Advertisement
Advertisement
First Kashmir War

স্বাধীনতার ২ মাস পরই শুরু প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ! নেপথ্যে সেই কাশ্মীর

পহেলগাঁও হামলার পর ফের যুদ্ধের মেঘ ঘনাচ্ছে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে!

The First Kashmir War: India-Pakistani War of 1947-1948
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 26, 2025 7:55 pm
  • Updated:April 26, 2025 8:05 pm  

বিশ্বদীপ দে: পহেলগাঁও। ২২ এপ্রিল অপরাহ্ন থেকেই গোটা দেশের নজরে জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে অবস্থিত ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’। সেখানকার মাটিতে লেগে থাকা রক্তদাগের করুণ বিবরণ শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে আসমুদ্রহিমাচলকে। কেবল শোক নয়, এরই পাশাপাশি জন্ম নিয়েছে তীব্র রাগও। সেই সঙ্গে জন্ম নিয়েছে প্রশ্ন। এবার কি তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধবে ফের? আরও একবার মুখোমুখি হবে দুই প্রতিবেশী! চর্চায় কাশ্মীর। আর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। দুইয়ের মধ্যে সম্পর্কও যে পুরনো। দেশভাগের অব্যবহিত পরেই নতুন জন্ম নেওয়া পাকিস্তান যে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল তার নেপথ্যেও তো কাশ্মীরই! আবারও কোনও লড়াই শুরু হলে ইতিহাস যে পুনরাবৃত্ত হবে। বর্তমানের বুকে দাঁড়িয়ে আমাদের পিছনে তাকাতে বাধ্য করে ইতিহাস। সেই ইতিহাস, ভারত-পাকিস্তান প্রথম যুদ্ধের ইতিহাসই আমরা ফিরে দেখব এই লেখায়।

সময়টা ১৯৪৭। ব্রিটিশরা ঘোষণা করেই দিয়েছে আর নয়। এবার তারা ভারতের শাসনভার ছেড়ে দিয়ে দেশটিকে স্বাধীন করে দিয়ে যাবে। আপাতভাবে সুখের খবর, কিন্তু তার মধ্যেও জুড়েছিল এক আশঙ্কাও! সেই সময় ভারতে দেশীয় রাজ্য বা স্টেট ছিল ৫৬৫টি। এই ৫৬৫টি করদ রাজ্য তথা ‘প্রিন্সলি স্টেট’ প্রাক-স্বাধীনতা পর্বে ভারতবর্ষের ৪৮ শতাংশ অংশ জুড়ে ছিল। ইংরেজরা যখন ঘোষণা করে তারা ভারত ছেড়ে চলে যাবে, তখন এই প্রদেশগুলির সঙ্গে ব্রিটেনের যে চুক্তি তারও সমাপ্তি ঘোষিত হয়। সুতরাং দেশীয় রাজ্যগুলিকেই বেছে নিতে হত তারা কে পাকিস্তানে চলে যাবে, কে ভারতে থাকবে। এমনকী দুই দেশের কোনওটিরই অন্তর্ভুক্ত না থেকে স্বাধীনও থেকে যাওয়ার সুযোগ ছিল।

Advertisement
Why did terrorists attack at the Pahalgaon resort
পহেলগাঁও হামলায় শোকস্তব্ধ দেশ

কাশ্মীরের রাজা হরি সিং চেয়েছিলেন স্বাধীনই থাকতে। কাশ্মীরের তিন-চতুর্থাংশই মুসলিম, কিন্তু তাঁদের রাজা হিন্দু। আর সেই মহারাজা বম্বের রেসকোর্স, থেকে কাশ্মীরের অরণ্যে শিকার খেলা- মত্ত ছিলেন এসবেই। কেবল সটান জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি স্বাধীনই থাকতে চান। এদিকে ব্যাপারটা মানতে চাইলেন না তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন। তাঁর সঙ্গে হরি সিংয়ের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর। তিনি নিজে গিয়ে আলোচনা করতে চাইলেন কাশ্মীরের রাজার সঙ্গে। বুঝিয়ে বললেন, স্বাধীন থেকে যাওয়ায় ঝুঁকি কতটা থাকছে। প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গেলেও ব্যাপারটা দানা বাঁধেনি। শেষপর্যন্ত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট এসে পড়ল। কাশ্মীর সেই সময় ভারতের অংশ ছিল না! এবং অবশ্যই, পাকিস্তানেরও নয়।

