সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মন বড় বিচিত্র বস্তু! তেমনই বিচিত্র তার ইচ্ছা! সেই ইচ্ছা পূরণে সামান্য বাধা এলেও তাই রেগে ওঠে মানুষ। তার পর যার ক্ষমতা থাকে, সে অন্যদের একটা কিছু শাস্তি দিতে চায়। যার সেই ক্ষমতা নেই, সে থাকে অভিমানে মুখ লুকিয়ে।
নাহার সিং ভোমিয়ার ব্যাপারটাও তাই! শান্তিপ্রিয়, সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী তিনি। অথচ, ইতিহাস তাঁকে চিনল শত্রু হিসেবেই! শুধু মনে রাখল, তাঁর অভিশাপ আর প্রত্যক্ষ বাধাতেই বিঘ্নিত হয় মানুষের সুখের জীবনযাপন।
কে এই নাহার সিং ভোমিয়া?
তাঁর বৃত্তান্ত জুড়ে রয়েছে জয়পুরের নাহারগড় দুর্গের সঙ্গে। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, তাঁর নামেই দুর্গের এই নামকরণ!
কিন্তু, সেটা বাধ্য হয়ে!
আসলে, মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে লড়াই চালাতে পারে। কিন্তু, প্রেতাত্মার সঙ্গে এঁটে ওঠার ক্ষমতা তার কোথায়! অতএব, পরলোকের কিছু কিছু শর্ত মেনে চলতেই হয় ইহলোককে!
ইতিহাস বলে, জয়পুরের কাছে, দিগন্তবিস্তৃত আরাবল্লী পর্বতের শিখরে এক দুর্গ বানাতে চেয়েছিলেন রাজা দ্বিতীয় সওয়াই জয় সিং। সেটা ১৭৩৪ সাল। ভেবেছিলেন তিনি, দুর্গের নাম দেবেন সুদর্শনগড়। মূলত পাহাড়ের অপরূপ শোভা এবং দুর্গের স্থাপত্যের যে নান্দনিক বিন্যাস তিনি স্থির করেছিলেন, তার জন্যই এই নাম!
কিন্তু, দুর্গের সুদর্শনগড় নামে পরিচিতি পাওয়া আর হয়ে উঠল না! সমস্যা দেখা দিল একেবারে দুর্গ নির্মাণের সময় থেকেই!
জানা যায়, আরাবল্লী পর্বত শিখরের যেখানে দুর্গ নির্মাণের কথা ভেবেছিলেন রাজা দ্বিতীয় সওয়াই জয় সিং, সেখানে বাস করতেন এক সাধু। সন্ন্যাস গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন এক রাজকুমার। ঠিক কী কারণে সংসারে তাঁর বিতৃষ্ণা আসে এবং ঈশ্বর উপাসনায় মগ্ন হন তিনি আরাবল্লী শিখরে, তা আজ আর জানা যায় না।
কিন্তু এটুকু জানা যায়, সুদর্শনগড় তৈরির অনেক আগেই তিনি দেহত্যাগ করেছিলেন। যদিও তাঁর আত্মা থেকে গিয়েছিল সেখানেই। পাহাড়ের যে গুহায় বাস করতেন তিনি, সেখানে!
বলাই বাহুল্য, সুদর্শনগড়ের নির্মাণ তাঁর নিভৃতিতে বাধা দেয়। সারা দিন ধরে হইচই, লোকজনের যাতায়াতে রেগে ওঠেন সাধু নাহার সিং ভোমিয়া।
তার পরেই শুরু হয় এক অলৌকিক কাণ্ড। ভেঙে পড়তে থাকে অর্ধসমাপ্ত দুর্গ। দিনের বেলায় দুর্গের যেটুকু তৈরি করতেন শ্রমিকরা, রাতের বেলায় সেটা ভেঙে রেখে দিতেন নাহার সিং ভোমিয়া!
এ ভাবেই চলতে থাকে। কেউ বুঝতে পারে না কী করা যায় এহেন পরিস্থিতিতে।
বিপদ দেখে রাজা দ্বিতীয় সওয়াই জয় সিং শরণ নেন এক তান্ত্রিকের। তত দিনে রাজা তো বটেই, সবাই বুঝতে পেরেছেন- এ মানুষের কাজ নয়!
অবশেষে সেই তান্ত্রিক একটা রফা করেন নাহার সিং ভোমিয়ার সঙ্গে। ঠিক হয়, তাঁর নামে দুর্গের নামকরণ হবে। এছাড়া, তাঁর সম্মান রক্ষার্থে দুর্গের মধ্যে তৈরি করা হবে একটা মন্দির।
নাহার সিং ভোমিয়া সন্তুষ্ট হন এই বন্দোবস্তে। তার পর দ্রুত নির্মিত হয় দুর্গ। চুক্তিমতো নাম রাখা হয় নাহারগড়!
এর পর কেটে গিয়েছে অনেক যুগ। রাজবংশ লোপ পেয়েছে। দুর্গ পড়ে থেকেছে অনাদরে। কালের নিয়মে কিছু অংশ ভেঙেচুরেও গিয়েছে।
একটা সময়ে সিদ্ধান্ত নেন ভারত সরকার, এই নাহারগড়ের সংস্কার করতে হবে। নতুন রূপে সেজে উঠলে তা নতুন মাত্রা যোগ করতে পারবে রাজস্থানের ঐতিহ্যময় পর্যটন শিল্পে।
কিন্তু, সংস্কার করতে গিয়েও বিপদের মুখে পড়তে হয় শ্রমিকদের। সব চেয়ে বেশি বিপদে পড়েন সেই আর্কিটেক্ট যাঁর উদ্যোগে কাজ চলছিল। আচমকাই একদিন মুখে রক্ত তুলে তাঁর মৃত্যু হয়!
প্রশ্ন উঠতেই পারে, আবার কি রেগে গিয়েছিলেন নাহার সিং ভোমিয়া? রেগে গেলে, কেন?
সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শক্ত! হয়তো তিনি চাননি সংস্কারে দুর্গের রূপরেখা বদলে যাক! হয়তো সংস্কারকার্য ফের কোনও ভাবে বাধা দিয়েছিল তাঁর নিভৃতিতে।
কোন কারণে এবারে তিনি ক্ষুণ্ণ হন, কে বলতে পারে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.