অভিরূপ দাস: সরকারি হাসপাতালের জানলা দিয়ে মারন ঝাঁপ। মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে ছুটল রক্ত। ছুটির রবিবারে ভয়ঙ্কর এই কাণ্ড দেখে থ হয়ে গেলেন রোগীর পরিবারের আত্মীয়রা। এদিন দুপুর তিনটে নাগাদ আরজিকর হাসপাতালের পাঁচতলার জানলা দিয়ে লাফ দিলেন পিঙ্কি মজুমদার নামে এক মহিলা। গুরুতর আহত পিঙ্কি আরজিকর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। ঘটনায় প্রশ্নের মুখে হাসপাতালের নিরাপত্তা। কেন লাফ দিলেন পিঙ্কি? মুখে কুলুপ এঁটেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করব না। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।” তবে শোনা যাচ্ছে, ইনজেকশন নেওয়ার ভয়েই এই কাজ করেছেন তিনি। আর এখানেই দানা বাঁধছে সন্দেহ। কেবলমাত্র ইনজেকশনের ভয়ে এমন কাজ কেউ করতে পারে? উঠছে প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, পিঙ্কি মজুমদারের (৩০) বাড়ি হাবড়াতে। কয়েকদিন আগে আরজিকরের মহিলা বিভাগে ভর্তি হন সন্তানসম্ভবা পিঙ্কি। শুক্রবার একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন তিনি। সন্তান প্রসবের পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। রবিবারই সকালে আইসিইউ থেকে বের করে আনা হয় মহিলা বিভাগে। তার পাশের বেডে থাকা অন্য এক রোগী জানিয়েছেন, রবিবার দুপুর তিনটে নাগাদ নার্স তাঁকে ইনজেকশন দিতে এসেছিল। তাই দেখেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়েন পিঙ্কি। নার্স তাঁকে ছুটে গিয়ে ধরতে যান। সে সময়টুকুও দেননি রোগী। মুহূর্তে জানলা দিয়ে লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। জানলায় কোনও শিক ছিল না। আচমকা এই এই ঘটনায় চমকে যান নিচে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য রোগীর পরিবারের আত্মীয়রা। তাঁরা জানিয়েছেন, “উপর থেকে এক মহিলাকে নিচে পড়তে দেখে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।” মাটিতে পড়ে উঠে পালাতে যান ওই মহিলা, কিন্তু মাথায় হাতের আঘাত গুরুতর থাকায় দৌড়ে পালাতে পারেননি তিনি। হাসপাতালের নিরপত্তা কর্মীরা তাঁকে ধরে ফেলেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, গুরুতর আহত ওই মহিলার অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁর মাথার চোট গুরুতর।
ওই মহিলা কী পালাতে চাইছিলেন? নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন? তাই নিয়েই শুরু হয়েছে ধন্দ। হাসপাতালের একটি সূত্রের খবর, ইনজেকশনের ভয়ের কারনেই জানলা দিয়ে লাফ দিয়েছে ওই মহিলা। যদিও মেয়েটির পরিবারের লোক এমন কথা মানতে নারাজ। এটি পিঙ্কির দ্বিতীয় সন্তান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসকের দাবি, এর আগেও একাধিকবার তাঁকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। ইনজেকশনের ভয়ে তিনি লাফ দিয়েছেন এমন যুক্তি তাই ধোপে টেকে না। ঘটনার পর খবর দেওয়া হয়েছে টালা থানায়। আদৌ ওই মহিলার মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ওই মহিলার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাবড়ার ওই মহিলা প্রথমে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেখান থেকে আরজিকরে নিয়ে আসা হয়। এদিন সকালেই তাকে আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে দেওয়া হয়েছিল। গত পরশুদিন একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেছিলেন তিনি। তারপরেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিবারের লোকেদের আক্ষেপ, বাড়িতে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে বাচ্চাটি। মায়ের কিছু হয়ে গেলে বাচ্চাটিকে কে দেখভাল করবে তাই নিয়েই চিন্তিত তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.