ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: শেষ সত্তর দিনে খোঁজ মিলেছে দশ জন জাল ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞর। চিকিৎসকরা বলছেন এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। অলিগলিতে, শহরে, মফস্বলে ফাঁদ পেতেছেন অসংখ্য জাল ডার্মাটোলজিস্ট। মসৃণ টাকে খেলবে কুচকুচে কালো কেশ। কিম্বা মুখের মেচেতার দাগ তিনদিনে উধাও হবে। এমনই বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলুব্ধ করছেন তাঁরা। যাঁদের আদৌ কোনও ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞর ডিগ্রি-ডিপ্লোমা নেই। এমবিবিএসই পাস করেননি!
অতি সম্প্রতি টাকে চুল গজাতে গিয়ে মারা গিয়েছেন মনোরঞ্জন পাসওয়ান। রাজগির থানার পুলিশ কনস্টেবলের হাল হতে পারে এই শহরের অনেকেরই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকে চুল গজাতে গেলে যে অস্ত্রোপচার করতে হয় তার ন্যূনতম ধারণা নেই জাল ডাক্তারদের। প্রতারকদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ডার্মাটোলজিস্ট, ভেনইরিওলজিস্ট, লেপ্রোলজিস্ট অথবা আইএডিভিএলের সদস্যরা। জাল ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়ে ক্ষুব্ধ সংগঠনের সভাপতি ডা. সুদীপ দাস, সম্পাদক ডা. কিংশুক চট্টোপাধ্যায়, সর্বভারতীয় চেয়ারপার্সন ডা. কৌশিক লাহিড়ী।
ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে তাঁদের সম্মিলিত অভিযোগ, “শহর থেকে মফস্বলে অলিতে গলিতে বিজ্ঞাপন, অমুক চিকিৎসকের অধীনে গ্যারান্টি সহকারে কালো থেকে ফরসা করা হয়। টাকে চুল গজানো হবে সাতদিনে। অথচ ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিস অ্যাক্ট ১৯৫৪ অনুযায়ী, চিকিৎসকরা কোনওরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারেন না।” তবে এমন বিজ্ঞাপন চলছে কী করে?
আসলে ত্বকের সমস্যা মেটাতে লেজার, বোটক্স ট্রিটমেন্ট যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। ঘোলা জলে টাকা কামাতেই ময়দানে নেমেছেন ভুয়ো চিকিৎসকরা। কিন্তু ডিগ্রি না থাকায় চিকিৎসার জটিলতা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। লেজার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় চুল চিরকালের জন্য মুছে ফেলা সম্ভব। সাধারণত মেয়েরা নাকের নিচের অংশের অবাঞ্ছিত লোম মুছে ফেলতে এর সাহায্য নেন। ডা. সুদীপ দাস জানিয়েছেন, ভুল লেজার ট্রিটমেন্ট করে ত্বক পুড়িয়ে দিচ্ছেন জাল ডাক্তাররা।
ত্বকের বটুলিনাম টক্সিন সংক্ষেপে বোটক্স ট্রিটমেন্ট অত্যন্ত জনপ্রিয়। এতে কমানো যায় মুখের ভাঁজ। স্নায়ুর কিছু রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করে দিতে সক্ষম বোটক্স ইঞ্জেকশন। ফলে চোখের চারপাশে কিংবা কপালে ভাঁজ পড়ে না আর। ডা. সুদীপ দাস জানিয়েছেন, এই চিকিৎসা উপযুক্ত ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞর অধীনে করা উচিত। নয়তো চিরকালের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে মুখের একদিক। ফরসা করার জন্য স্টেরয়েড দিচ্ছেন জাল ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞরা। মাত্রাছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহারের ফলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। সারা মুখে লালচে দাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল সূত্রে খবর, জাল ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞদের ধরতে সিআইডির সাহায্য নেওয়ার কথা ভেবেছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.