BREAKING NEWS

১৩ আশ্বিন  ১৪৩০  রবিবার ১ অক্টোবর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

রামেশ্বরমে চুনাপাথরের ভূখণ্ড কি সত্যিই রামসেতু? আজও মেলেনি উত্তর

Published by: Biswadip Dey |    Posted: June 10, 2023 8:12 pm|    Updated: June 10, 2023 8:19 pm

The myth and mystery behind Ram Setu। Sangbad Pratidin

বিশ্বদীপ দে: রামসেতু (Ram Setu)। অথবা অ্যাডামস ব্রিজ। কিংবা সেতু বাঁধ। কেউ আবার বলেন নল সেতু। রামায়ণের (Ramayana) কাহিনির এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দেখা মেলে এই সেতুর। যে সেতু পেরিয়ে রাম-লক্ষ্মণের নেতৃত্বে বানরসেনা লঙ্কায় পৌঁছেছিল। পৌরাণিক এই সেতু নাকি সত্য়িই ভারতে রয়েছে। ভারত মহাসাগরে ভাসমান এই সেতু তামিলনাড়ুর পামবান দ্বীপ (যা পরিচিত রামেশ্বরম দ্বীপ নামেও) ও শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপকে যুক্ত করে। যদিও আজ তা অবস্থান করছে সমুদ্রের তলদেশে। কিন্তু সত্য়ি কি ওই সেতুই রামায়ণে বর্ণিত রামসেতু? নাকি প্রাকৃতিক খেয়ালে তৈরি হওয়া সেতুর আকারের ভূখণ্ড? এই নিয়ে বিবাদ দীর্ঘদিনের।

সীতাকে ফিরিয়ে আনতে লঙ্কায় প্রবেশের লক্ষ্যে এগিয়েই সমুদ্রের অনন্ত বিস্তারের সম্মুখীন হন রামচন্দ্র। সমুদ্র পেরিয়ে যাওয়ার উপায় না পেয়ে তির ছুঁড়তে প্রবৃত্ত হলেন তিনি। পরে সমুদ্রের পরামর্শেই নল শুরু করেন রামসেতু নির্মাণ। সেই সেতু নির্মাণে ক্ষুদ্র কাঠবেড়ালীও অংশ নিয়েছিল। রাজশেখর বসুর ‘বাল্মীকি রামায়ণ সারানুবাদ’ গ্রন্থে সেই বর্ণনা এরকম- ‘নল সেতুরচনা আরম্ভ করলেন।… এই শতযোজন দীর্ঘ দশযোজন বিস্তৃত নলকৃত সেতু অম্বরস্থ ছায়াপথের ন্যায় শোভা পেতে লাগল। দেব, গন্ধর্ব, সিদ্ধ মহর্ষি প্রভৃতি নলের অদ্ভুত কীর্তি দেখবার জন্য আকাশে উঠলেন। সমুদ্রের উপর সীমান্তরেখার ন্যায় শোভমান এই সেতুপথে সহস্র কোটি বানর লাফাতে লাফাতে সগর্জনে পার হতে লাগল।’ পড়তে পড়তে সত্য়িই বিস্ময় জাগে। শিগগিরি মুক্তি পেতে চলা ‘আদিপুরুষ’ ছবির ট্রেলারেও সেই দৃশ্য দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন অনেকে।

Ram-Setu-1
অক্ষয় কুমারের ‘রামসেতু’

আরও পড়ুন: ৩ শিশু সন্তান-সহ স্ত্রী ও শ্যালিকাকে কুপিয়ে খুন, কর্ণাটক হাই কোর্টে মৃত্যুদণ্ড যুবকের]

কিন্তু এ তো মহাকাব্যের দৃশ্য। রামনাম লেখা পাথর সাজিয়ে তৈরি পৌরাণিক সেই সেতুই কি ভারত মহাসাগরের তলদেশে থাকা চুনাপাথরের সেতুটি? যা জুড়ে দিয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে (রামায়ণে সেটাই রাবণের লঙ্কা) এই নিয়ে দ্বন্দ্ব বহুদিনের। কিন্তু বিজেপি শাসিত ভারতে সেই বিবাদ নতুন মাত্রা পেয়েছে। হালফিলে অক্ষয় কুমার তো ‘রামসেতু’ নামে ছবিই বানিয়ে ফেলেছিলেন। সেই ছবিতে গল্পের গরু গাছে ওঠা নিয়ে যতই কথা হোক, রামসেতু বিতর্ক যে এরপর নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছিল তা বলাই যায়।