হরি সিংয়ের ছেলে করণ সিং পরে এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ”১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর তত্ত্বগত ভাবে আমার বাবা স্বাধীন রাজা হয়ে উঠেছিলেন। কেননা, তিনি ভারত বা পাকিস্তান কোনও দেশেই যোগ দেননি। তবে তিনি চেয়েছিলেন দুই দেশের সঙ্গেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে। এর জন্য চুক্তিও হওয়ার কথা ছিল।” সেই চুক্তি কিন্তু হয়েছিলও। তবে কেবলমাত্র পাকিস্তানের সঙ্গে। ভারত কোনও চুক্তি করেনি হরি সিংয়ের সঙ্গে।
কিন্তু এর মধ্যেই ঘনিয়ে এল বিপদ। চুক্তি শিকেয় তুলে পাক সেনার মদতে পাশতুন উপজাতি বাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরে আক্রমণ করে বসল। হরি সিং সেই সময় এক উৎসবে ব্যস্ত। এমন যুদ্ধের জন্য কোনওরকম প্রস্তুতিই ছিল না তাঁর।

মহারাজা হরি সিং

সেটা অক্টোবর মাস। এই হামলার নেপত্যে ছিল পাকিস্তানের সেনা। অপারেশনের নাম ছিল ‘অপারেশন গুলমার্গ’। প্ল্যান ছিল এভাবেই কাশ্মীর দখল করে নেওয়া। এমনকী শ্রীনগরও। আর সেই প্ল্যান তৈরি হয়েছিল ২০ আগস্ট অর্থাৎ স্বাধীনতা লাভের পরপরই। এই হামলায় মারা যান হাজার হাজার মানুষ। ধর্ষিত হন বহু নারী। এমনও বলা হয়, এক রাতেই নাকি ৪০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু ঘটে। কার্যতই উপত্যকা হয়ে ওঠে মৃত্যু উপত্যকা। বাধ্যত মাউন্টব্যাটেনের দ্বারস্থ হন হরি সিং। তাঁর প্রস্তাব মেনে ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশনে’ স্বাক্ষর করেন। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অংশ হয়ে যায়। সেটা ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭। অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতার বয়স তখন প্রায় আড়াই মাস। যেহেতু জম্মু ও কাশ্মীর আইনত ভারতের অংশ হয়ে গেল, তাই পাকিস্তানের উচিত ছিল আক্রমণ থেকে সরে এসে সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নেওয়া। কিন্তু পাকিস্তান তা করেনি। ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ প্রতিবেশী হওয়ার কোনও ইচ্ছাই তাদের ছিল না। কেবল ছিল কাশ্মীরকে যেনতেন প্রকারেণ ছিনিয়ে নেওয়ার লোভ।

কাশ্মীরের দিকে এগোচ্ছে পাক কনভয়

এতদিন এই লড়াই লড়ছিল ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর মুসলিম স্টেট ফোর্সেস’। কিন্তু এবার, কাশ্মীর ভারতের অংশ হয়ে যেতেই সেখানকার আক্রান্ত মানুষদের বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারতীয় সেনা। ২৭ অক্টোবর গুরগাঁও থেকে শিখ ব্যাটেলিয়নকে উড়িয়ে আনা হয় শ্রীনগরে। তবে লড়াইটা সহজ ছিল না। ভারতের নিকটতম নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে শ্রীনগরের দূরত্ব ছিল ৪৮০ কিমি। পূর্ব পাঞ্জাব থেকে সেনাকে এখানে আনাটাই ছিল চ্যালেঞ্জের। কেননা শ্রীনগরের বিমানবন্দর তখনও পুরোদস্তুর যাত্রীবোঝাই বিমান অবতরণ করানোর মতো ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু এছাড়া আর উপায়ই ছিল না। শুরু হল মিশন ‘অপারেশন জাক’। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হওয়া সেই যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি। তবে সেদিন যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হলেও আগের বছরই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়। যুদ্ধবিরতির পর নিয়ন্ত্রণরেখা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু জারি থেকে যায় বিতর্ক। পাক অধিকৃত কাশ্মীর আর পুনরুদ্ধার করা যায়নি। যা নিয়ে আজও প্রশ্ন ওঠে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: ১৯৪৭

এদিকে সেবার গোহারা হেরেও পাকিস্তানের শিক্ষা হয়নি। ১৯৬৫, ১৯৭১ এমনকী ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ- সম্মুখ সমরে বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে ইসলামাবাদ। এরপরও উসকানি দিয়ে বারবার জঙ্গি হামলা… পাকিস্তান রয়েছে পাকিস্তানেই। সাম্প্রতিক পহেলগাঁও হামলার নেপথ্যেও পাকিস্তানের উসকানির প্রমাণ মিলেছে। যা থেকে শুরু হয়েছে যুদ্ধের গুঞ্জনও। আর সেই গুঞ্জন ফের নতুন করে মনে করাচ্ছে ইতিহাস। মনে করাচ্ছে দুই দেশের প্রথম যুদ্ধের নেপথ্যেও ছিল সেই কাশ্মীরই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement