সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগল শিব সেনা। দলের মুখপত্র ‘সামনা’র সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়েছে, নোট বাতিলে লাভের লাভ কিছুই হয়নি, সব কালো টাকাই কোনও না কোনওভাবে ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছে। ফিরে আসেনি যে ১% টাকা, সেটাও সম্ভবত কালো টাকা নয়। মধ্যবিত্তরা লাইনে দাঁড়িয়ে নোট জমা করেননি বলেই ওই টাকা ফেরেনি। পাশাপাশি, নতুন নোট ছাপাতে ও তার বিজ্ঞাপনে কেন্দ্র ২১ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে বলেও মোদিকে বিঁধেছে শিব সেনা।
বস্তুত, আরবিআইয়ের বার্ষিক রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই মোদিকে আক্রমণে নেমেছে শিব সেনা। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টে প্রকাশ, বাতিল হয়ে যাওয়া পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ৯৯ শতাংশই বাজার থেকে তুলে নেওয়া গিয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, তবে কালো টাকা রুখতে নোটবন্দি অভিযান চালিয়ে সরকারের কী লাভ হল? ‘কালো টাকার’ প্রায় সবটাই যদি সরকারের ঘরে ফিরে আসে, তবে তা ‘কালো’ হয় কীভাবে?
[এবার রাম রহিমের সর্বক্ষণের সঙ্গী হানিপ্রীতের বিরুদ্ধে ‘লুকআউট নোটিস’ জারি]
আরবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, নভেম্বরে বাতিলের সময় বাজারে ছড়িয়ে থাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের মূল্য ছিল ১৫ লক্ষ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছে ১৫ লক্ষ ২৮ হাজার কোটি টাকার নোট। অর্থাৎ ১৬ হাজার কোটি টাকার নোট ফেরেনি। যদিও শিব সেনার দাবি, প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় ফেরেনি। শুধু তাই নয়, নতুন নোট ছাপাতে কেন্দ্র জলের মতো অর্থ ব্যয় করেছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে ‘সামনা’য়। শুধু বিজ্ঞাপন ও মোদির ইমেজ প্রতিষ্ঠিত করতেই এই টাকা খরচ হয়েছে বলে অভিযোগ। কালো টাকার বেশিরভাগটাই মুম্বইয়ের মতো বড় বড় শহরের রিয়াল এস্টেটের ব্যবসায় লগ্নি করা হয়েছে।
২০১৬-১৭ বার্ষিক রিপোর্ট কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পক্ষে জানানো হয়, নোট বাতিলের আগে বাজারে চালু ১০০০ টাকার নোটের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৩২ কোটি। নোট বাতিলের পরবর্তী পর্যায়ে ১.৪ শতাংশ ফেরেনি। দাবি, মোতাবেক ১০০০ টাকার ৮.৯ কোটি নোট ফেরেনি। মূল্যের নিরিখে যা ৮৯০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আরও জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ৩১ মার্চের হিসেব অনুযায়ী পুরনো ও নতুন মিলিয়ে ৫০০ টাকার প্রায় ৫৮৮ কোটি নোট বাজারে ছড়িয়ে ছিল। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চের হিসাব অনুযায়ী, এই সংখ্যা ছিল ১৫৭০ কোটি নোট।
[মধ্যরাতে পদত্যাগ ৬ মন্ত্রীর, মোদির মন্ত্রিসভায় বড়সড় রদবদলের ইঙ্গিত]
আরবিআইয়ের মতে, নোট বাতিল হওয়ার পর নতুন ২০০০ ও ৫০০ টাকার নোট ছাপতে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ৭,৯৬৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তার আগের অর্থবর্ষে এই খাতে ৩,৪২১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। অর্থাৎ, নোট ছাপার খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আয় কমেছে, খরচ বেড়েছে। আরবিআই জানিয়েছে, এই সময়ে আয় ২৩.৫৬ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, খরচ বেড়েছ ১০৭.৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ, দ্বিগুণেরও বেশি। তাই আরবিআইয়ের মোট লাভ অর্ধেক কমে গিয়েছে।
নোট বাতিলের ফলে জঙ্গিদের শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া গিয়েছে বলে মোদি যে দাবি করেছেন, সেটাও উড়িয়ে দিয়েছে শিব সেনা। দলের তরফে পরিসংখ্যান পেশ করে দাবি করা হয়েছে, নোট বাতিলের এক মাস পরেই পাকিস্তান থেকে ছাপানো ২০০০ টাকার নকল নোট চলে আসে ভারতে। নোট বাতিলের পরেই বরং শহিদ জওয়ানের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে দলের তরফে। মোদির খামখেয়ালির জন্য মধ্যবিত্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি নাকাল হচ্ছেন, আর গোলাপি নোট বিজেপির কাছে পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে জয়ের দরজা খুলে দিচ্ছে বলেও তোপ দেগেছে শিব সেনা।