গত বছরের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান এবং মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ অবশ্য পরিষ্কারই বলেছিলেন, রামসেতু সম্পর্কিত ‘পরোক্ষ’ প্রমাণ মিললেও ওই সেতুই যে রামায়ণে বর্ণিত সেতু, তা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। অবশ্য তিনি ‘প্রত্যক্ষ’ প্রমাণের কথাও বলেছিলেন। রেডিও কার্বন পরীক্ষা বলছে, ওই ভূখণ্ডের বয়স ৭ হাজার থেকে ১৮ হাজার বছরের মধ্যে। রামায়ণের সময়কাল ধরা হয় মোটামুটি ৫ হাজার বছর আগে। সেই হিসেবে এই দুই সময়কাল মিলে যেতেই পারে। কিন্তু এসবই দূরবর্তী হিসেব, এই সেতু যে মানুষের তৈরি তেমন স্পষ্ট প্রমাণ কিন্তু এখনও মেলেনি। তাই পুরাণ ও ইতিহাসের মেলবন্ধন ঘটেনি আজও।

[আরও পড়ুন: হরিয়ানায় জোট ভাঙছে বিজেপির? শরিকি অশান্তিতে মহারাষ্ট্রেও চাপে গেরুয়া শিবির]

বলা হয়, পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত নাকি এই সেতু পায়ে হেঁটেই পার করা যেত। পরবর্তী সময়ে উনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সরকার পরিকল্পনা করে বড় বড় জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি করতে পক প্রণালীর এই অংশে ড্রেজিং শুরু করার। পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের মধ্যে কম সময়ে জাহাজ চলাচলের জন্যই ওই পরিকল্পনা। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে ফের মাথাচাড়া দেয় সেই প্ল্যান। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘সেতুসমুদ্রম’। কিন্তু আজও তা করে ওঠা যায়নি।

ইউপিএ সরকারের আমলে এই প্রকল্পে বাধা দিয়েছিল পদ্ম শিবির। বিজেপির দাবি ছিল, এভাবে ড্রেজিং করতে গিয়ে রামসেতুর ক্ষতি করা যাবে না। বিষয়টা গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু জট কাটেনি। ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে স্বাভাবিক ভাবেই আর কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল দাবি করেন, প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তি কতটা উন্নত ছিল তার উল্লেখযোগ্য নিদর্শন রামসেতু। এমন দাবি বিজেপি নেতারা বারবারই করেছেন।

রহস্যে ঢাকা রামসেতু

বছর কয়েক আগেই রামসেতুর বয়স নির্মাণ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয় মোদি সরকারের উৎসাহে। ফলাফলের কথা আগেই বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র দাবিও করেছেন, একটা নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা মেনেই ওই অংশের চুনাপাথরের কাঠামোটি রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা যে একটা সেতু, এমনটা বলা কঠিন, সেই ইঙ্গিতও তাঁর কথাতেই রয়েছে।

এমনই নানা দ্বন্দ্ব জড়িয়ে রেখেছে রামসেতুকে। সত্য়িই এই চুনাপাথরের কাঠামো একটা প্রাকৃতিক খেয়াল? নাকি তা সুদূর অতীতের বুকে রামচন্দ্র ও তাঁর বানরসেনার কীর্তি? উত্তর মেলে নাই। তবু সেই কুয়াশামাখা প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ আজও চলছে। কোনও একদিন তা মিলে যাবে হয়তো। আপাতত সমুদ্রের গভীরে থাকা বিস্ময়কে ঘিরে নিত্যনতুন দাবির ঢেউ। রামেশ্বরম ও মান্নার দ্বীপকে জুড়ে থাকা ভূখণ্ড কি জুড়ে দেবে ইতিহাস ও পুরাণকে? সেই সেতুর শরীর আজও কেবল ধোঁয়ায় ঢাকা।

Ramayana
রামায়ণ মিশে রয়েছে সংস্কৃতিতে

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে