে গদ্দারি কিছুতেই করব না আমরা। তাই চাষের কাজ জান লাগিয়ে করব। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের নেতারা যেভাবে যা নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা শুধু তা পালন করেছি।” কীভাবে আন্দোলন করার পাশাপাশি নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে হয়, তা দেখিয়ে দিলেন অন্নদাতারা। প্রমাণ হল, আন্দোলন মানে শুধু বনধ, হরতাল নয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